ETV Bharat / bharat

নেপথ্যে উত্তর-দক্ষিণ বৈষম্য, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি'র হাতিয়ার জনগণনা - CONGRESS QUESTIONS ON CENSUS

মোদির ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় জনগণনায় উঠে আসতে চলেছে ধর্মীয় উপসম্প্রদায় ৷ খুব শীঘ্রই জনগণনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ৷

Census to held soon, says Congress leader Jairam Ramesh
জনগণনায় লুকিয়ে রাজ্যের শক্তি ? (ইটিভি ভারত)
author img

By PTI

Published : Oct 29, 2024, 8:16 PM IST

নয়াদিল্লি, 29 অক্টোবর: দীর্ঘ দিনের জনগণনার দাবি বাস্তবায়িত হতে পারে ৷ সেই ইঙ্গিত মিলেছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর একটি নোটিশ জারি করে রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সেনসাস কমিশনারের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন ৷ এই পদক্ষেপে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ ৷ বিরোধীদের পরাস্ত করতেই কি এই জনগণনা ? যাকে হাতিয়ার করে আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে চলেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ শিবির ?

সোমবার বিকেলে কংগ্রেস নেতা এক্স হ্যান্ডেলে জানান, 2021 সালে যে জনগণনা হওয়ার কথা ছিল, তা হয়তো খুব শীঘ্রই শুরু হবে ৷ তিনি লেখেন, রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সেনসাস কমিশনারের মেয়াদ বৃদ্ধির নোটিশ প্রকাশিত হয়েছে ৷ সরকারি নোটিশে জানানো হয়েছে, আইএএস মৃত্যুঞ্জয় কুমার নারায়ণের মেয়াদ 6 ডিসেম্বর, 2024 তারিখে শেষ হয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু দেশের রাষ্ট্রপতি আনন্দের সঙ্গে তাঁর এই সময়সীমা বাড়িয়েছেন ৷ 2026 সালের 4 অগস্ট পর্যন্ত অথবা আগামী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত তাঁর মেয়াদের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হল ৷

এই প্রেক্ষিতেই কংগ্রেস নেতা জানান যে, দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধীরা যে জনগণনার দাবি জানিয়েছে, তা নিয়ে এবার সব রাজনৈতিক দলের বৈঠকে বসা উচিত ৷ কংগ্রেস সব দলকেই আহ্বান জানাচ্ছে ৷ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রশ্ন করেন, আগামী জনগণনা নিয়ে দু'টি জরুরি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার ৷ কংগ্রেসের তরফে তাঁর কথায়, "আগামী জনগণনায় কি সব জাতের, ধর্মীয় উপসম্প্রদায়ের বিস্তারিত তথ্য থাকবে ? তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্ন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি রাজ্যের শক্তির বিচার করতে কি এই জনগণনা ব্যবহার করা হবে ?"

জাতভিত্তিক জনগণনা হবে ?

'ইন্ডিয়া' শিবিরের একাধিক দল জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলেছে ৷ রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ প্রশ্ন করেন, তফশিলি জাতি ও উপজাতি-সহ দেশের সব জাতের, ধর্মীয় উপসম্প্রদায়ের বিস্তারিত তথ্য এই নতুন জনগণনায় থাকবে ? 1951 সালের পর থেকে প্রতিটি জনগণনায় সেই হিসেবনিকেশ ছিল ৷ ভারতের সংবিধান অনুযায়ী জাতভিত্তিক জনগণনার সব দায় কেন্দ্রীয় সরকারের ৷

জনগণনা কি পরবর্তী লোকসভা ভোটে বিজেপির হাতিয়ার ?

পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন হবে 2029 সালে ৷ সেই সময় নতুন জনগণনার তথ্য দিয়েই লোকসভায় প্রতিটি রাজ্যের শক্তি বিচার হবে ? সংবিধানের 82 নম্বর অনুচ্ছেদে, 2026 সালের পর হওয়া প্রথম জনগণনা এবং তার ফলাফলে পুনর্বিন্যাসের কথা বলা হয়েছে ৷ যে রাজ্যগুলি পরিবার পরিকল্পনায় পথপ্রদর্শক, সেই রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে এই জনগণনা হাতিয়ার হয়ে উঠবে না তো ?

