হায়দরাবাদ, 21 সেপ্টেম্বর: প্রতিবাদের ভাষা যেমনই হোক না কেন মুখরোচক কোনও খবর দ্রুত ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায় ৷ অনেক সময় খবরের গভীরে না গিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহের মতো বেশ কিছু নেটিজেন স্রোতে গা ভাসিয়ে দেন ৷ আর এই বিষয়টাই সমাজের জন্য ভালো নয় বলে মনে করছেন নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় ৷ নেটপাড়ায় লন্ডনে শিল্পীর নাচের অনুষ্ঠান বাতিলের একটি মেলের ছবি ভাইরাল হয়েছে ৷ বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটির সেই মেল দেখে অনেকে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেছেন ৷ আরজি কর আবহে উদাহরণ তৈরি হচ্ছে, এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে ৷ এই বিষয়ে ইটিভি ভারতের তরফে যোগাযোগ করা হয় শিল্পী ডোনার সঙ্গে ৷
তিনি বলেন, "বেঙ্গলি কালচারাল সোসাইটি সেলিব্রেট করতে চায়নি ৷ আমরাও বিষয়টাতে সম্মতি জানিয়েছি ৷ মিউচুয়ালি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ যাঁরা উৎসব করতে চান তাঁরা করছেন ৷ যাঁরা চাইছেন না তাঁরা করছেন না ৷ দীক্ষামঞ্জরীর তরফে রবীন্দ্র সদনেও একটা প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছে ৷ তা নৃত্যের মাধ্যমে পরিবেশন হবে ৷ মা আসছেন ৷ তাঁর কাছে আমাদের প্রার্থনা তো এটাই দুষ্টের দমন হোক ৷ যারা বাজে কাজ করে তারা যেন শাস্তি পায় ৷ যাতে আমরা পাপ মুক্ত সমাজ পাই ৷ যাতে সমাজে পজিটিভিটি থাকে, নেগেটিভিটি ধুয়ে যায় ৷ সমাজে একে অপরকে সম্মান করাটাও জরুরী ৷ এই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হোক ৷ থ্রেট কালচার যাতে বন্ধ হয়, সবকিছু নিয়ে আমাদেরও প্রতিবাদ রয়েছে ৷"
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠান বাতিল প্রসঙ্গে ডোনা আরও বলেন, " যাঁরা অনুষ্ঠান বাতিল করবেন ভেবেছেন তাঁরা করেছেন, আবার যাঁরা ভাবছেন অনুষ্ঠান করবেন, আমাকে ওনাদের সঙ্গে মিলিত করে দেবীর কাছে প্রার্থনায় সামিল হবেন, তাঁরা অনুষ্ঠান বাতিল করেননি ৷ তাঁদের সঙ্গে আমি আছি ৷ এইভাবেই আমার প্রতিবাদ জানাবো ৷ প্রার্থনা তো একটা সুস্থ, স্বাভাবিক সমাজের ৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় লোকে এখান থেকে মুখরোচক খবর বার করার চেষ্টা করছেন ৷ এখানে কিন্তু মুখরোচক খবর নেই ৷ এটা সিম্পল অ্যান্ড ক্লিন ৷ এই যে লোকেরা যার তার নামে যা খুশি বলছেন, এটা বন্ধ হওয়া উচিত ৷ এটা যদি বন্ধ না হয়, সমাজ কীভাবে উন্নত হবে ? আমরা কী করে পজিটিভ সমাজ পাব?"
এরপর তিনি আরও বলেন, "অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাঁরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ৷ যেমন তাসের দেশ নিয়ে আমরা নৃত্য পরিবেশনের আয়োজন করেছি ৷ দুর্গতিনাশিনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও প্রতিবাদ ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ৷ তবে যাঁরা উৎসব করতে চান না তাঁদেরকে তো জোর করা হচ্ছে না ৷ ফলে এই বিষয়গুলোকে জলঘোলা করার কোনও দরকার পড়ে না ৷ বিষয়টা ভীষণ সোজা ৷ আপনি যদি অঞ্জলি দিতে চান দেবেন, আপনি যদি নতুন জামা পরতে চান পড়বেন ৷ এখন আপনি যদি নতুন জামা না পরতে চান, তাহলে আমি তো জোর করে পরাবো না ৷ আর এই জোর করে কোনও কিছু করা হবেই বা কেন? যার যেটা ইচ্ছে সে সেটা করতে পারবে ৷ এই স্বাধীনতার জন্যই তো এতো প্রতিবাদ, আন্দোলন ৷ এমন একটা সমাজ তৈরি করা যেখানে মাথা উঁচু করে সকলে হাঁটতে পারবে ৷ এটাই তো সকলে চাইছেন ৷"
এদিন কথা প্রসঙ্গে শিল্পী টানেন আরজি কর কাণ্ডের প্রসঙ্গও ৷ তিনি বলেন, "আমরা অবশ্যই আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচার চাই ৷ তবে এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু জড়িয়ে রয়েছে ৷ তাছাড়া সকলের প্রতিবাদের ধরণ সমান হয় না৷ কেউ গান করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, কেউ নাচ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, কেউ ছবি এঁকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ৷ কেউ কবিতা পড়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ৷ তাই প্রতিবাদ করার ধরণ সকলের আলাদা ৷ সেটা নিয়ে কি প্রশ্ন তোলা উচিত?
শিল্পী জানান, উৎসবের সঙ্গে অনেকের রুটি রোজগার জুড়ে থাকে ৷ ফলে যেটা মানুষের বিবেক বলবে সেটা করবে ৷ কেউ যদি ভাবেন আমি ফুচকা খেলে একজনের কিছু আয় হবে তাহলে তিনি ফুচকা খাবেন ৷ আবার কেউ যদি মনে করেন ফুচকা খেলে নিজের আনন্দ প্রকাশ পাবে, বেশি সেলিব্রেশন হয়ে যাবে, বিবেকে বাঁধছে তাহলে তিনি খাবেন না ৷ এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ৷ আর সেটাকে সকলের সম্মান জানানো উচিত ৷