লাহুল স্পিতি, 19 এপ্রিল: কল্পনা করুন যে প্রথমবার একটি গ্রামে একটি মোবাইল ফোন বেজে ওঠে এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী গ্রামবাসীদের ফোন করে অভিনন্দন জানান ৷ শুধু তাই নয়, গ্রামবাসীর খোঁজখবর নেন এবং প্রায় 15 মিনিট গল্প করেন ।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য়িই এমন ঘটনা ঘটেছে হিমাচল প্রদেশের একটি গ্রামের মানুষের সঙ্গে ৷ এই গ্রামটি হল লাহুল স্পিতি জেলার গিউ গ্রাম । যেখানে আজ পর্যন্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে পারেনি । কয়েক মাস আগে গ্রামে মোবাইল টাওয়ার বসানো হয় ৷ এখন মোবাইল নেটওয়ার্কও পৌঁছে গিয়েছে । গ্রামে নেটওয়ার্ক আসার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামের এক জন শিক্ষককে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । দোরজে নামের ওই শিক্ষক ফোনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন ৷ আরও অনেকের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর কথা বলার সুযোগ করে দেন ৷ এখন এই 14 মিনিটের ফোনকল নিয়েই সর্বত্র আলোচনা চলছে ৷
প্রধানমন্ত্রী ফোনে প্রথমে দোরজের খোঁজ করেন ৷ তার পর বলেন, ‘‘আপনার গ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্ক এসেছে । দীপাবলির সময় এসে এই সমস্যার কথা জানতে পারি । না জানিয়ে এখানে আসার পরও মানুষ অনেক সম্মান করেছিল । গ্রামের মায়েরা মোবাইল ফোনের কথা জানলেও নেটওয়ার্কের অভাবে সমস্যায় পড়েন । এখন নেটওয়ার্ক এসে যাওয়ায় গ্রামের মানুষ তাঁদের পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে ।’’
হিমাচল প্রদেশের কিন্নর ও লাহুল স্পিতি জেলার সীমান্তে প্রায় 11 হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রামে কোনও মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না । গিউ গ্রামের মানুষকে নেটওয়ার্কের সন্ধানে প্রায় 7 থেকে 8 কিলোমিটার দূরে যেতে হত ৷ গত বছর দীপাবলি উদযাপন করতে কিন্নর পৌঁছেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি । ওই সময় গ্রামবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই সমস্যার কথা তুলে ধরেন ৷ ফোনালাপের সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই কথা জানিয়েছেন ৷
মাস্টার দোরজেও গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, "আগে মোবাইল নেটওয়ার্ক পেতে 8 কিলোমিটার দূরের সামদোতে যেতে হতো । আমরা বিশ্বাস করতে পারি না যে আমাদের গ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্ক এসেছে । আপনার পরিদর্শনের পর মাত্র 23 দিনে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন ও জমি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে ।’’
মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক এলে কী লাভ হবে, তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী । যার উত্তরে দোরজে বলেন, "এখন আমরা আমাদের সন্তানদের আরও ভালো তথ্য দিতে সক্ষম হব, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যাবে । আমরা আমাদের আত্মীয়স্বজন যারা বাড়ি থেকে দূরে আছেন, তাদের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারব এবং স্থানীয় পর্যটনকেও প্রচার করা হবে ।"
লাহুল স্পিতি শুধুমাত্র হিমাচলের নয়, দেশের অন্যতম দুর্গম জেলা । তুষারপাতের মরসুমে এই জেলা বছরের প্রায় 6 মাস দেশ ও বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকত । অটল টানেল তৈরির পর মানুষের অনেক সুবিধা হয়েছে । শীতকালে এই এলাকার তাপমাত্রা মাইনাস 30 ডিগ্রিতে নেমে যায় । সারা দেশে গ্রীষ্মকাল থাকলেও এই দিনগুলোতে তাপমাত্রা মাইনাস 4 থেকে মাইনাস 5 ডিগ্রি সেলসিয়াস । মোবাইল নেটওয়ার্কের অভাবে, গিউয়ের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল সংযোগের অভাব গ্রামবাসীদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে । কিন্তু এখন গিউ গ্রাম এখন মোবাইল নেটওয়ার্কে যুক্ত । 18 হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত গিউ গ্রামে প্রথম ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । সেই সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি সেখানে উপস্থিত গ্রামবাসীদের সঙ্গেও কথা বলেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা যখন 2014 সালে সরকার গঠন করি, তখন লক্ষ্য ছিল প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়া । ভাইব্রেন্ট ভিলেজ কর্মসূচির আওতায় সরকার প্রান্তিক এলাকায় উন্নয়নের প্রয়াস চালিয়েছে । আগের সরকারগুলো এসব কিছুই করেনি । জনগণের জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পর আমাদের সরকার এবার জীবনযাত্রার মানের দিকে নজর দেবে । এতে প্রত্যন্ত অঞ্চল, দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা উপকৃত হবে ।’’
দোরজে বলেন, ‘‘দুর্গম এলাকায় সংযোগ থাকা খুবই জরুরি । তুষারপাত, বৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যেকোনও দুর্ঘটনার সময় মোবাইল সংযোগ না থাকায় মানুষের সমস্যা বেড়ে যায় । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও গিউয়ের জনগণকে লাহুল স্পিতিতে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।’’
আরও পড়ুন: