হায়দরাবাদ, 27 জুলাই: কখনও তিনি 'লাল্টু দত্ত' আবার কখনও 'আরজে অর্জুন মল্লিক' ৷ পর্দায় যখনই এসেছেন অভিনেতা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দাগ কেটেছেন দর্শকের মনে ৷ আবার পরিচালকের মাপকাঠিতে তিনি আরও উপরে ৷ 2011 সালে 'ইচ্ছে' ছবির হাত ধরে নন্দিতা রায়ের পাশাপাশি তিনি বসেছেন পরিচালকের আসনে ৷ তাঁর ফিল্মি কেরিয়ারে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে ইটিভি নেটওয়ার্ক তথা তৎকালীন ইটিভি বাংলা ৷ অভিনেতা শিবপ্রসাদ জানিয়েছেন, যদি তিনি ইটিভি বাংলায় চাকরি না করতেন, তাহলে হয়তো তাঁর পরিচালক হয়ে ওঠা হত না ৷
তিনি বলেন," আমার অভিনয় জীবনের শুরু 1994 সালে রাজা দাশগুপ্ত পরিচালিত একুশে পা সিরিয়ালের মধ্য দিয়ে ৷ 2024 সালে দাঁড়িয়ে পরিচালক নন্দিতা রায় বহুরূপী সিনেমায় বিক্রম প্রামাণিকের মতো চরিত্র করার সুযোগ দিয়েছেন ৷ এটা একটা অন্য বৃত্ত ৷ তার মধ্যে ইটিভি বাংলা একমাত্র জায়গা যেখানে একবারই আমি জীবনে চাকরি করেছি ৷ ইটিভি বাংলা আমার কাছে ফিল্ম ইন্সটিটিউটের মতো ৷"
শিবপ্রসাদ আরও বলেন, "অভিনয়ের যা কিছু শেখা সেটা আমার স্কুল, মা, নান্দীকার, থিয়েটার গ্রুপ থেকে শেখা ৷ অভিনয়ের গুরু রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, গৌতম হালদার, দেবশঙ্কর হালদার, ঈশিতা মুখোপাধ্যায় এনারা প্রত্যেকেই কোনও না কোনওভাবে আমাকে অভিনয় শিখিয়েছেন ৷ কিন্তু ইটিভি বাংলায় আমি সিনেমা পরিচালনা শিখেছি ৷ কীভাবে ক্যামেরা ব্যবহার করতে হয়, এডিটিং কীভাবে করতে হয়, প্রোডাকশন কীভাবে সামলাতে হয় তা ডানা মেলে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে ইটিভি বাংলা ৷ "
তিনি আরও বলেন, "আমি অনেকগুলো প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম ৷ তারমধ্যে ছিল এবং ঋতুপর্ণ, শ্রীমতি, জবাব চাই জবাব দাও, সাফ কথা-র মতো অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম ৷ এই রকম 19টা প্রোগ্রাম আমি দেখতাম ৷ সেগুলোর কনসেপ্ট তৈরি করা, ডিজাইন করা, সেই সব কিছুর দায়িত্ব ছিল আমার ৷ এই সব কিছু করার সুযোগ ইটিভি বাংলা না দিলে পরিচালক শিবপ্রসাদকে আমি আমার জীবনে খুঁজে পেতাম না ৷ তাই পরিচালক হিসাবে ইটিভি বাংলার কাছে ঋণী আমি ৷ কারণ ইটিভি বাংলার কাছ থেকে পরিচালনা করার অবাধ সুযোগ না পেলে হয়তো আজকে এই সাহসটা পেতাম না ৷ প্রোডাকশন করার যে অভিজ্ঞতা সেটা পুরোপুরি ইটিভি বাংলার কাছ থেকে পাওয়া ৷ "
একদিকে অভিনয় অন্যদিকে পরিচালনা আবার পরিবারকে সময় দেওয়া, পুরো বিষয়টা ম্যানেজ কীভাবে করছেন পরিচালক? উত্তরে শিবপ্রসাদ বলেন, "সংসার তো করতেই হবে ৷ আমি একদিকে ছেলে, একদিকে স্বামী, সেইদিক থেকে দায়িত্ব পূরণ করার চেষ্টা করেছি ৷ কতটা পেরেছি জানি না ৷ আর অভিনেতা হিসাবে লম্বা জীবন হলেও সিনেমা খুব কম করেছি ৷ তা নিয়ে জীবনে কোনও আক্ষেপ নেই ৷ পরিচালক নন্দিতা রায় ও উইন্ডোজ প্রযোজনা সংস্থা কণ্ঠ-র মতো সিনেমাতে সুযোগ দিয়েছেন ৷ হ্যাপি সিং-য়ের মতো চরিত্র মুক্তধারা-তে করার সুযোগ পেয়েছি ৷ লাল্টু দত্ত, লাল্টু বিশ্বাস চরিত্র করার সুযোগ পেয়েছি অবশেষে বহুরূপী ছবিতে বিক্রমের চরিত্র করতে পারছি, এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি ৷ "
নন্দিতা রায় ছাড়া আরও কোনও পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে অভিনেতার? উত্তরে শিবপ্রসাদ বলেন, "না, আমি নন্দিতা রায়ের সঙ্গেই বারবার কাজ করতে চাইব ৷ আমার জীবনে কোনও খেদ নেই ৷ কণ্ঠ বা বহুরূপী-তে আমাকে যে চরিত্র দেওয়া হয়েছে তা আর কেউ দিতে পারতেন না ৷ আমি বহুরূপী-তে বিক্রম প্রামাণিকের চরিত্র জীবনে পাব না৷ এই সুযোগটা যে পেয়েছি, এটাই তো বিরাট বড় ৷"
প্রসঙ্গত, প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজের তরফে শনিবার সামনে আনা হয় অভিনেতা শিবপ্রসাদের প্রথম ঝলক ৷ শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় শেয়ার করেছেন সেই পোস্টার ৷ ক্যাপশনে লিখেছেন, "একুশে পা" থেকে তিরিশে পা। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে 30 বছর পূর্ণ করলাম । অভিনেতা হিসেবে প্রথমবার পুজোতে আমার সিনেমা 'বহুরূপী' মুক্তি পাবে। এর আনন্দ, শিহরণ সবটাই আলাদা । ধন্যবাদ পরিচালক নন্দিতা রায় কে, উইন্ডোজ প্রোডাকশন কে এবং 'বহুরূপী' সিনেমার সব কলাকুশলীকে । আমার সিনেমা অভিনয়ের তালিকা দীর্ঘ নয়। কিন্তু যেটুকু কাজ করেছি দর্শকদের আশীর্বাদ পেয়েছি। তাই আশা করব এবারও আপনাদের মন ভরাতে পারব।"