নয়াদিল্লি, 11 এপ্রিল: দেশে এখন দুই ধরনের আয়কর ব্য়বস্থা রয়েছে ৷ 2020 সালের বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন নতুন আয়কর ব্যবস্থা চালু করার ঘোষণা করেন ৷ তার পর থেকে করদাতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে কোন ব্যবস্থায় আয়কর দিলে, তা লাভজনক হবে ৷
সরকার দুই ব্যবস্থার মধ্যে যেকোনও একটি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা করদাতাদের দিয়েছে ৷ এবার নয়া ব্যবস্থায় করের হার অনেক কম ৷ কিন্তু এখানে অনেক ছাড় পাওয়া যায় না ৷ আবার পুরনো ব্যবস্থায় করের হার বেশি হলেও বেশ কিছুক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যায় ৷ তাই আয়কর দেওয়ার আগে পুরো বিষয়টিই ভালো করে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন ৷
নতুন কর ব্যবস্থা
কর কাঠামোর সরলীকরণ ও করদাতাদের বোঝা কমানোর জন্যই এই ব্যবস্থা চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ পুরনো ব্যবস্থার থেকে করের হারে পরিবর্তন এবং ছাড় পাওয়ার মাপকাঠি নতুন ব্যবস্থার স্বতন্ত্রতা ৷ কিন্তু এখানে এইচআরএ, এলটিএ, 80সি, 80ডি ও আরও অনেক ক্ষেত্রে কর ছাড় পাওয়া যায় না ৷ সেই কারণে অনেক করদাতার কাছেই এটা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না ৷ এই পরিস্থিতিতে যাতে আরও বেশি করদাতা নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়, তার জন্য 2023-24 অর্থবর্ষে কিছু সংশোধনও করে সরকার ৷
করছাড়ের সীমা বৃদ্ধি: নতুন ব্যবস্থায় এখন সাত লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে আয়কর দিতে হয় না ৷ পুরনো ব্যবস্থায় এই সীমা 5 লক্ষ বার্ষিক আয়েই শেষ হয়ে যায় ৷ করের ধাপ সুবিন্যস্ত করা: কর ছাড়ের সীমা তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ যদিও এই বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি ৷
পুরনো কর ব্যবস্থা
পুরনো ব্য়বস্থায় করদাতারা প্রায় 70 ধরনের ছাড় পান ৷ এর মধ্যে বাড়িভাড়া বা ছুটি নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার ভাতায় করছাড় খুবই জনপ্রিয় ৷ এই ছাড়ের জেরে করদাতাদের করযোগ্য আয় কমে যায় ৷ অনেক ক্ষেত্রে করই দিতে হয় না ৷ বিশেষ করে 80সি-তে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায় ৷ বিনিয়োগের উপর এই ছাড় দেওয়া হয় ৷
মৌলিক ছাড়ের সীমা: নতুন কর ব্যবস্থার অধীনে প্রবীণ নাগরিক-সহ সকলের জন্য মৌলিক করছাড়ের সীমা অপরিবর্তিত থাকবে । এর অর্থ হল নতুন ব্যবস্থা বেছে নেওয়ার ফলে প্রবীণ এবং অতি-প্রবীণ নাগরিকদের জন্য অতিরিক্ত কর ছাড় দেওয়া হবে না ।
কর বিধির পরিবর্তন ও তা বর্ধিত করা
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন: 50 হাজার টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন যা আগে শুধুমাত্র পুরনো কর ব্যবস্থার অধীনে পাওয়া যেত, তা নতুন কর ব্যবস্থাতেও বাড়ানো হয়েছে । এর অর্থ হল করদাতারা তাঁদের আয় থেকে 50 হাজার টাকার একটি স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন চাইতে করতে পারেন ৷ এর ফলে তাঁদের করযোগ্য আয় কমবে ৷ নতুন ব্যবস্থার অধীনে বিভিন্ন ছাড়-সহ সাড়ে সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় কর মুক্ত করা যাবে ৷
পারিবারিক পেনশনে ছাড়: যিনি পারিবারিক পেনশন পান, তিনি 15 হাজার টাকা বা পেনশনের এক তৃতীয়াংশ (দুইয়ের মধ্যে কম যেটা) পর্যন্ত ছাড় চাইতে পারেন ৷ এর ফলে করযোগ্য পেনশন করের আওতার বাইরে চলে যায় ৷
উচ্চ আয়ের ক্ষেত্রে কমেছে সারচার্জ: 5 কোটি টাকার বেশি আয় যাঁরা করেন, তাঁদের সারচার্জের হার 37 শতাংশ থেকে কমিয়ে 25 শতাংশ করা হয়েছে ৷ এর ফলে তাঁদের করের হার 42.74 শতাংশ থেকে কমে 39 শতাংশ হবে ৷ যা অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে ৷
