শ্রীনগর, 26 নভেম্বর: বিশেষ মর্যাদার তকমা হারিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর ৷ এরপর বহু রাজনৈতিক ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ভূ-স্বর্গ ৷ কিন্তু বহু কাশ্মীরি পণ্ডিত স্বভূমে ফিরে আসতে পারেননি ৷ সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচন হয় উপত্যকায় ৷ 16 অক্টোবর জম্মু-কাশ্মীরে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে ন্যাশনাল কনফারেন্স ৷ এর একমাস 10 দিনের মাথায় এখানে বসবাস করা নিয়ে বড় পদক্ষেপ করলেন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ৷
তিন দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে এই প্রথম তাঁরা নিজেদের নামে একটি হাউজিং সোসাইটি গঠন করলেন শ্রীনগরে ৷ জম্মু-কাশ্মীরে এবার পাকাপাকি থাকতে চান তাঁরা ৷ দীর্ঘদিন ধরে সরকার তাঁদের ফেরানো এবং পুনর্বাসন নিয়ে নানারকম পরিকল্পনা করলেও তা বাস্তবায়িত হয়ে ওঠেনি ৷ স্বভাবত এমন হতাশার মাঝে এই হাউজিং সোসাইটি গড়ে তোলার ইঙ্গিত এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া ৷
এই সোসাইটি সরকারের কাছে কম দামে বাসযোগ্য জমি চাইবে ৷ কাশ্মীরি পণ্ডিতরা জম্মু-কাশ্মীরের কোঅপারেটিভ সোসাইটির রেজিস্ট্রারে 'দ্য ডিসপ্লেসড কাশ্মীরি রেসিডেন্টস হাউজিং কমপ্লেক্স, শ্রীনগর' নামে নথিভুক্ত করিয়েছেন ৷
এই সোসাইটির সচিব সতীশ মহলদার বলেন, "অন্য জায়গা থেকে আসা লোকজন যাতে এখানকার মুসলিম জনসাধারণের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারেন, তার জন্য এই উদ্যোগ ৷ মফস্বল এলাকায় আলাদা করে থাকার দরকার নেই ৷" এই সোসাইটিতে 11 জন কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং দু'জন শিখ রয়েছেন ৷ 1989 সালের পর থেকে উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ শুরু হয় ৷ নির্দিষ্ট কয়েকটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে ৷ সেই সময়ে এই কাশ্মীরি পণ্ডিত ও শিখরা উপত্যকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন ৷
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পুনর্বাসন রাজনৈতিক স্বার্থের অঙ্গ
ইটিভি ভারতকে মহলদার জানান যে তিনি বিশ্বাস করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকায় ফিরিয়ে আনাটা ভোটের স্বার্থে ৷ এর নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে ৷ কিন্তু সেসব নিয়ে বাস্তবে কোনও সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি ৷ 2019 সালে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কাশ্মীরে ফিরতে চাওয়া 419টি পরিবারের একটি তালিকা জমা পড়েছিল ৷
হাউজিং সোসাইটির সচিব বলেন, "এই আজ পর্যন্ত তার কিছু হয়নি ৷ গত 4-5 বছর ধরে সরকার দাবি করে আসছে যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেছে এবং তাহলে আমরা আমাদের শিকড়ের কাছে ফিরতে পারব ৷ কিন্তু বেশ কয়েক বছর হল, আমাদের মধ্যে অনেকে তাঁদের জমি-বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন ৷ তাই এবার সরকারের কাছ থেকে অল্প দামে জমি চাইতে এই হাউজিং সোসাইটি গড়ে তুলেছি ৷"
মহলদার আরও বলেন, "গত সপ্তাহে এই সোসাইটিতে নাম নথিভুক্ত করার জন্য কথা জানানো হয় ৷ একবার সেই তালিকা সম্পূর্ণ হলে আমরা সরকারকে জানাব শ্রীনগরের যে কোনও জায়গায় আমাদের স্বল্প মূল্যে জমি দেওয়া হোক ৷"
উদাহরণ দিয়ে তিনি বিষয়টি বুঝিয়ে দেন ৷ সতীশ মহলদার বলতে থাকেন, "যেমন ধরুন, আমরা 100 কানালস (জমি পরিমাপের একক) জমি চাইলাম ৷ সেখানে প্রতি পরিবার পিছু প্লটে ভাগ করা যেতে পারে এবং একটি কমিউনিটি সেন্টারও গড়া যায় ৷ আমরা প্রথমে শ্রীনগর থেকেই শুরু করতে চাই এবং পরে গ্রামের দিকে যেতে পারি ৷ কিন্তু যে কোনও সম্প্রদায়ের কাশ্মীরি পরিযায়ী ব্যক্তি যেন সেখানে বসবাস করতে পারেন ৷"
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের একটা বিশাল অংশই তাঁর এই পরিকল্পনার বিরোধী ৷ তাঁদের আশঙ্কা এতে নিশানা করে হত্যার ঘটনা আরও বাড়বে বই কমবে না ৷ যেমনটা হয়েছে গত পাঁচ বছরে ৷ এতদসত্ত্বেও মহলদার আশাবাদী ৷
তাঁর কথায়, "এই জন্যই তো একে প্রত্যাবর্তন বলছি আমরা ৷ আমার শিকড়, আচার সব সেখানে ৷ আমি যদি শঙ্করাচার্যের মন্দিরে যাই, তাহলে মাকদুম সাহিবের সমাধিতেও যাব ৷"
সরকারের প্রতিক্রিয়া
2010 সালে তৎকালীন সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় দাবি করেছিল, জঙ্গি হামলায় উপত্যকায় 219 জন কাশ্মীরি পণ্ডিতের মৃত্যু হয়েছিল ৷ এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কথা ভেবে 62 হাজার কাশ্মীরি পণ্ডিত বাধ্য হয়ে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে মূলত জম্মু ও নয়াদিল্লি এবং দেশের অন্য জায়গায় চলে যান ৷
কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ের দাবি, তাঁদের বাড়িঘর সব ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে, দখল করা হয়েছে ৷ এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে তাঁরা তাঁদের সম্পত্তি বিক্রি করে দেন ৷ এই কারণে 2021 সালের অগস্টে সরকার একটি অনলাইন পোর্টালও চালু করে ৷ যেখানে কাশ্মীর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া মানুষরা তাঁদের জমি দখল বা চাপে পড়ে জমি বিক্রি নিয়ে রিপোর্ট জানাতে পারেন ৷
1997 সালে দ্য জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর মাইগ্র্যান্ট ইমমুভেবল প্রপার্টি (প্রিজার্ভেশন, প্রোটেকশন অ্যান্ড রেসট্রেন্ট অন ডিসট্রেস সেলস) অ্যাক্ট-এ এই ধরনের কাশ্মীরিদের 'পরিযায়ী' বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ তাঁদের উপত্যকায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ 2015 সালের পিএম'স ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজ এবং 2008 সালের পিএম'স রিকনস্ট্রাকশন প্ল্যানের আওতায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জন্য উপত্যকায় 6 হাজার চাকরির বন্দোবস্ত হয়েছে ৷
2024 সালের অগস্টের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে 5 হাজার 724 জন পরিযায়ীকে সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত করা হয়েছে ৷ এছাড়া 6 হাজার কর্মীর থাকার জন্য উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ কাশ্মীরে বাসস্থান নির্মাণের কাজও চলছে ৷