ETV Bharat / entertainment

রামোজি রাওয়ের স্বপ্ন পূরণের কারিগর, পুরনো স্মৃতি হাতড়ালেন নীতিশ রায় - NITISH ROY

"রামোজি রাও গারু (জি)। ভীষণ আপ্যায়ন করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, "আমি একটা দুর্দান্ত ফিল্ম সিটি বানানোর চেষ্টা করছি। সঙ্গ দেবেন?" স্মৃতি রোমন্থনে পরিচালক নীতিশ রায়

Etv Bharat
রামোজি রাওয়ের স্মৃতি রোমন্থনে নীতিশ রায় (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Entertainment Team

Published : 14 hours ago

কলকাতা, 28 ডিসেম্বর: আকাদেমি অফ ফাইন আর্টস-এর সাউথ গ্যালারিতে চলছে ডিজিটাল পেইন্টিং এক্সিবিশন। যেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে প্রখ্যাত আর্ট ডিরেক্টর তথা চলচ্চিত্র পরিচালক নীতিশ রায়ের ডিজিটাল পেইন্টিংস। তাঁর ছবিগুলিতে উঠে এসেছে দেশের এই সময়ের প্রতিচ্ছবি। আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে ভারতীয় সিনেমার দুনিয়ায় তাঁর খ্যাতি শীর্ষে। 'অস্কার' জয়ী হলিউড ব্লকবাস্টার 'গ্ল্যাডিয়েটর'-এ তাঁর প্রোডাকশন ডিজাইন এবং আর্ট ডিরেকশন আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয় ছবিটিকে।

আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে প্রথম কাজ মৃণাল সেনের 'খারিজ' ছবিতে। এরপর একাধিক হিন্দি এবং বাংলা ছবির আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। প্রডাকশন ডিজাইন থেকে কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করেছেন নীতিশ রায়। পরিচালনা করেছেন 'জামাই নম্বর ওয়ান', 'বুদ্ধুভুতুম', 'গোঁসাইবাগানের ভূত', 'এক পশলা বৃষ্টি', 'তবু মনে রেখো', 'জলে জঙ্গলে'র মতো সব ছবি।

মুখোমুখি নীতিশ রায় (ইটিভি ভারত)

এহেন নীতিশ রায় 2000 একর বিস্তৃত রামোজি ফিল্ম সিটিরও সৃষ্টিকর্তা। তাঁর হাতের নিপুণ ছোঁয়াতেই রামোজি ফিল্ম সিটি বিশ্বের বৃহত্তম ফিল্ম সিটির আখ্যা পেয়েছে। রামোজি রাওয়ের অনুরোধে নীতিশ রায় টানা সাত বছর ধরে তৈরি করেছিলেন এই রামোজি ফিল্ম সিটি। ইটিভি ভারতের সঙ্গে আড্ডায় উঠে এল সেই সব দিনের কথাও ৷

রামোজি ফিল্ম সিটির প্রতিষ্ঠাতা রামোজি রাওয়ের প্রসঙ্গ তুললে পুরনো দিনে পাড়ি দেন শিল্পী। তিনি বলেন, "আমার যে কোনও কথা শুনলেই মনে হয় এটা তো রামোজি রাও গারু (জি) বলতেন। আমি ওঁর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিলাম। স্নেহ করতেন আমাকে। আমি সেদিন হায়দরাবাদের একটি স্টুডিয়োতে কাজ করছিলাম। আমাকে ডেকে পাঠান রামোজি রাও গারু (জি)। ভীষণ আপ্যায়ণ করেন। পাশাপাশি বলেন, আমি একটা দুর্দান্ত ফিল্ম সিটি বানানোর চেষ্টা করছি। সঙ্গ দেবেন? আমি রাজি হই। টানা সাত বছর লেগেছিল রামোজি ফিল্ম সিটি তৈরি করতে। তখন আমি মুম্বইয়ের জনপ্রিয় আর্ট ডিরেক্টর। সেই সব কাজ আমি ছেড়ে দিয়ে শুধু ফিল্ম সিটি বানাতে মন দিয়েছিলাম। যখন যা কাজের জন্য লাগত চাইলেই দিতেন। কোনও প্রশ্ন করতেন না। এমন একজন মানুষ আমি দেখিনি কখনও। সব কাজ আমরা আলোচনা করে করতাম। উনি আমার কথা শুনতেন এবং গুরুত্ব দিতেন।"

তিনি আরও বলেন, "আমিই বলেছিলাম একটা বাংলা চ্যানেল করতে। যেখানে অনেক গুণী ছেলেমেয়ে কাজ করতে পারবে। উনি রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। প্রথমে ইটিভি বাংলার নাম দিয়েছিলেন 'গীতাঞ্জলি'। আমিই ইটিভি বাংলা রাখতে বলি নাম। কারণ তখন ইটিভি তেলুগু চ্যানেল চলত টিভিতে। উনি 'গীতাঞ্জলি' নাম পাল্টে 'ইটিভি বাংলা' রাখেন।"

এগজিবিশন প্রসঙ্গে নীতিশ রায় বলেন,

"আমি গত বছর থেকে ডিজিটাল পেইন্টিং শুরু করেছি। আমার ছেলে ডিজিটাল পেইন্টিংস-এর সব যন্ত্রপাতি এনে দিয়েছে। শিখে নিয়ে শুরু করলাম। দেখলাম যে যাঁরা এই পেইন্টিং করছে তাঁরা কাটিং, পেস্টিং-এ ফোকাস করছে। খুব কম লোক অর্থডক্স পেইন্টিং-কে ডিজিটালে কনভার্ট করছে। আমি সেই দিকেই ঝুঁকেছি। এই এগজিবিশনে আমি চারপাশে যা ঘটছে সেদিকে ফোকাস করেছি। এই সময়ে দেশে যে টালমাটাল অবস্থা তা তুলে না ধরলে চলবে? আমি চেষ্টা করেছি তুলে ধরার। সময়ের কথা তুলে ধরতে হবে শিল্পীদের।"

শ্যাম বেনেগালের ছবিতেও আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। শ্যাম বেনেগাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, " শ্যাম বেনেগাল আমার মেন্টর। ওঁর সঙ্গে আমি সিনেমা, ডকুমেন্টরি ফিল্মে বহু কাজ করেছি। অনেককিছু শিখেছি। আমার মাস্টারমশাই বলতে পারেন। মৃণাল সেন আমাকে ছবির জগতের সঙ্গে পরিচয় করান 'খারিজ' সিনেমার মাধ্যমে। উনি না থাকলে বোধহয় আমি সিনেজগতে আসতেই পারতাম না।"

নীতিশ রায় এদিন আগামী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, "ডিজিটাল পেইন্টিংস এখন থেকেই রপ্ত করতে হবে। না হলে পিছিয়ে যেতে হবে। এআই-এর যুগ এসে গিয়েছে। রঙ তুলিই হয়ত উঠে যাবে একদিন। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই চলতে হবে।"
আড্ডায় এই মুহূর্তে বাংলা সিনেমার হাল হকিকত নিয়েও কথা বলেন তিনি। তুলে ধরেন বাংলা ছবিতে ডিস্ট্রিবিউটরের অভাবের কথা। আগামীতে ছোটদের জন্য সিনেমা বানাতে চান নীতিশ রায়।

কলকাতা, 28 ডিসেম্বর: আকাদেমি অফ ফাইন আর্টস-এর সাউথ গ্যালারিতে চলছে ডিজিটাল পেইন্টিং এক্সিবিশন। যেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে প্রখ্যাত আর্ট ডিরেক্টর তথা চলচ্চিত্র পরিচালক নীতিশ রায়ের ডিজিটাল পেইন্টিংস। তাঁর ছবিগুলিতে উঠে এসেছে দেশের এই সময়ের প্রতিচ্ছবি। আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে ভারতীয় সিনেমার দুনিয়ায় তাঁর খ্যাতি শীর্ষে। 'অস্কার' জয়ী হলিউড ব্লকবাস্টার 'গ্ল্যাডিয়েটর'-এ তাঁর প্রোডাকশন ডিজাইন এবং আর্ট ডিরেকশন আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয় ছবিটিকে।

আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে প্রথম কাজ মৃণাল সেনের 'খারিজ' ছবিতে। এরপর একাধিক হিন্দি এবং বাংলা ছবির আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। প্রডাকশন ডিজাইন থেকে কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করেছেন নীতিশ রায়। পরিচালনা করেছেন 'জামাই নম্বর ওয়ান', 'বুদ্ধুভুতুম', 'গোঁসাইবাগানের ভূত', 'এক পশলা বৃষ্টি', 'তবু মনে রেখো', 'জলে জঙ্গলে'র মতো সব ছবি।

মুখোমুখি নীতিশ রায় (ইটিভি ভারত)

এহেন নীতিশ রায় 2000 একর বিস্তৃত রামোজি ফিল্ম সিটিরও সৃষ্টিকর্তা। তাঁর হাতের নিপুণ ছোঁয়াতেই রামোজি ফিল্ম সিটি বিশ্বের বৃহত্তম ফিল্ম সিটির আখ্যা পেয়েছে। রামোজি রাওয়ের অনুরোধে নীতিশ রায় টানা সাত বছর ধরে তৈরি করেছিলেন এই রামোজি ফিল্ম সিটি। ইটিভি ভারতের সঙ্গে আড্ডায় উঠে এল সেই সব দিনের কথাও ৷

রামোজি ফিল্ম সিটির প্রতিষ্ঠাতা রামোজি রাওয়ের প্রসঙ্গ তুললে পুরনো দিনে পাড়ি দেন শিল্পী। তিনি বলেন, "আমার যে কোনও কথা শুনলেই মনে হয় এটা তো রামোজি রাও গারু (জি) বলতেন। আমি ওঁর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিলাম। স্নেহ করতেন আমাকে। আমি সেদিন হায়দরাবাদের একটি স্টুডিয়োতে কাজ করছিলাম। আমাকে ডেকে পাঠান রামোজি রাও গারু (জি)। ভীষণ আপ্যায়ণ করেন। পাশাপাশি বলেন, আমি একটা দুর্দান্ত ফিল্ম সিটি বানানোর চেষ্টা করছি। সঙ্গ দেবেন? আমি রাজি হই। টানা সাত বছর লেগেছিল রামোজি ফিল্ম সিটি তৈরি করতে। তখন আমি মুম্বইয়ের জনপ্রিয় আর্ট ডিরেক্টর। সেই সব কাজ আমি ছেড়ে দিয়ে শুধু ফিল্ম সিটি বানাতে মন দিয়েছিলাম। যখন যা কাজের জন্য লাগত চাইলেই দিতেন। কোনও প্রশ্ন করতেন না। এমন একজন মানুষ আমি দেখিনি কখনও। সব কাজ আমরা আলোচনা করে করতাম। উনি আমার কথা শুনতেন এবং গুরুত্ব দিতেন।"

তিনি আরও বলেন, "আমিই বলেছিলাম একটা বাংলা চ্যানেল করতে। যেখানে অনেক গুণী ছেলেমেয়ে কাজ করতে পারবে। উনি রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। প্রথমে ইটিভি বাংলার নাম দিয়েছিলেন 'গীতাঞ্জলি'। আমিই ইটিভি বাংলা রাখতে বলি নাম। কারণ তখন ইটিভি তেলুগু চ্যানেল চলত টিভিতে। উনি 'গীতাঞ্জলি' নাম পাল্টে 'ইটিভি বাংলা' রাখেন।"

এগজিবিশন প্রসঙ্গে নীতিশ রায় বলেন,

"আমি গত বছর থেকে ডিজিটাল পেইন্টিং শুরু করেছি। আমার ছেলে ডিজিটাল পেইন্টিংস-এর সব যন্ত্রপাতি এনে দিয়েছে। শিখে নিয়ে শুরু করলাম। দেখলাম যে যাঁরা এই পেইন্টিং করছে তাঁরা কাটিং, পেস্টিং-এ ফোকাস করছে। খুব কম লোক অর্থডক্স পেইন্টিং-কে ডিজিটালে কনভার্ট করছে। আমি সেই দিকেই ঝুঁকেছি। এই এগজিবিশনে আমি চারপাশে যা ঘটছে সেদিকে ফোকাস করেছি। এই সময়ে দেশে যে টালমাটাল অবস্থা তা তুলে না ধরলে চলবে? আমি চেষ্টা করেছি তুলে ধরার। সময়ের কথা তুলে ধরতে হবে শিল্পীদের।"

শ্যাম বেনেগালের ছবিতেও আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। শ্যাম বেনেগাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, " শ্যাম বেনেগাল আমার মেন্টর। ওঁর সঙ্গে আমি সিনেমা, ডকুমেন্টরি ফিল্মে বহু কাজ করেছি। অনেককিছু শিখেছি। আমার মাস্টারমশাই বলতে পারেন। মৃণাল সেন আমাকে ছবির জগতের সঙ্গে পরিচয় করান 'খারিজ' সিনেমার মাধ্যমে। উনি না থাকলে বোধহয় আমি সিনেজগতে আসতেই পারতাম না।"

নীতিশ রায় এদিন আগামী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, "ডিজিটাল পেইন্টিংস এখন থেকেই রপ্ত করতে হবে। না হলে পিছিয়ে যেতে হবে। এআই-এর যুগ এসে গিয়েছে। রঙ তুলিই হয়ত উঠে যাবে একদিন। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই চলতে হবে।"
আড্ডায় এই মুহূর্তে বাংলা সিনেমার হাল হকিকত নিয়েও কথা বলেন তিনি। তুলে ধরেন বাংলা ছবিতে ডিস্ট্রিবিউটরের অভাবের কথা। আগামীতে ছোটদের জন্য সিনেমা বানাতে চান নীতিশ রায়।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.