নয়াদিল্লি, 17 অক্টোবর: কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে আত্মঘাতী স্বামী-স্ত্রী ৷ তাঁদের মাঝে দূরত্ব ছিল 250 কিলোমিটারের ৷ গত সোমবার রাতে আত্মঘাতী হন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট স্বামী ৷ মঙ্গলবার সকালে আগ্রা থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ ৷ আর গত মঙ্গলবার রাতে দিল্লিতে আত্মঘাতী হন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন স্ত্রী ৷ তাঁর দেহ উদ্ধার হয় ক্যান্টনমেন্টে আধিকারিকদের মেস থেকে ৷
স্ত্রী দেহের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ ৷ তাতে সেনা আধিকারিক পরিষ্কার জানিয়েছেন, তিনি চান, স্বামীর সঙ্গেই তাঁকে দাহ করা হোক ৷ যদিও স্বামীর দেহের কাছ থেকে এমন কোনও নোট পাওয়া যায়নি ৷
2022 সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় বায়ুসেনার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট দীনদয়াল দীপ (32) এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন রেনু তানওয়ারের বিয়ে হয়েছিল ৷ তাঁরা বায়ুসেনার ক্যাম্পাসেই থাকতেন ৷ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট দীনদয়াল দীপ আগ্রায় খেরিয়া বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পোস্টিং ছিলেন ৷
জানা গিয়েছে, সোমবার অর্থাৎ 14 অক্টোবর রাতে সবকিছু স্বাভাবিক ছিল ৷ দীনদয়াল সহকর্মীদের সঙ্গেই খাওয়াদাওয়া করেন ৷ সহকর্মীদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টাও হয় ৷ এরপর তিনি নিজের ঘরে শুতে চলে যান ৷ মঙ্গলবার সকালে অনেক বেলা হয়ে গেলেও তিনি ঘর থেকে বের হননি ৷ তাঁর ঘরের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি শুরু করে কোনও উত্তর না-পাওয়ায় দরজা ধাক্কা দিয়ে ভাঙা হয় ৷ সেখানে দীনদয়ালের অচেতন দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায় ৷ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেওয়া হয় ৷ পরে জানা যায় দীনদয়াল আত্মহত্যা করেছেন ৷ সাহাগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় ৷
আগ্রার এসিপি মায়াঙ্ক তিওয়ারি জানান, সোমবার রাতে খাবার খেয়ে শুতে গিয়েছিলেন দীনদয়াল দীপ ৷ মঙ্গলবার সকালে এক কর্মী ডাকাডাকি করলেও কোনও সাড়া না পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান ৷ এরপর দরজা ভেঙে দীপের দেহ উদ্ধার হয় ৷ ডিসিপি (শহর) সুরজ রায় জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতেও লেফটেন্যান্ট তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবহার করেছেন ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, 14 অক্টোবরই দীনদয়ালের স্ত্রী তথা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন রেনু তানওয়ার দিল্লি গিয়েছিলেন তাঁর মায়ের চিকিৎসার জন্য ৷ তিনি আগ্রায় মিলিটারি নার্সিং সার্ভিসের ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত ছিলেন ৷ মঙ্গলবার সকালে আগ্রায় তাঁর স্বামী দীনদয়ালের দেহ উদ্ধারের পর সাহাগঞ্জ থানার পুলিশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ক্যাপ্টেন ফোন তোলেননি ৷
পরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির ডিসিপি সুরেন্দ্র কুমার চৌধরী এসিপি তিওয়ারিকে ক্যাপ্টেন রেনু তানওয়ারের মৃত্যুর খবরটি জানান ৷ দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের পোলো রোডে সেনা আধিকারিকদের মেসের কনস্টেবল দীনেশ কুমার পুলিশকে খবরটি দেন ৷ রেনু তানওয়ার যে ঘরে ছিলেন, তার দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা ছিল ৷ দরজা ভেঙে ক্যাপ্টেনের দেহ উদ্ধার করা হয় ৷ পুলিশ তাঁর বাবাকে মেয়ের মৃত্যুর খবর দেয় ৷
দিল্লি পুলিশ তাঁর দেহের কাছ থেকে যে সুইসাইড নোট পেয়েছে, তাতে লেখা ছিল, তিনি চান তাঁকে তাঁর স্বামীর সঙ্গেই দাহ করা হোক ৷ ক্যাপ্টেন লিখেছেন, 'আমার হাতটি স্বামীর হাতের উপর রেখো ৷' পুলিশ ক্যাপ্টেন তানওয়ারের পরিবার এবং বায়ুসেনার আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, তিনি মাকে নিয়ে দিল্লি এইমসে এসেছিলেন ৷ তাঁর সঙ্গে তাঁর ভাই ছিল ৷ তিনি যখন স্বামীর মৃত্যুর খবর পান, তখন মা ও ভাই হাসপাতালের ভিতরে ছিলেন ৷ স্বভাবতই খবর পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন রেনু ৷ কেন আত্মহত্যা করলেন দীনদয়াল ? তা জানতে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত ৷
(আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয় ৷ যদি আপনার মধ্যে কখনও আত্মহত্যার চিন্তা মাথাচাড়া দেয় বা আপনার কোনও বন্ধু বা পরিচিত এই সমস্যায় জর্জরিত হন, তাহলে ভেঙে পড়বেন না। জানবেন, এমন কেউ আছে যে আপনার যন্ত্রণা, আপনার হতাশা ভাগ করে নিতে সদা-প্রস্তুত। আপনার পাশে দাঁড়াতে তৎপর। সাহায্য পেতে দিনের যে কোনও সময়ে 044-24640050 এই নম্বরে কল করুন স্নেহা ফাউন্ডেশনে। টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সের হেল্পলাইন নম্বরেও (9152987821) কল করতে পারেন। এখানে ফোন করতে হবে সোমবার থেকে শনিবার সকাল 8টা থেকে রাত 10টার মধ্যে।)