পটনা, 20 মার্চ: একটা সময় ছিল যখন বাড়ির আঙিনায় ও ছাদে চড়ুই পাখিদের ঝাঁক দেখা যেত ৷ বাড়ির ঘুলঘুলিতে বাসা বাঁধত ৷ কিন্তু বর্তমান সময়ে চড়ুই পাখির দেখা প্রায় নেই বললেই চলে ৷ এর কারণ, পরিবেশ দূষণ ও তার জেরে চড়ুইয়ের সংখ্যা প্রায় বিলুপ্তির পথে ৷ কিন্তু, পটনার সঞ্জয় কুমার সিনহা (55) চড়ুই বাঁচাতে তাঁর অনন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ তিনি চড়ুই পাখি এতটাই ভালবাসেন যে, তাঁর বাড়িটিকে চড়ুই পাখির ঘর বানিয়ে ফেলেছেন ৷ লোকে সঞ্জয়কে কুমার সিনহাকে 'পটনার স্প্যারো ম্যান' বলেও ডাকে ৷
উল্লেখ্য, চড়ুই বিহারের রাষ্ট্রীয় পাখি ৷ লোকে হয়তো বিশেষ দিনে চড়ুই বাঁচানোর চেষ্টা করে ৷ কিন্তু, সঞ্জয় সিনহার জীবনের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে- 'সেভ স্প্যারো, সেভ এনভায়রনমেন্ট'। 'চড়ুই' প্রেমিক সঞ্জয় সিনহার প্রতিবেশীরা পাখির কিচিরমিচির শব্দে জেগে ওঠেন ৷ পটনার কাঁকরবাগ এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় সিনহা ভারতীয় তথ্য পরিষেবায় কর্মরত ৷ তাঁর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের দৈনন্দিন কাজ চড়ুইদের খাবার এবং জল দিয়ে শুরু হয় ৷ তাঁর বাড়িতে ঢুকতে শতাধিক চড়ুইয়ের থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছেন সঞ্জয় কুমার সিনহা ৷ চড়ুইদের যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি প্রতি মাসে বেতনের একটা অংশ সঞ্চয় করে রাখেন ৷
সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, "আজকাল পাখিদের মধ্যে চড়ুই বেশি দেখা যায় না ৷ আগেকার দিনে বাড়িতে শস্য (চাল, ডাল, গম) থাকত ৷ এই সময়ে যখনই মাটিতে শস্যের দানা পড়ত, চড়ুই তাড়াতাড়ি এসে সেই দানা নিয়ে উড়ে যেত ৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে মানুষের জীবনধারা ৷ সেই বদলের সঙ্গে চড়ুইয়ের সংখ্যাও প্রায় নেই এর পর্যায়ে চলে গেছে ৷ গ্রীষ্মকালে মানুষ যদি তাদের উঠোনে বা বারান্দায় ছোট পাত্রে জল রাখে, তাহলে এসব পাখিরা আর তৃষ্ণার্ত থাকবে না ৷"
সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, "আজ বিশ্ব চড়ুই দিবস ৷ এই দিনে শুধুমাত্র চড়ুই সংরক্ষণ সম্পর্কে কথা বলা যথেষ্ঠ নয় ৷ আমাদের বাড়িতে যে, চড়ুই পাখিরা বাসা তৈরি করত, বাড়ির উঠোনে ঘুরে বেড়াত আর শস্য খেত, উঠোন কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠত, এখন মনে হয় সে যেন অতীত হয়ে গেছে ৷ পরিবর্তিত সময়ে সেই চড়ুইের স্বর আর শোনা যায় না ৷"
সঞ্জয় বলেছেন, তিনি গত 17 বছর ধরে চড়ুই সংরক্ষণে কাজ করছেন ৷ 2007 সালে এই প্রচার শুরু করেন ৷ তাঁর বাড়ির বাইরে পাখিদের জন্য খাবার এবং জল রাখা শুরু করেন ৷ তারপরে পাখিরা আসতে শুরু করে ৷ এটি তাঁকে প্রভাবিত করে ও তারপর তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা তৈরি করতে শুরু করেন ৷ সেই থেকে আজও তাঁর চড়ুই সংরক্ষণের কাজ চলছে ৷
আরও পড়ুন: