নয়াদিল্লি, 25 জুলাই: বিহারের কাটিহার, আরারিয়া, কিষাণগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদ নিয়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করার দাবি তুলল বিজেপি ৷ বৃহস্পতিবার লোকসভায় বাজেট বিতর্কে অংশ নেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে ৷
এদিন বলেন, "বাংলার মুর্শিদাবাদ, মালদা থেকে লোকেরা এসে ঝাড়খণ্ডের হিন্দুদের উপর অত্যাচার করছে ৷ ঝাড়খণ্ড পুলিশ কিছুই করতে পারছে না ৷ এই পরিস্থিতিতে বিহারের কাটিহার, আরারিয়া, কিষাণগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদ নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হোক ৷" লোকসভা কক্ষে এর তীব্র প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল ৷
এনিয়ে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, আমাদের রাজ্যে এনআরসি লাগু করা হবে না ৷ আজ নিশিকান্ত দুবে কোথায় কীভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৷ আমরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ করেছি ৷ লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি যে, তার বক্তব্য লোকসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয় ৷"
#WATCH | On BJP MP Nishikant Dubey's statement in Lok Sabha, TMC MP Sudip Bandyopadhyay says, " our cm mamata banerjee has categorically said - we will not allow these issues (nrc) to be implemented...today, nishikant dubey was raising the question of hindu-muslim...we lodged a… https://t.co/3G3dIBi4e9 pic.twitter.com/vBJJSA3yWt
— ANI (@ANI) July 25, 2024
ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা কেন্দ্রের সাংসদ নিশিকান্তের দাবি, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে ৷ তিনি বলেন, "আমাদের এখানে আদিবাসী কোটায় যে মহিলারা লোকসভা নির্বাচনে লড়ছেন, তাঁদের স্বামীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৷"
রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি নিজের গোড্ডা লোকসভা কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরেন ৷ দুবে বলেন, "মধুপুর বিধানসভায় 266টি বুথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বেড়েছে 117 শতাংশ ৷ ঝাড়খণ্ডে কমপক্ষে এমন 25টি বিধানসভা আছে, যেখানে জনসংখ্যা 110 শতাংশ, 123 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এটা দুশ্চিন্তার ৷"
নিশিকান্ত বলেন, "ভারতে অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ হয়ে ঝাড়খণ্ডে আসছে ৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে ৷ তারা ঝাড়খণ্ডে এসে আমাদের লোকদের তাড়িয়ে দিচ্ছে ৷ এর ফলে গ্রামের পর গ্রাম ছেড়ে হিন্দুরা চলে যাচ্ছে ৷ সাঁওতাল আদিবাসীদের জনসংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে ৷" এই গুরুতর তথ্যগুলি যদি ভুল হয়, তাহলে তিনি সাংসদ পদে ইস্তফা দেবেন বলেও দাবি করেছেন নিশিকান্ত দুবে ৷
এর সমাধান হিসেবে তিনি অধ্যক্ষকে অনুরোধ করেন, "পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদা এবং বিহারের কাটিহার, আরারিয়া, কিষাণগঞ্জ, পুরো সাঁওতাল পরগনা নিয়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হোক ৷" সংখ্যালঘু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সপক্ষে তিনি ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টের একটি অর্ডার কপি তুলে ধরে বলেন, "ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট বলেছে যে ঝাড়খণ্ডে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে ৷ এতে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত ৷ না হলে হিন্দুদের অস্তিত্বই থাকবে না ৷ এনআরসি লাগু করুন ৷ আর কিছু না হলেও একটি সংসদীয় কমিটিকে সেখানে পাঠান ৷ সেই কমিটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি রাখুন ৷ এর সঙ্গে 2010 সালের ল কমিশনের রিপোর্ট লাগু করুন ৷ ধর্মান্তর, বিয়ের জন্য অনুমতি লাগবে, এই নিয়ম চালু করুন ৷"
প্রসঙ্গত, বুধবার উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ এনিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে এই আবেদন জানান ৷ আরেকদিকে গ্রেটার কোচবিহারকে পৃথক রাজ্য করার দাবি তুলেছেন আরেক বিজেপি সাংসদ অনন্ত মহারাজ ৷
উত্তরবঙ্গ ভাগ করা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল ৷ এদিন সকালে সংসদ চত্বরে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "উত্তরবঙ্গ বিভাজন কখনও হবে না ৷ সুভাষ ঘিসিংও দার্জিলিংকে গোর্খাল্যান্ডের করার দাবি তুলেছিলেন ৷ তখন পশ্চিমবঙ্গবাসী কীভাবে প্রতিবাদ করেছিল, তা সবাই দেখেছে ৷ এখন সুকান্ত মজুমদার উত্তরবঙ্গকে ভাগ করার দাবি কেন তুলছেন ? বাংলার মানুষ কোনওদিনই এই দাবি মেনে নেবে না ৷"
একই সুরে সুকান্ত মজুমদারের উত্তরবঙ্গ ভাগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের প্রাক্তন মুখপাত্র কুণাল ঘোষও বলেন, "এটা একটা ভিত্তিহীন ধারণা ৷ একটাই উদ্দেশ্য পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করা ৷ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বিজেপি খুব বাজেভাবে হেরেছে ৷ বিজেপির আসন সংখ্যা কমে গিয়েছে ৷ সুকান্ত মজুমদার এই ইস্যুটা ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন ৷"