বারাণসী, 25 অগস্ট: ছোট্ট গোপালের আরাধনায় একেবারে সাজো সাজো রব ৷ প্রতিবছর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয় জন্মাষ্টমী। এবছর শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী কবে পালিত হবে তা নিয়ে রয়েছে ধন্দ ৷ অনেকেই বলছেন, 26 অগস্ট অর্থাৎ আগামিকাল ৷ আবার কেউ কেউ বলছেন, 27 অগস্ট মঙ্গলবার ৷ এই প্রতিবেদনে জেনে নিন এবছর কবে পালিত হবে জন্মাষ্টমী ও ঠিক কোন সময়ে কৃষ্ণের আরাধনা করবেন।
জন্মাষ্টমী পালন-
- ইটিভি ভারত এনিয়ে কাশীর পণ্ডিত ঋষি দ্বিবেদীর সঙ্গে কথা বলে ৷ তিনি জানান, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিকে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মতিথি বলে মনে করা হয় ৷ তবে শুধু তিথিই নয়, শ্রী কৃষ্ণ যে নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাও গুরুত্বপূর্ণ। সেই নক্ষত্র হল রোহিণী নক্ষত্র ৷ এবার এই নক্ষত্র নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে ৷ কেউ সোমবার আবার কেউ মঙ্গলবার জন্মাষ্টমী পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
- তিনি আরও জানান, এবারের জন্মাষ্টমী ব্রত আশ্চর্যজনক এবং একটু আলাদা ৷ কারণ অষ্টমীর সঙ্গে মধ্যরাতে রোহিণী নক্ষত্রের জয়ন্তী নামে একটি যোগ তৈরি হয়েছে ৷ এই ধরনের সংমিশ্রণ খুব বিরল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃষ রাশির চন্দ্র লগ্নের রোহিণী নক্ষত্রের মধ্যরাতে ভাদ্রপাদ কৃষ্ণ অষ্টমীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
- ভগবান বিষ্ণুর দশাবতারের মধ্যে, ভগবান কৃষ্ণকে সবচেয়ে বিশিষ্ট পূর্ণাবতার হিসাবে বিবেচনা করা হয় ৷ এবছর জন্মাষ্টমী 26 এবং 27 অগস্ট উভয় তারিখে উদযাপিত হবে। তিথি অনুসারে, 26 অগস্ট জন্মাষ্টমীর উপবাস পালন করা হবে। একই সময়ে 27 অগস্ট গোকুল ও বৃন্দাবনে কৃষ্ণ জন্মোৎসব পালিত হবে। এবার যদি গৃহকর্তারা 26 অগস্ট জন্মাষ্টমী উদযাপন করেন তাতে কোনও অসুবিধা নেই ৷ তবে বৃন্দাবনের মথুরায় 27 অগস্ট গোকুলাষ্টমী (উদয়কালের অষ্টমী) পালিত হবে।
জন্মাষ্টমী তিথি-
- পণ্ডিতের কথায়, "উদয়ব্যাপিনী রোহিণী বৈষ্ণবজন অনুগামীরা 27 অগস্ট শ্রীকৃষ্ণ ব্রত পালন করবেন। ভাদ্র কৃষ্ণ অষ্টমী তিথি 26 অগস্ট সকাল 08.20 মিনিটে শুরু হবে যা 27 অগস্ট সকাল 06.34 মিনিট পর্যন্ত থাকবে। রোহিণী নক্ষত্র 26 অগস্ট রাত 09.10-এ শুরু হবে যা 27 অগস্ট রাত 08.23 পর্যন্ত চলবে।" এর পাশাপাশি অন্যান্য পঞ্জিকা অনুযায়ী এবছর জন্মাষ্টমী পালিত হবে আগামী 26 অগস্ট সোমবার। অষ্টমী পড়বে রাত 3টে 40 মিনিটে এবং বেলা 2টো 20 মিনিট পর্যন্ত অষ্টমী থাকবে।
জন্মাষ্টমী উপোসের নিয়ম-
- পণ্ডিত ঋষি দ্বিবেদী বলছেন, এদিনে উপোসের আগে রাতে হালকা খাবার খাবেন ৷ সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে সূর্য, চন্দ্র, বায়ু, দিগপতি, ভূমি, আকাশ, যম ও ব্রহ্মা ইত্যাদিকে প্রণাম করে উত্তরমুখী হয়ে বসুন। হাতে জল, অক্ষত, কুশ ও ফুল নিয়ে মাস, তিথি, পক্ষ পাঠ করে সংকল্প নিন। আমার সংকল্প হল, আমি আমার সমস্ত পাপস্খলনের জন্য এবং আমার সমস্ত ইচ্ছাপূরণের জন্য শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর উপবাস পালন করছি। এই সংকল্প গ্রহণ আপনারাও করতে পারেন ৷ বিকেলে কালো তিলের জলে স্নান করুন ৷
জন্মাষ্টমীর পুজো-
- পণ্ডিত দ্বিবেদী আরও বলেন, "উপোসের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পরে, পরিষ্কার ও সাজানো জায়গায় সঠিকভাবে পুজোর সমস্ত উপকরণ রাখুন ৷ একটি সাজানো বিছানার সামনে কলসি রাখুন। শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি এখানেই স্থাপন করবেন। এরপর রাতে ভগবানের জন্মের পর জাগরণ ও ভজন ইত্যাদি করতে হবে। অনেক মহিলারাই পুত্র লাভের আশায় গোপালের পুজো করে থাকেন ৷"
ইচ্ছেমতো মূর্তি বেছে নিন-
- পণ্ডিতের কথায়, "জন্মাষ্টমীতে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি স্থাপনের প্রথা রয়েছে। শিশুদের সুখের জন্য বাল কৃষ্ণের মূর্তি স্থাপন করা যেতে পারে ৷ এছাড়া অন্যান্য ইচ্ছাপূরণের জন্য বাঁশিওয়ালা কৃষ্ণের মূর্তি বেছে নিতে পারেন ৷"
গোপুর সাজসজ্জা-
- শ্রীকৃষ্ণকে ফুল দিয়ে সাজানো সবথেকে সেরা। হলুদ রংয়ের পোশাক পরাতে পারেন ছোট্ট কানাইকে। এরপর চন্দনের সুগন্ধি লাগান। সবচেয়ে ভালো হয় বৈজয়ন্তী (কলাবতী) ফুল পেলে। কালো রংয়ের কোনও কিছু এড়িয়ে যায় ৷