কলকাতা, 11 অগস্ট: মঞ্চে ফের 'দেবী চৌধুরাণী'। শোভাবাজার রাজবাড়ির নাটমন্দির দালানে 17 অগস্ট মঞ্চস্থ হবে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে বাংলা নাটক 'দেবী চৌধুরাণী'। এই পর্বে উপন্যাসটিকে নাটকের আকার দিয়েছেন প্রখ্যাত নাট্যকার তথা নাট্য সমালোচক সম্রাট মুখোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, এই উপন্যাস অবলম্বনে বাংলা নাটক চারের দশকের মাঝামাঝি মঞ্চস্থ হয় স্টার থিয়েটারে। যার নাট্যরূপ দেন প্রখ্যাত নাট্যকার, মঞ্চাভিনেতা তথা নাট্য পরিচালক মহেন্দ্র গুপ্ত । এবার ফের একবার মঞ্চে 'দেবী চৌধুরাণী'। দর্শক নতুন কী পাবে এই নাটকে? জানালেন সম্রাট মুখোপাধ্যায় স্বয়ং।
ইটিভি ভারত: নতুন কী আছে আজকের 'দেবী চৌধুরাণী'তে?
সম্রাট মুখোপাধ্যায়: চারের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মহেন্দ্র গুপ্তর নির্দেশনায় স্টার থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয় 'দেবী চৌধুরাণী'। তখনকার দর্শক, প্রযোজনার ধরনের কথা মাথায় রেখে নাটক সাজিয়েছিলেন মহেন্দ্র গুপ্ত। সেটা সেই সময়ের জন্য সেরা ছিল। এই সময়ে বসে যখন লিখতে গেলাম তখন মনে হল, আমাকে আজকের দর্শকের কথা মাথায় রাখতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পোশাক, রুচি, খাদ্যাভ্যাস সবই বদলায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই শিল্পকেও বদলাতে হয়। ফলে, এই সময়ের মতো করে দেখাতে চেয়েছি নাটকটাকে।
ইটিভি ভারত: তা হলে কি মহেন্দ্র বাবুর নাটক থেকে পুরোপুরি সরে গিয়ে এই নাটক?
সম্রাট মুখোপাধ্যায়: আমি লেখার সময়ে সচেতন থেকেছি সবসময়। আমার 32 বছরের সিনেমা, থিয়েটারের সমালোচক সত্তা কাজ করেছে প্রতি মুহূর্তে। মহেন্দ্রবাবুর নাটকের মূল স্পিরিট থেকে সরিনি। শুরুর দৃশ্যে দেখাব বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কীভাবে দেবী চৌধুরাণীর আখ্যান পেলেন। সহজ কথায় প্লট পেলেন। এটা মহেন্দ্র বাহুর নাটকে দেখানো হয়নি। আমি সংযোজন করেছি। বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা ব্রিটিশ আর্মি অফিসার মহেন্দ্র গুপ্তর নাটকে সেভাবে নেই। আমি নিয়ে আসছি। আমি মন্বন্তর দেখাব। ইতিহাসের আশ্রয় নিয়েছি পুরোমাত্রায়। আমি বারবার বলছি, মহেন্দ্র গুপ্তর নাটকের পরিবর্তন করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি কিছু জিনিস সংযোজন করেছি মাত্র।
ইটিভি ভারত: তা হলে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে বদলাতে হয়েছে বলছেন? কোথায় বদল আছে?
সম্রাট মুখোপাধ্যায়: বদল একটা জায়গাতেই। ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে রয়েছে বিরাট বদল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে সময়ে লিখেছেন বা মহেন্দ্র গুপ্ত যে সময়ে নাট্যরূপ দিয়েছেন সেই সময়ের জন্য তার ক্লাইম্যাক্স ঠিক ছিল। আজকের জন্য ঠিক নয়। আজকের প্রজন্ম শেষ দৃশ্যে দেবী চৌধুরাণী এত লড়াইয়ের পরেও স্বামীকে দেবতা জ্ঞানে সব ভুলে ফিরে গেলেন তা মেনে নেবে না। তাই আমি আজকের প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে অন্য কিছু ভেবেছি। দর্শক সমালোচনা করলে আমি মাথা পেতে নেব। আমি যেটা ভেবেছি সেটা বঙ্কিমে নেই, মহেন্দ্র গুপ্তর নাটকে নেই। আছে ইতিহাসে ৷
ইটিভি ভারত: দেবী চৌধুরাণী সিনেমা, সিরিয়ালে এর আগেও এসেছে। শুভ্রজিৎ মিত্রর হাত ধরে আবারও আসছে। এই সময়েই আবার মঞ্চে।
সম্রাট মুখোপাধ্যায়: হ্যাঁ, শুভ্রজিৎ আমার পছন্দের পরিচালক। শুভ্রজিৎ আমার কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে, প্রায় একইসময়ে একই চরিত্র নিয়ে একটা ছবি আর একটা নাটক আসছে এটা বেশ ভালো লাগছে। দুটো কাজ দু'রকম হবে। অনেক শুভেচ্ছা ওঁকে। কাকতালীয়ভাবে ওঁর ছবির ভবানী পাঠক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আর আমাদের নাটকের ভবানী পাঠক অনল চক্রবর্তী দুজনেই মহেন্দ্র গুপ্তর ছাত্র। আমরা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শুভ্রজিৎ মিত্র দুজনকেই আমন্ত্রণ জানাব।