হায়দরাবাদ, 20 অগস্ট: আজ দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির 80তম জন্মবার্ষিকী ৷ প্রতি বছর তাঁর জন্মদিনটি সদ্ভাবনা দিবস হিসেবে পালিত হয় ৷ এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য দেশজুড়ে সম্প্রীতি রক্ষা করা ৷ 1944 সালের 20 অগস্ট জন্মগ্রহণ করেন রাজীব গান্ধি ৷ তাঁর জন্মদিনে এক্স হ্যান্ডেলে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ মঙ্গলবার সকালে রাজীব গান্ধির সমাধিস্থল বীর ভূমিতে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছেলে তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি ৷
কেন সদ্ভাবনা দিবস ?
'সদ্ভাবনা'র অর্থ সৎ ভাবনা ৷ রাজীব গান্ধি দেশের কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ৷ তাঁর উদ্ভাবনী ও স্বতন্ত্র ভাবনার জন্য তিনি আজও স্মরণীয় ৷ রাজীব গান্ধি তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে একটি উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন ৷ সদ্ভাবনা দিবসের লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন ধর্ম, ভাষাভাষি, জাতের মানুষকে মধ্যে ঐক্য এবং সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া ৷
Tributes to our former Prime Minister Shri Rajiv Gandhi Ji on his birth anniversary.
— Narendra Modi (@narendramodi) August 20, 2024
রাজীব গান্ধি
1984 সালের 31 অক্টোবর দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করা হয় ৷ এরপর তাঁর ছেলে রাজীব গান্ধি মাত্র 40 বছর বয়সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ৷ তিনিই কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ৷ ফিরোজ গান্ধি ও ইন্দিরা গান্ধির বড় ছেলে রাজীব গান্ধি কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন ৷ কিন্তু তা অসম্পূর্ণই থেকে যায় ৷ 1984 সাল থেকে 1989 সাল পর্যন্ত তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ৷ দেশের শিক্ষা ও অর্থনীতিতে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয় ৷
জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রণয়ন হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির সময়কালে 1986 সালে ৷ এর লক্ষ্য ছিল উচ্চশিক্ষাকে আরও উন্নত করে তোলা ৷
1986 সালে জওহর নবোদয় বিদ্যালয় ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজীব গান্ধি ৷ এর আওতায় গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েরা কেন্দ্রীয় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারবে ৷ তারা স্কুলে আবাসিক থেকেই পড়াশোনা করবে ৷
ওই বছরই এমটিএনএল (মহানগর টেলিফোন নিগম লিমিটেড) প্রতিষ্ঠা করেন রাজীব গান্ধি ৷ পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাগুলিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে পাবলিক কল অফিসেস বা পিসিওএস তৈরি করা হয় ৷ অর্থনৈতিক সংস্কার 1990 সালের পর তিনি দেশে লাইসেন্স রাজের প্রভাব কমাতে উদ্যোগী হন ৷
রাজীব গান্ধিই ভোটে তরুণদের উৎসাহিত করতে ভোটারদের ন্যূনতম বয়স 18 বছর করেছিলেন ৷ কর্মসংস্থান তৈরিতে জওহর রোজগার যোজনা প্রকল্প কার্যকর করেছিলেন রাজীব গান্ধি ৷
রাজীব গান্ধি জাতীয় সদ্ভাবনা পুরস্কার
1992 সালে কংগ্রেসের অল ইন্ডিয়া পার্লামেন্টারি কমিশনের তরফে রাজীব গান্ধি ন্যাশনাল সদ্ভাবনা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয় ৷ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রতি বছর এই পুরস্কার দেওয়া হয় ৷ পুরস্কার প্রাপকরা 10 লক্ষ টাকা পুরস্কার পান ৷ এই পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে অন্যতম লতা মঙ্গেশকর, সুধা মুদগল, সুনীল দত্ত, আমজাদ আলি খান, মহম্মদ আজহারুদ্দিন, গোপালকৃষ্ণ গান্ধি ৷
রাজীব গান্ধি সম্পর্কে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য :
- 1970 সালে তিনি এয়ার ইন্ডিয়াতে পাইলট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ৷ 1980 সালে রাজনীতিতে আসার আগে পর্যন্ত সেখানে কাজ করেছিলেন ।
- রাজীব গান্ধি গাড়ি চালাতে ভালোবাসতেন ৷ দেশের মধ্যে তিনিই হয়তো একমাত্র নেতা ছিলেন, যিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে প্রচারে যেতেন ৷
- ভাই সঞ্জয় গান্ধির অকাল মৃত্যুর পর শঙ্করাচার্য স্বামী শ্রী স্বরূপানন্দ রাজীব গান্ধিকে রাজনীতিতে প্রবেশের জন্য অনুরোধ করেন ৷
- রাজীব গান্ধি ফোটো তুলতেও ভালোবাসতেন ৷ তাঁর মৃত্যুর পর 1995 সালে তাঁর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধি তাঁর ছবিগুলি নিয়ে একটি বই 'রাজীব'স ওয়ার্ল্ড: ফোটোগ্রাফস বাই রাজীবন গান্ধি' প্রকাশ করেন ৷
- তাঁর দিদিমা কমলা নেহরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর নাম রাজীব রাখা হয়েছিল । 'কমলা' শব্দটি দেবী লক্ষ্মীকে বোঝায় এবং 'রাজীব' পদ্মের অন্য একটি নাম , যা দেবতার উপাসনায় ব্যবহৃত হয় ।
- তিনি ফ্লাইং ক্লাবের সদস্য ছিলেন । এখানে তিনি অসামরিক বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন ।
- তিনি কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট পছন্দ করতেন । মন্ত্রী হিসাবে দেশের মধ্যে ডিজিটাইজ়েশনের অগ্রগতির উপর জোর দিয়েছিলেন ।
- 1981 সালে তিনি কংগ্রেসের যুব শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন ।
- 1984 সালে তাঁর নেতৃত্বেই কংগ্রেস লোকসভায় 542-এর মধ্যে 411 টি আসন নিয়ে বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল ।
- 1991 সালের 21 মে তামিলনাড়ুতে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন রাজীব গান্ধি ৷ সেখানে এলটিটিই জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় তাঁর মৃত্যু হয় ৷