প্রয়াগরাজ, 13 জানুয়ারি: মহাকুম্ভে অংশ নিতে প্রয়াগরাজে পৌঁছলেন আমেরিকার ব্যবসায়ী এবং অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জোবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল জোবস ৷ স্বামীর মতো হিন্দুধর্মের প্রতি তাঁর বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। স্টিভ জোবস বাবা নিব করোরিকে নিজের গুরু বলে মনে করতেন । তিনি নিব করোরি বাবার কাইঞ্চি ধামও বহুবার পরিদর্শন করেছিলেন।
কথিত আছে, সেখানেই করোরি বাবা স্টিভকে আশীর্বাদ হিসেবে একটি কাটা আপেল দিয়েছিলেন ৷ এই কারণে স্টিভ তাঁর কোম্পানির লোগো হিসেবে একটি কাটা আপেল রাখেন ৷ স্বামীর মতো লরেন পাওয়েলও হিন্দুধর্মে গভীর বিশ্বাস রাখেন। আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর স্বামী কৈলাশানন্দ গিরির কাছে দীক্ষাও নিয়েছেন তিনি । প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভে তিনি নিরঞ্জনী আখড়ায় 10 দিন কাটাবেন। ক্যাম্পে লরেন পাওয়েলের থাকা ও নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তাঁর গুরু আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর স্বামী কৈলাশানন্দ গিরির শিবিরে তিনি ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা ও সনাতন সংস্কৃতিকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার সুযোগ পাবেন । তাঁর এই যাত্রা ভারতীয় সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ প্রতিফলিত করে । 10 দিন ক্যাম্পে অবস্থান করে তিনি ধর্মীয় কাজে অংশ নেবেন ।
অন্যদিকে, মহাকুম্ভে এসেছেন আমেরিকার নিউ মেক্সিকোর বাসিন্দা মাইকেল । তিনি একসময় মার্কিন সেনাবাহিনীতে সৈনিক ছিলেন । ছেলের মৃত্যুতে তিনি এতটাই বিধ্বস্ত হয়েছিলেন যে সবকিছু ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । এরপর তিনি ভারতে যান । তখন থেকেই শুরু হয় তাঁর আধ্যাত্মিক যাত্রা । সনাতন ধর্মে যোগদানের পর তিনি মাইকেল থেকে বাবা মোক্ষপুরী হন ।
বাবা মোক্ষপুরীর কথায়, "আমিও একসময় সাধারণ মানুষ ছিলাম । পরিবার ও স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে হয়েছে । আমি সবসময় ভ্রমণ পছন্দ করতাম । সেনাবাহিনীতেও যোগ দিয়েছিলাম ৷ কিন্তু একটা সময় এসেছিল যখন আমি বুঝতে পারি জীবনে কিছুই স্থায়ী নয়। তখনই আমি পরিত্রাণের সন্ধানে এই অবিরাম যাত্রা শুরু করি । জুনা আখড়ার সঙ্গে যুক্ত হই । সনাতন ধর্ম প্রচারেই সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছি ।"
আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী বাবা মোক্ষপুরী 2000 সালে তার পরিবার (স্ত্রী এবং পুত্র) নিয়ে প্রথমবার ভারতে আসেন । তিনি জানান যে, এই যাত্রাটি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা । এই সময় তিনি ধ্যান এবং যোগব্যায়াম শিখেছিলেন । এটি ছিল তাঁর আধ্যাত্মিক জাগরণের সূচনা, যা তিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি আহ্বান বলে মনে করেন ।
বাবা মোক্ষপুরীর জীবনে বড় পরিবর্তন আসে যখন তাঁর ছেলের অকাল মৃত্যু হয় । তিনি বলেছিলেন যে,"এই দুঃখজনক ঘটনাটি আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে জীবনে কিছুই স্থায়ী নয় । এই সময়ে, আমি ধ্যান এবং যোগব্যায়ামকে আমার আশ্রয় বানিয়েছিলাম ৷ যা আমাকে এই কঠিন সময় থেকে বের করে এনেছিল ।"
বাবা মোক্ষপুরী এখন ভারতীয় সংস্কৃতি ও সনাতন ধর্মের শিক্ষা প্রচারের জন্য বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করছেন । 2016 সালে উজ্জয়িন কুম্ভের পর, তিনি প্রতি মাসে কুম্ভে অংশগ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন । তিনি বিশ্বাস করেন যে, এই ধরনের মহান ঐতিহ্য শুধুমাত্র ভারতে সম্ভব । বাবা মোক্ষপুরী তাঁর আধ্যাত্মিক যাত্রায় নিব করোরি বাবার প্রভাবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন । তিনি জানান যে, নিম করোলি বাবার আশ্রমে ধ্যান ও ভক্তির শক্তি তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল । সেখানে যাওয়ার পর তাঁর মনে হল বাবাই যেন হনুমানের রূপ । এই অভিজ্ঞতা তার জীবনে ভক্তি, ধ্যান এবং যোগের প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করে ।
বাবা মোক্ষপুরী, সনাতনের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত ৷ তিনি পাশ্চাত্য জীবনধারা ত্যাগ করে ধ্যান ও জ্ঞানার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন । এখন তিনি নিউ মেক্সিকোতে একটি আশ্রম খোলার পরিকল্পনা করছেন ৷ যেখান থেকে তিনি ভারতীয় দর্শন এবং যোগব্যায়াম ছড়িয়ে দেবেন । যা সনাতন ধর্মকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ।