কলকাতা, 3 অক্টোবর: "যেদিন জনগণ বলবে আপনাকে আর ভালো লাগছে না সেদিন মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমা থেকে নেমে যাব। কোনও রাজনৈতিক দলের কথায় চৈতি ঘোষাল নামবে না।" পুজোর উদ্বোধনের তালিকা থেকে বাদ পড়ার নির্দেশিকায় শাসক দলকে তোপ দাগলেন অভিনেত্রী। প্রশ্ন তুললেন, "তা হলে আজকের সব দুর্গাপুজোই রাজনৈতিক পুজো? আমি বলছি না ওনারা বলছেন।"
ঘটনার সূত্রপাত দুদিন আগে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটা পোস্ট থেকে ৷ সেখানে জানানো হয়েছে, "অনেক তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে। সেই সমস্ত পুজো কমিটিগুলোকে অনুরোধ- যাঁরা আমাদের দিদিকে অপমান করেছে, দিদির সরকারকে অন্যায়ভাবে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে সেই সমস্ত মানুষকে নিজেদের পুজোর উদ্বোধনে বা অন্য অনুষ্ঠানে ডাকবেন না । ডাকলে ভাবব সেই সব নেতাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কোনও আবেগ নেই।..."
বাতিলের তালিকায় নাম রয়েছে ঋত্বিক চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার, শোভন গাঙ্গুলি, শ্রীলেখা মিত্র, স্বস্তিকা দত্ত, কিরণ দত্ত (বং গাই), মির্চি অগ্নি, সাহেব চট্টোপাধ্যায়, অমৃতা দত্ত (গায়িকা), ইক্ষিতা চট্টোপাধ্যায় (গায়িক), চৈতি ঘোষাল, পায়েল মজুমদার (গায়িকা), উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায় (ইউটিউবার) এবং দেবলীনা দত্তর।
এই ব্যাপারে ইটিভি ভারত যোগাযোগ করে জনপ্রিয় অভিনেত্রী চৈতি ঘোষালের সঙ্গে। তিনি বলেন, "দুর্গাপুজোটা তো প্রথমে শুরু হয়েছিল পাড়ায় চাঁদা তুলে। এরপর বিভিন্ন ক্লাব অনেকে মিলে শুরু করে। তালিকাটা বের করাতে একটা জিনিস খুব পরিষ্কার হয়েছে যে, তার মানে সব দুর্গাপুজোই এখন রাজনৈতিক? আমি তো বলছি না। ওনারাই বলছেন। কেন না, সব পুজোতেই কোনও না কোনও জনপ্রতিনিধি যুক্ত আছেন দেখলাম। দুর্গাপুজোর মধ্যে ওনারাই রাজনৈতিক রঙ এনেছেন। "
চৈতি আরও বলেন, "নৃশংসভাবে একটি মেয়েকে কর্মরত অবস্থায় খুন করা হয়েছে। তার বিচারের জন্য দাবি জানিয়েছি। খুব অন্যায় করেছি? আজ প্রত্যেক মেডিকেল সেক্টরে গরিব রোগীদের ঠকানো হয় ভেজাল ওষুধ দিয়ে। আসল ওষুধ চলে যায় অন্য জায়গায়। সব জায়গায় চলছে থ্রেট কালচার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। জুনিয়র ডাক্তাররা যাতে সুরুক্ষিত থাকে সেই নিয়ে কথা বলেছি। অপরাধ? আরও একটা কথা হল, স্যাংশনাল ভেকেন্সি বলে একটা জিনিস আছে। সেই জায়গাগুলো কেন ফাঁকা?"
অভিনেত্রী বলেন, "আমাকে তো তৃণমূলের নেতারা ডেকে কাজ দেননি 35 বছর ধরে। কোনও রাজনৈতিক দলও দেয়নি। আমাকে নামাতে পারে শুধু জনগণ। তারা আমাকে না চাইলে আমি, সিনেমা, নাটক সিরিয়াল থেকে নেমে যাব। তার আগে নয়। কোনও রাজনৈতিক দল আমাকে নামাতে পারবে না। ওরা আমার নামে ফতোয়া দেয় কী করে?
বিষয়টা সামাজিক মাধ্যমে জানিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে সুদীপ্তা চক্রবর্তী লিখেছেন, "এটা কী করলেন ছোট ছোট ভাইবোনেরা? কয়েকদিন ধরে একটু না হয় প্রতিবাদ প্রতিবাদ খেলছি আমরা ক'জন। সামনে আমাদের সিনেমা রিলিজ আর নাটকের শো আছে কয়েকটা। তাই এই সুযোগে একটু দাঁও মেরে নিচ্ছি আর কি। এটুকুও করতে দেবেন না? এমনিতেই আমাদের সিনেমা কেউ দেখে না, নাটকে টিকিট বিক্রি হয় না, গান শোনে না কেউ। মিছিলে হেঁটে একটু পিআর-টা করে নিচ্ছি কয়েকদিন।"
সুদীপ্তা আরও লেখেন, "এত গায়ে লাগছে আপনাদের? সারাবছর কেউ কাজ দেয় না। কোথাও দেখা যায় না আমাদের। দুটো পুজো উদ্বোধন আর পুজোয় অনুষ্ঠান করে গোটা বছর ধরে সংসারটা টানি। এবার যদি আমাদের পরিবারগুলো না খেতে পেয়ে মরে, তার দায়িত্ব কে নেবে বলুন দেখি? প্রতিবাদ প্রতিবাদ তো আপনারাও খেলছেন টুকটাক। আমরা কি কিছু বলেছি তখন? আপনারা এত অবুঝ কেন? ধুর, ভাল্লাগেনা। কান্না পাচ্ছে। খুব ভয় ও পেয়েছি। বাবা গো...বাঁচাও! জুজু আসছে। ভ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ।..."