সম্প্রতি এই এক প্রশ্ন তুলেছেন এনডিএ সরকারের শরিক দল তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু ৷ জনগণনার ভিত্তিতেই অঞ্চল পুনর্বিন্যাস করা হয় ৷ অর্থাৎ এলাকার জনসংখ্যা অনুযায়ী লোকসভা আসন তৈরি হয় ৷ রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, জনসংখ্যার নিরিখে উত্তর ভারত তুলনায় এগিয়ে ৷ দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে উত্তরের এই ব্যবধান ক্রমশ বেড়ে চলেছে ৷ এনিয়ে বিজেপি শাসিত ও অ-বিজেপি রাজ্যগুলির মধ্যে বিতর্ক পুরনো ৷

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, নয়া জনগণনায় উত্তর ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি হলে পুনর্বিন্যাসে নয়া লোকসভা আসন গঠিত হবে ৷ অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে কম জনসংখ্যার ফলে কমতে পারে লোকসভা আসন ৷ স্বভাবত, এর ফলে সংসদে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে জনপ্রতিনিধির ব্যবধান পরিলক্ষিত হবে ৷ আরও স্পষ্ট করে বললে, উত্তর ভারত থেকে বিজেপি শাসিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ৷ অন্যদিকে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের অ-বিজেপি শাসিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কমে যাবে ৷ যার প্রভূত প্রভাব পড়বে কেন্দ্রীয় সরকার গড়ার ক্ষেত্রে ৷

সম্প্রতি 19 অক্টোবর অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন ৷ তিনি জানিয়েছেন, সরকার পরিবারগুলিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে ৷ দুইয়ের বেশি সন্তান আছে, এমন পরিবারগুলি আঞ্চলিক ভোটে অংশ নিতে পারবে না ৷ এই আইন বাতিল করেছে চন্দ্রবাবু নাইডুর সরকার ৷ এবার জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে ৷ তাতে যাঁদের কমপক্ষে দু'টি সন্তান রয়েছে, তাঁরাই শুরু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে ৷ এই তত্ত্বে সওয়াল করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও ৷

এর পাশাপাশি গত বছর সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হয়েছে ৷ এই আইন বাস্তবায়িত হলে সংসদে 33 শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে ৷ এরই সঙ্গে দ্বিতীয় বিজেপি সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, জনগণনা হওয়ার পর এই আইন কার্যকর হবে ৷ অর্থাৎ 2029 সালের নির্বাচনে আইন বাস্তাবায়িত হতে পারে ৷ তাই জনগণনা যদি হয়, তাহলে তা প্রভাব ফেলবে মহিলা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ৷

নয়াদিল্লি, 29 অক্টোবর: দীর্ঘ দিনের জনগণনার দাবি বাস্তবায়িত হতে পারে ৷ সেই ইঙ্গিত মিলেছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর একটি নোটিশ জারি করে রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সেনসাস কমিশনারের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন ৷ এই পদক্ষেপে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ ৷ বিরোধীদের পরাস্ত করতেই কি এই জনগণনা ? যাকে হাতিয়ার করে আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে চলেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ শিবির ?

সোমবার বিকেলে কংগ্রেস নেতা এক্স হ্যান্ডেলে জানান, 2021 সালে যে জনগণনা হওয়ার কথা ছিল, তা হয়তো খুব শীঘ্রই শুরু হবে ৷ তিনি লেখেন, রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সেনসাস কমিশনারের মেয়াদ বৃদ্ধির নোটিশ প্রকাশিত হয়েছে ৷ সরকারি নোটিশে জানানো হয়েছে, আইএএস মৃত্যুঞ্জয় কুমার নারায়ণের মেয়াদ 6 ডিসেম্বর, 2024 তারিখে শেষ হয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু দেশের রাষ্ট্রপতি আনন্দের সঙ্গে তাঁর এই সময়সীমা বাড়িয়েছেন ৷ 2026 সালের 4 অগস্ট পর্যন্ত অথবা আগামী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত তাঁর মেয়াদের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হল ৷

এই প্রেক্ষিতেই কংগ্রেস নেতা জানান যে, দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধীরা যে জনগণনার দাবি জানিয়েছে, তা নিয়ে এবার সব রাজনৈতিক দলের বৈঠকে বসা উচিত ৷ কংগ্রেস সব দলকেই আহ্বান জানাচ্ছে ৷ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রশ্ন করেন, আগামী জনগণনা নিয়ে দু'টি জরুরি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার ৷ কংগ্রেসের তরফে তাঁর কথায়, "আগামী জনগণনায় কি সব জাতের, ধর্মীয় উপসম্প্রদায়ের বিস্তারিত তথ্য থাকবে ? তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্ন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি রাজ্যের শক্তির বিচার করতে কি এই জনগণনা ব্যবহার করা হবে ?"