ছুটি নগদীকরণে ছাড়: বেসরকারি কর্মীদের জন্য ছুটি নগদীকরণের (ছুটির বিনিময়ে টাকা) ছাড়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে । আগে 3 লক্ষ টাকা নির্ধারিত ছিল ৷ এখন তা বাড়িয়ে 25 লক্ষ করা হয়েছে ৷ ফলে আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এই উচ্চতর ছাড়ের সীমা বেসরকারী কর্মীদের ছুটির নগদ অর্থের বিনিময়ে আরও করছাড়ের সুবিধা দিচ্ছে ৷
স্বাভাবিক কর ব্যবস্থা: 2023-24 আর্থিক বছর থেকে নতুন আয়কর ব্যবস্থাকে ডিফল্ট করে দেওয়া হয়েছে ৷ অর্থাৎ এটাকেই স্বাভাবিক কর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে ৷ যদি করদাতারা পুরনো ব্যবস্থায় থাকতে চান, তাহলে তাঁদের ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার সময় একটি ফর্ম জমা দিতে হবে । প্রতি বছর প্রয়োজনে তাঁরা এই এক কর ব্যবস্থা থেকে অন্যটি বেছে নিতে পারেন ৷
নতুন কর ব্যবস্থায় কর ছাড়ে কিছু বদল করা হয়েছে ৷ সেটাই দেখে নেওয়া যাক একনজরে -
যেগুলিতে ছাড় পাওয়া যাচ্ছে না: এলটিএ, এইচআরএ, 50 হাজার টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন (2023-24 অর্থবর্ষে বেতনভোগীদের জন্য উপলব্ধ এই ছাড়), 80টিটিএ/টিটিবি-তে ছাড়, বিনোদন ভাতায় ছাড় ও প্রফেশনাল ট্যাক্স (সরকারি কর্মীদের জন্য), ধারা 24 এর অধীনে স্ব-অধিকৃত বা খালি সম্পত্তির জন্য হোম লোনের প্রদত্ত সুদের উপর কর ছাড়, ছাঁটাই সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ এবং অধ্যায় VI-A-এর অধীনে কর-সঞ্চয় বিনিয়োগ কাটছাঁট (80সি, 80ডি, 80ই, 80সিসিসি, 80সিসিডি, 80ডিডি, 80ডিডিবি, 80ইই, 80ইইএ, 80ইইবি, 80জি, 80জিজি, 80জিজিএ, 80জিজিসি, 80আইএ, 80-আইএবি, 80-আইএসি, 80-আইবি, 80-আইবিএ ৷ ধারা 80সিসিডি(2), 80জেজেএ, এবং 80সিসিএইচ-এর অধীনে ছাড় ব্যতীত) ৷
যেগুলিতে ছাড়গুলি পাওয়া যাবে: জীবন বীমা থেকে আয়, শিক্ষা সংক্রান্ত জন্য বৃত্তি, অবসরে নগদ অর্থে ছাড়, কৃষি থেকে আয়, ভাড়ার আয়ের উপর স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন এবং বেতনভোগী ব্যক্তি ও পেনশনভোগীদের জন্য 50 হাজার টাকা এবং ফ্যামিলি পেনশনারদের জন্য 15 হাজার টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন (2024-25 অর্থবর্ষের পর), পারিবারিক পেনশন থেকে 15 হাজার টাকা ছাড় (2023-24 অর্থবর্ষ পর্যন্ত), স্বেচ্ছাবসরের ক্ষেত্রে 5 লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় এবং মৃত্যু সহ-অবসর সুবিধা ৷
এবার দুই ব্য়বস্থার করের তুলনা করে দেখে নেওয়া যাক -
যখন ছাড় 5 লক্ষ টাকা বা তার কম: এই ক্ষেত্রে, নতুন কর ব্যবস্থা আরও উপকারী হবে । নতুন ব্যবস্থায় করের হার কম ৷ তাই পুরনোর ব্যবস্থার ছাড়ের তুলনায় এটা ভালো হবে ৷
পুরো ছাড় যখন 3.75 লক্ষের বেশি: যদি মোট ছাড়ের পরিমাণ 3.75 লক্ষ টাকার বেশি হয়, তাহলে পুরনো কর ব্যবস্থা গ্রহণ করাই কার্যকরী হবে ৷ পুরনো ব্যবস্থায় থাকা একাধিক কর ছাড় করযোগ্য আয়কে কমিয়ে দিতে পারে এক্ষেত্রে ৷
যখন ছাড় দেড় লক্ষ থেকে 3.75 লক্ষের মধ্যে থাকে: এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ৷ তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আয়ের পরিমাণ, সুনির্দিষ্ট ছাড় ও কী কী ছাড় পাওয়া যাবে, তা ভালো করে আগে জানা উচিত ৷ তার পর কোন কর ব্যবস্থায় যাওয়া হবে, তা ঠিক করা উচিত ৷
দুই কর ব্যবস্থায় পার্থক্য অনেক ৷ তাই বেছে নেওয়ার আগে যেকোনও করদাতাকে নিজের অবস্থার কথা আগে বিবেচনা করা উচিত ৷ কারণ, নতুন ব্যবস্থায় করের হার কম হলেও অনেক ছাড় পুরনো ব্যবস্থার মতো পাওয়া যায় না ৷ আবার নতুন কর ব্যবস্থা পুরনোটির মতো এত জটিলও নয় ৷ তাই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দীর্ঘমেয়াদী লাভের কথা আগে বিবেচনা করা উচিত ৷
আর পড়ুন: