নয়াদিল্লি, 13 জুলাই: 90 দিনের বেশি সময় জেলে রয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, শুক্রবার তাঁর অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করার সময় এই বিষয়টি উল্লেখ করেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ শীর্ষ আদালত আরও জানিয়েছে, এই বিষয়টির সঙ্গে একজন ব্যক্তির জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার জড়িয়ে রয়েছে ।
শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ আম আদমি পার্টিকে রাজনৈতিক ভাবে অনেকটাই অক্সিজেন দিল ৷ কারণ, কেজরিওয়াল বরাবর তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ৷ বিজেপি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাঁকে গ্রেফতার করিয়েছে বলেও বারবার তিনি অভিযোগ করেছেন ৷
কেজরিওয়ালকে আবগারী নীতির মামলার সঙ্গে যুক্ত একটি আর্থিক তছরুপ মামলায় গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ৷ সেই গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি । কেজরিওয়াল আদালতে দাবি করেন যে তাঁর গ্রেফতারির ফলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে ৷
বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চের এই মামলায় পর্যবেক্ষণ, গ্রেফতারের প্রয়োজনীয়তা ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মামলাগুলির সমানুপাতিকতার যে মতবাদ রয়েছে, যেখানে তদন্তকারী অফিসারদের গ্রেফতার করার জন্য অনেক বিচক্ষণতা দেওয়া হয়েছে, তা একটি বৃহত্তর বেঞ্চ দ্বারাই নির্ধারণ করা উচিত । শীর্ষ আদালত জোর দিয়ে জানিয়েছে যে এই প্রশ্নগুলি একটি বৃহত্তর বেঞ্চের দ্বারা গভীরভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন ।
সুপ্রিম কোর্টের রায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর আম আদমি পার্টির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিজয় । কারণ, কেজরিওয়াল বারবার দাবি করেছিলেন যে ইডি তাঁকে এই মামলায় মিথ্যাভাবে জড়িয়েছে । যদিও, দিল্লির আবগারী নীতি মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেটা আলাদা মামলা ৷ আবগারি নীতির মামলায় দুর্নীতি ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে 26 জুন সিবিআই কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে । ফলে জামিন পেলেও এখনই জেলের বাইরে আসতে পারবেন না তিনি ৷
বেঞ্চের পক্ষে আদেশ ঘোষণা করে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না জানিয়েছেন, ইডির মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন বলে আদালত কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিতে পারে না ৷ এই নিয়ে সিদ্ধান্ত তাঁকেই নিতে হবে ৷ বিচারপতি খান্না বলেন, “আমরা সচেতন যে অরবিন্দ কেজরিওয়াল একজন নির্বাচিত নেতা এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত…..আদালত একজন নির্বাচিত নেতাকে পদত্যাগ করার এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ না করার নির্দেশ দিতে পারে কি না, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান । আমরা এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের উপর ছেড়ে দিচ্ছি ৷”
গত 9 এপ্রিল দিল্লি হাইকোর্ট ইডির গ্রেফতারির বিরুদ্ধে কেজরিওয়ালের মামলা খারিজ করে দেয় ৷ তার পর তিনি এই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন ৷ সেই মামলাতেই শুক্রবার অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হল কেজরিওয়ালকে ৷ এর আগে লোকসভা ভোটে প্রচারের জন্য জামিন পেয়েছিলেন কেজরিওয়াল ৷ ভোট শেষ হতেই তিনি আত্মসমর্পণ করেন ৷
কেজরিওয়াল আম আদমি পার্টির তৃতীয় নেতা, যিনি দিল্লির আবগারী নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন । দিল্লির প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াকে এই মামলায় 2023 সালের 23 ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় ৷ তিনি এখনও তিহাড়ে বন্দি ৷ রাজ্যসভায় আপের সাংসদ সঞ্জয় সিং-ও গ্রেফতার হয়েছিলেন ৷ তবে তিনি গত 2 এপ্রিল জামিনে মুক্তি পান ।