রাঁচি, 31 জানুয়ারি: ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে নয়া নাটক ৷ ইডি'র জিজ্ঞাসাবাদের মাঝেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়লেন হেমন্ত সোরেন ৷ এরপরই তাঁকে সরকারিভাবে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের দাবি, পরিবহণমন্ত্রী চম্পাই সোরেনকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে ৷ দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর বুধবার সন্ধ্যায় শাসক জোটের বিধায়কদের নিয়ে রাজভবনে যান হেমন্ত ৷ সেখানেই রাজ্যপালের হাতে পদত্যাগ পত্র তুলে দেন শিবু-তনয় ৷ এদিকে, শাসক জোটের দাবি রাজ্যপাল ইতিমধ্যেই ইস্তফা পত্র গ্রহণ করেছেন।
জমি কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত একটি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের প্রায় সাত ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পরে হোমন্ত সোরেন এদিন রাতে রাজভবনে রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণনের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে খবর। রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি রাজেশ ঠাকুর বলেন, "হেমন্ত সোরেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ক্ষমতাসীন জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোট নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জেএমএম নেতা চম্পাই সোরেনের নাম প্রস্তাব করেছে ৷" অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার লোকসভার সাংসদ মহুয়া মাঝির দাবি করেন, ইডি'র আধিকারিকরাও হেমন্তের সঙ্গেই রাজভবনে গিয়েছিলেন। ইস্তফা-পর্ব মিটতেই হেমন্তকে গ্রেফতার করে ইডি।
হোমন্ত সোরেন গ্রোফতার হতেই বিজোপি বিরোধিতায় সরব হয়েছে কংগ্রেস ৷ এদিন রাতে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি ৷ তিনি লিখেছেন, "ইডি, সিবিআই, আইটি এখন আর সরকারি সংস্থা নয়, তারা এখন বিজেপির 'বিরোধী সেল নির্মূল'-এ পরিনত হয়েছে ৷ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বিজেপি নিজেই ক্ষমতার আবেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার প্রচার চালাচ্ছে।"
ঝাড়খণ্ডের পরিবহন মন্ত্রী চম্পাই সোরেন জানিয়েছেন, তিনি 47 জন বিধায়কের সমর্থনে ঝাড়খণ্ডে নতুন সরকার গঠনের দাবি করেছেন রাজ্যপালের কাছে। তাঁর কথায়, "আমরা 47 জন বিধায়কের সমর্থনে নতুন সরকার গঠনের দাবি করেছি ৷" রাজ্যের পরিষদীয়মন্ত্রী আলমগীর আলম বলেন, "আমরা 43 জন বিধায়কের স্বাক্ষরিত একটি সমর্থন পত্র রাজ্যপালের কাছে হস্তান্তর করেছি ৷ তিনি আমাদের ফোন করার আশ্বাস দিয়েছেন ৷" পরিষদীয়মন্ত্রী আলমগীর আলম, শ্রমমন্ত্রী সত্যানন্দ ভোক্তা, চম্পাই সোরেন এবং বিধায়ক প্রদীপ যাদব এবং বিনোদ কুমার সিং এদিন হেমন্ত সোরেনের সঙ্গেই রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণনের সঙ্গে দেখা করেন ৷
এর আগে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় বুধবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বাড়িতে পৌঁছয় ইডি ৷ এদিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর রাঁচির বাড়িতে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি দল ৷ জমি কেলেঙ্কারি মামলায় নাম জড়িয়েছে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর ৷ সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তাঁর বাড়িতে যায় ইডি ৷ অশান্তি এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটসাঁট করা হয়েছে ৷
এদিকে, সূত্রের খবর, অর্থসচিব প্রশান্ত কুমারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করেছে ঝাড়খণ্ড সরকার ৷ রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে এবং কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তিন সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠন করেছে ঝাড়খণ্ড সরকার ৷ 144 ধারা জারি করা হয়েছে হেমন্ত সোরেনের বাড়ির আশেপাশে ৷ বুধবার সকাল 9টা থেকে রাত 10 টা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি, রাজভবন ও দোরান্ডার ইডি অফিসের এলাকায় জমায়েতে না-করার কথা বলা হয়েছে ৷
নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসাবে, ইডি অফিস এবং মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে ব্যারিকেড করা হয়েছে ৷ এক হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন পুলিশের অন্যতম শীর্ষ কর্তা ৷ যদিও ডিজিপি অজয় কুমার সিং মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন যে অতিরিক্ত 7 হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হতে পারে ৷ ঝাড়খণ্ডজুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রবিবার মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের দিল্লির বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি ৷ এরইমধ্যে রবিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন 'উধাও' হয়ে গিয়েছেন বলে দাবি করে বিজেপি ৷ মঙ্গলবার তাঁকে রাঁচিতে দেখা যায় ৷ সড়কপথে তিনি নয়াদিল্লি থেকে ঝাড়খণ্ডে ফিরেছেন বলে দাবি করা হয় ৷ রাঁচিতে ফিরে বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক সারেন তিনি ৷ এরপরই বুধবার তার বাড়িতে পৌঁছে যান ইডি আধিকারিকরা ৷ প্রসঙ্গত, 20 জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ইডির তদন্তকারীরা সোরেনের জিজ্ঞাসাবাদ ও বাড়িতে তল্লাশির সময় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সদস্যরা ৷ তাই এবার আর কোনও ফাঁক রাখতে চাননি ইডি আধিকারিকরা ৷ তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জোর দেওয়া হয়েছে ৷
আরও পড়ুন
হেমন্ত সোরেনের বাড়িতে ইডি আধিকারিকরা, কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাঁচি
বুধেই বয়ান রেকর্ড হেমন্তের, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির এলাকায় 144 ধারা জারি
'আমি তোমাদেরই হৃদয়ে আছি', রাঁচিতে ফিরে বললেন 'বেপাত্তা' সোরেন