জাতভিত্তিক জনগণনা হবে ?

'ইন্ডিয়া' শিবিরের একাধিক দল জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলেছে ৷ রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ প্রশ্ন করেন, তফশিলি জাতি ও উপজাতি-সহ দেশের সব জাতের, ধর্মীয় উপসম্প্রদায়ের বিস্তারিত তথ্য এই নতুন জনগণনায় থাকবে ? 1951 সালের পর থেকে প্রতিটি জনগণনায় সেই হিসেবনিকেশ ছিল ৷ ভারতের সংবিধান অনুযায়ী জাতভিত্তিক জনগণনার সব দায় কেন্দ্রীয় সরকারের ৷

জনগণনা কি পরবর্তী লোকসভা ভোটে বিজেপির হাতিয়ার ?

পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন হবে 2029 সালে ৷ সেই সময় নতুন জনগণনার তথ্য দিয়েই লোকসভায় প্রতিটি রাজ্যের শক্তি বিচার হবে ? সংবিধানের 82 নম্বর অনুচ্ছেদে, 2026 সালের পর হওয়া প্রথম জনগণনা এবং তার ফলাফলে পুনর্বিন্যাসের কথা বলা হয়েছে ৷ যে রাজ্যগুলি পরিবার পরিকল্পনায় পথপ্রদর্শক, সেই রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে এই জনগণনা হাতিয়ার হয়ে উঠবে না তো ?

সম্প্রতি এই এক প্রশ্ন তুলেছেন এনডিএ সরকারের শরিক দল তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু ৷ জনগণনার ভিত্তিতেই অঞ্চল পুনর্বিন্যাস করা হয় ৷ অর্থাৎ এলাকার জনসংখ্যা অনুযায়ী লোকসভা আসন তৈরি হয় ৷ রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, জনসংখ্যার নিরিখে উত্তর ভারত তুলনায় এগিয়ে ৷ দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে উত্তরের এই ব্যবধান ক্রমশ বেড়ে চলেছে ৷ এনিয়ে বিজেপি শাসিত ও অ-বিজেপি রাজ্যগুলির মধ্যে বিতর্ক পুরনো ৷

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, নয়া জনগণনায় উত্তর ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি হলে পুনর্বিন্যাসে নয়া লোকসভা আসন গঠিত হবে ৷ অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে কম জনসংখ্যার ফলে কমতে পারে লোকসভা আসন ৷ স্বভাবত, এর ফলে সংসদে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে জনপ্রতিনিধির ব্যবধান পরিলক্ষিত হবে ৷ আরও স্পষ্ট করে বললে, উত্তর ভারত থেকে বিজেপি শাসিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ৷ অন্যদিকে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের অ-বিজেপি শাসিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কমে যাবে ৷ যার প্রভূত প্রভাব পড়বে কেন্দ্রীয় সরকার গড়ার ক্ষেত্রে ৷

সম্প্রতি 19 অক্টোবর অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন ৷ তিনি জানিয়েছেন, সরকার পরিবারগুলিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে ৷ দুইয়ের বেশি সন্তান আছে, এমন পরিবারগুলি আঞ্চলিক ভোটে অংশ নিতে পারবে না ৷ এই আইন বাতিল করেছে চন্দ্রবাবু নাইডুর সরকার ৷ এবার জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে ৷ তাতে যাঁদের কমপক্ষে দু'টি সন্তান রয়েছে, তাঁরাই শুরু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে ৷ এই তত্ত্বে সওয়াল করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও ৷

এর পাশাপাশি গত বছর সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হয়েছে ৷ এই আইন বাস্তবায়িত হলে সংসদে 33 শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে ৷ এরই সঙ্গে দ্বিতীয় বিজেপি সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, জনগণনা হওয়ার পর এই আইন কার্যকর হবে ৷ অর্থাৎ 2029 সালের নির্বাচনে আইন বাস্তাবায়িত হতে পারে ৷ তাই জনগণনা যদি হয়, তাহলে তা প্রভাব ফেলবে মহিলা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.