মুম্বই, 23 নভেম্বর: পরিচালক সুজিত সরকার যখনই পর্দায় নতুন কিছু আনেন তা ম্যাজিক তৈরি করে ৷ তাঁর বলা গল্পে অনুভূতিরা যেন লুকোচুরি খেলে ৷ 'পিকু' বা 'অক্টোবর'-এর মতো ছবি একবার যাঁরা দেখবেন তাঁরা পরিচালকের গুণে মুগ্ধ হতে বাধ্য ৷ এবারও তেমন এক ব্যতিক্রমী অথচ চেনা গল্প নিয়ে পর্দায় হাজির সুজিত ৷
মুক্তি পেয়েছে 'আই ওয়ান্ট টু টক' ৷ বাবা-মেয়ের সম্পর্ক, টানাপোড়েন, মন ভালো করা আবার ভারাক্রান্ত করা এক জার্নি তুলে ধরা হয়েছে ৷ মূলত, পরিচালকের ভীষণ কাছের বন্ধু অর্জুন সেনের স্মৃতিচারণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ছবি তৈরি করেছেন সুজিত ৷ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে দেখা গিয়েছে অভিষেক বচ্চনকে ৷ জুনিয়র বচ্চন-সুজিতের মিলিত প্রয়াস উপহার দিয়েছে আরও এক মন ছুঁয়ে যাওয়া সিনেমা ৷ ছবির জার্নি নিয়ে ইটিভি ভারতের সীমা সিনহার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ আড্ডায় পরিচালক সুজিত সিরকার ৷
অর্জুন সেনের চরিত্রে কেন বাছলেন অভিষেক বচ্চনকে?
এই ছবিতে অভিষেককে কাস্ট করা নিয়ে পরিচালক জানিয়েছেন, চিত্রনাট্য শোনার পর জুনিয়র বচ্চন যেভাবে চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলেন তা গুরুত্বপূর্ণ ৷ সুজিত বলেন, "অভিষেক এক মেয়ের বাবা ৷ ফ্যামিলি ম্যানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তাঁর ধারণা রয়েছে ৷ ফলে আমার চোখে অভিষেক এই চরিত্রের জন্য পারফেক্ট ছিল ৷" পাশাপাশি পরিচালক জানিয়েছেন, অভিষেক আগে আমেরিকায় থাকত ৷ ফলে বন্ধু অর্জুন সেনের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে এই ব্যাকগ্রাউন্ড কাজে এসেছে ৷ কারণ অর্জুনও একজন এনআরআই ছিলেন হিউস্টনে ৷
সিরকার আরও বলেন, "যখন এই ছবির চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছিল তখন থেকেই অভিষেকের নাম মাথায় ছিল ৷ একটা চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য অভিষেকের খুব বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না ৷ আমি ওকে বলেছি জোড়ে শ্বাস নাও-শ্বাস ছাড়ো ৷ তারপর স্বাভাবিকভাবেই তাঁর অভিনয় বেরিয়ে এসেছে ৷"
এই ছবির জন্য পরিচালকের প্রথম পছন্দ কে ছিলেন?
এই বিষয় স্পষ্ট করেছেন সুজিত ৷ তিনি জানিয়েছেন, শুরুর দিকে এই চরিত্রটার জন্য তাঁর মনে এসেছিল প্রয়াত ইরফান খানের নাম ৷ পরিচালক বলেন, "স্ক্রিপ্ট লেখার সময় প্রায়শই আমার মনে ইরফানের কথা মাথায় এসেছে ৷ আর আমি সেটা বলেওছি অভিষেককে যে তুমি ইরফানের জুতোয় পা গলিয়েছো ৷ অবশ্যই, আমি অভিষেকের উপর কোনও চাপ দিইনি ৷" পিকু ছবিতে ইরফানের সঙ্গে কাজ করেছিলেন সুজিত ৷ ফলে তাঁদের বন্ধুত্ব যে ভীষণ গাঢ় ছিল তা বোঝা যায় ৷ সিরকার বলেন, "আমি যখন ছবিটা তৈরি করছিলাম তখনও মনে ভেসে উঠেছিল ইরফানের মুখ ৷ যেন মনে হচ্ছিল, ওঁ আমাকে এই ছবি তৈরি করায় পথ দেখাচ্ছে ৷"
অভিষেক-ঐশ্বর্যর বিচ্ছেদ গুঞ্জন নিয়ে কি বললেন পরিচালক?
বেশ কিছুদিন ধরেই অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বর্য রাইয়ের দাম্পত্য জীবন নিয়ে নানা কথা ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ অভি-অ্যাশের বিচ্ছেদ গুঞ্জন অস্বীকার করেছেন সুজিত ৷ তিনি বলেন, "গুজব সবসময় গুজবই হয় ৷ তবে তার প্রভাব শুটিং সেটে বা কাজের মধ্যে কখনও পরেনি ৷" সুজিত আরও বলেন, "অভিষেক তাঁর স্ত্রী ও মেয়েক ভীষণ ভালোবাসে ৷" সিরকার জানিয়েছেন, মিডিয়ায় চলতে থাকা রটনা নিয়ে কাজের মধ্যে কোনও রকম সমস্যা হয়নি ৷
বলিউডের সিক্যুয়েল ট্রেন্ড
বলিউডে সিক্যুয়েল ছবি বা ফ্রাঞ্চাইজির লম্বা লাইন রয়েছে ৷ তবে সেই সবের ধারকাছ দিয়েও যেতে চান না পরিচালক ৷ তিনি বলেন, "অনেকেই আমাকে বারবার প্রশ্ন করেছে কেন আমি পিকু বা ভিকি ডোনার-এর মতো ছবির সিক্যুয়েল বানাচ্ছি না ৷ আমার স্পষ্ট উত্তর যে আমি সিক্যুয়েল বানাব না ৷ আমি একবার যে গল্প বলে দিয়েছি পুনরায় সেই দিকে আর তাকাব না ৷ আমি নিজেকে রিপিট করতে চাই না ৷ আমি প্রতিটা ছবি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বানিয়েছি ৷ আমি পুরনোর দিকে না তাকিয়ে ফ্রেশ-নতুন কিছুর দিকে ফোকাস করতে চাইব ৷" পরিচালক জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি এমন এক চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করছেন যেখানো রোমান্স, মাইথোলজি ও পিরিয়ড ড্রামা রয়েছে ৷
যেখানে বড় বড় বাজেটের সিনেমাও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাচ্ছে সেখানে সুজিত সিরকার তাঁর ছবির মুক্তি প্রেক্ষাহৃহে করেছেন ৷ 2018 সালে সুজিতের শেষ ছবি অক্টোবর মুক্তি পায় ৷ প্রেক্ষাগৃহে ছবির মুক্তি প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, "বড়পর্দায় আই ওয়ান্ট টু টক-এর মুক্তি নিয়ে আমি নার্ভাস হয়ে যাইনি ৷ আমি গুলাবো সিতাবো ও সর্দার উধাম-ও বড়পর্দায় দেখতে চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটা সঠিক সময় ছিল না ৷ দর্শকদের এই ছবি ভালো লাগবে এবং দর্শক হলমুখী হবে, এই বিষয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে ৷"