হায়দরাবাদ, 20 মার্চ: আমার তো গল্প বলা কাজ... আজ গল্প বলার দিন, গল্প শোনারও ৷ আজ বিশ্ব গল্প বলা দিবস ৷ যে দিনের প্রতিপাদ্যে কখনও মুড়োয় না নটে গাছটি ৷ মুখে গল্প বলার শিল্পকেই উদযাপন করা হয় এই দিনে । বিশ্বজুড়ে মানুষ বহু ভাষায় কথা বলে, নানাভাবে নিজেদের মনের ভাব ফুটিয়ে তোলে ৷ আজ তাই বিভিন্ন ভাষায় গল্প বলা ও শোনার দিন ৷
বিশ্ব গল্প বলার দিবসের থিম: প্রতি বছর বিশ্ব গল্প বলার দিবসের একটি থিম থাকে ৷ এই থিমের উপরই ভর করে গল্পকাররা তাঁদের গল্পগুলি বলেন । যার উপর ভর করে গল্পকাররা তাঁদের নিজেদের পছন্দ মতো গল্প বেছে নিতে পারেন ৷ তবে তাঁদের থিমের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন গল্প বলার চেষ্টা করতে হবে । এ বছর বিশ্ব গল্প বলার দিবসের থিম হল 'সেতু নির্মাণ' (বিল্ডিং ব্রিজেস)।
বিশ্ব গল্প বলার দিবসের ইতিহাস: বিশ্ব গল্প বলার দিনটি উদযাপন শুরু হয় 1991 সালে, সুইডেনে ৷ গল্প বলার জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন হিসাবে শুরু হয়েছিল এটি । দিনটিকে বলা হয়েছিল, 'আল্লা বেরেটারেস দাগ', যা পরে গল্পকার দিবসে অনুবাদ করা হয় ।
1997 সালে অস্ট্রেলিয়ার গল্পকাররা পাঁচ সপ্তাহ ধরে টানা গল্প শুনিয়েছিলেন । এরপর থেকই দিনটি আন্তর্জাতিক মৌখিক বর্ণনাকারী (ওরাল ন্যারেটরস) দিবস হিসেবে পরিচিতি লাভ করে । এই সময়ে মেক্সিকো এবং অন্যান্য ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলি তাদের নিজস্ব গল্পকারদের নিয়ে জাতীয় দিবস উদযাপন করে ।
2002 সালে স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা রাতাটোস্ক নামে তাদের নিজস্ব গল্প বলার ওয়েব-নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল । নতুন নেটওয়ার্ক সুইডেন থেকে নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড এবং এস্তোনিয়াতে গল্প বলার জাতীয় দিবসকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে । 2003 সালে দিবসটি কানাডা-সহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে । তারপরে তা বিশ্ব গল্প বলার দিবস হিসেবে পরিচিতি পায় । 20 মার্চ অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া প্রতিটি মহাদেশে গল্প বলা হয় ।
শৈশবে ঘুমের আগে গল্প শোনার উপকারিতা
- গল্পের মাধ্যমে বাচ্চাদের কল্পনাকে লালন-পালন: মা-বাবার কাছ থেকে ঘুমনোর আগে গল্প শুনলে শিশুদের কল্পনার বিকাশ ঘটে ৷ গল্পটি শোনার পর সেটিকে নিয়ে তারা ভাবনা চিন্তা করে । আপনার কথা শোনার সময় তারা গল্পের বিভিন্ন চরিত্র এবং দৃশ্যগুলো কল্পনা করে । এটি তাদের সৃজনশীলতা বাড়ায় এবং তাদের নতুন কিছু ভাবতে সাহায্য করে । তারা শুনতে শুনতে ছবির সঙ্গে গল্পকে যুক্ত করে । এতে তাদের কল্পনা করার ক্ষমতাকে আরও বাড়ে ।
- শোনার দক্ষতা বাড়ায়: দীর্ঘ সময় ধরে কোন কিছুর উপর মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে শিশুদের জন্য । সেটা হওয়াটা স্বাভাবিক ৷ তবে শিশুদের গল্পের ছলে কিছু বললে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় এবং গল্প শুনলে তাদের শোনার দক্ষতা উন্নত আরও বাড়ে ।
- শিশুদের কথোপকথনের দক্ষতা বাড়ায়: গল্প বলা শিশুদেরকে নিজেদের মত প্রকাশ করতে উৎসাহিত করে । এটি তাদের চিন্তাভাবনা, ধারণা এবং অনুভূতি প্রকাশ করার ক্ষমতা এবং ইচ্ছা বাড়ায় । এটি বাচ্চাদের সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে এবং একটি ভালো কথোপকথন করতে সক্ষম করে ৷ এইভাবে তাদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে ।
- মনোযোগ ও সামাজিক দক্ষতা বাড়ায়: গল্প বললে সন্তান আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে ৷ এতে তাদের ধৈর্য্য় বাড়বে ৷
- ভাষার প্রতি দক্ষতা বাড়ায়: ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষায় শিশুরা নিয়মিত গল্প পড়লে সেই ভাষায় দক্ষতা বাড়ে ৷ ছবি-সহ গল্প পড়তে বাচ্চারা বেশি ভালোবাসে ৷ এতে পড়ীর প্রতি তাদের উৎসাহ বাড়ে ৷
- স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ হয়: শিশুদেরকে গল্প বলার পর সেটি আবার কথায় কথায় তার থেকে জানার চেষ্টা করুন ৷ এর ফলে তাদের স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ হবে ৷
- আগ্রহ বাড়ায়: গল্প বলা থেকে পড়াশোনবার প্রতি আগ্রহ জন্মায় শিশুদের মধ্যে ৷ ভবিষ্যতের পুঁথিগত শিক্ষার ক্ষেত্রেও যা কাজে লাগে ৷ কোনও কিছুর বিষয়ে কৌতূহল বাড়ায় ।
- নতুন কিছুর সঙ্গে পরিচয় করায়: গল্প বলা আপনার সন্তানের জন্য সম্পূর্ণ নতুন এবং ভিন্ন জগত খুলে দিতে পারে । আপনার গল্পের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও রীতিনীতির সঙ্গে পরিচত হয় ৷ যাতে তাদের সহানুভূতির বিকাশ ঘটে ৷
বাচ্চাদের প্রত্যেকদিন গল্প বলার অভ্যাস ভালো ৷ এর মাধ্যমে সন্তান ও মা-বাবার সম্পর্ক গাঢ় হয় ৷ একে ওপরের সঙ্গে সময় কাটানো যায় ৷ সন্তানের মনের কথা গল্পের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা যেতে পারে ৷ বাবা-মার জীবনের কথা সহজে বলা যেতে পারে ৷ অঙ্গভঙ্গিতে গল্প বলে শিশুরা বেশি আকর্ষিত হয় ৷
আরও পড়ুন: