হায়দরাবাদ: দাম্পত্য জীবন আরও সুন্দর ও সুখময় হয়ে ওঠে খুদে সদস্যের প্রবেশে ৷ সাধারণত গর্ভাবস্থার মেয়াদ ধরা হয় 40 সপ্তাহ ৷ ভ্রূণ অবস্থা থেকে মাতৃজঠরে একটু একটু করে বেড়ে ওঠে শিশুটি ৷ কিন্তু সব ক্ষেত্রেই যে 40 সপ্তাহ পার করে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে তা হয় না ৷ অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে ৷ 37 সপ্তাহের আগে কোনও সন্তানের জন্ম হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাঁকে 'প্রি-ম্যাচিয়োর বেবি' বলা হয়ে থাকে ৷
প্রি-ম্যাচিয়োর বেবি হওয়ার নানা কারণ থাকে ৷ শুধু তাই নয়, সদ্যজাতর মধ্যে একাধিক সমস্যাও দেখা দেয় ৷ তার কিছুটা দায় বর্তায় মায়ের উপরেও ৷ সচেতনতা বাড়াতে প্রত্যেক বছর 17 নভেম্বর পালন করা হয় ওয়ার্ল্ড প্রি-ম্যাচিওর ডে ৷ কেন প্রি-ম্যাচিয়োর বেবি হয়, কী সচেতনতা নেওয়া উচিত সেই বিষয় নিয়ে কথা বললেন বিশিষ্ট গাইনোকলজিস্ট ব্রততী ভট্টাচার্য ৷
তিনি বলেন, "প্রথমেই জানা দরকার প্রি-ম্যাচিয়োর বেবি কেন হচ্ছে? বিজ্ঞানসম্মতভাবে এর সঠিক কারণ নির্ণয়ের পরীক্ষা এখনও চলছে ৷ তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা কেস দেখে চিকিৎসক হিসাবে যে কারণগুলি আমাদের নজরে আসছে তা হল একটু বেশি বয়সে যদি কেউ সন্তান গ্রহণ করেন তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। মায়ের জঠরে একাধিক সন্তান থাকলে এই ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়। মা যদি হাইপার টেনশন বা অ্যানিমিয়ার শিকার হন তাহলেও প্রি-ম্যাচিয়োর সন্তান হওয়ার আশঙ্কা থাকে ৷"
চিকিৎসক আরও বলেন, "আবার সন্তান থাকা অবস্থায় যদি মায়ের পেটে টিউমার থাকে সেটাও একটা বড় কারণ হিসেবে উঠে আসে। গর্ভের সন্তানের মধ্যে অ্যাবনর্মাল প্রেজেন্টেশন আছে অর্থাৎ যেভাবে গর্ভে শিশুটির থাকা উচিত সেভাবে না থাকলে সমস্যা হতে পারে ৷ হবু মায়ের স্মোকার হওয়া বা অতীতে প্রি-ম্যাচিয়োর সন্তানের জন্ম দেওয়াও কারণ হয়ে উঠতে পারে।"
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে তাহলে একজন মহিলার গর্ভধারনের সঠিক বয়স কী? এখন বেশিরভাগ মহিলা চাকরি বা কাজ করেন ৷ সবদিক সামলে তাঁদের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর পরিকল্পনা করতে হয়। এই প্রসঙ্গে গাইনোকলজিস্ট ব্রততী ভট্টাচার্য স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সন্তান যত দেরী করে নেবেন ততই হবু মা ও সন্তানের জন্মের প্রক্রিয়াটি জটিল হবে ৷ বয়স 30 হওয়ার আগে মা হওয়া সবসময় নিরাপদ ৷ 32 থেকে 35 বছর বয়সও গর্ভধারণে উপযুক্ত ৷ 35 বছর বয়সের উপরে সন্তানের মা হলে নানা রকমের বিপদের আশঙ্কা থেকে যায় ৷
কেন এমন হয়? এই প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট গাইনোকলজিস্ট জানান, এই ধরনের সমস্যার জন্য এখনকার সময়ে মেয়েদের জীবনধারা অনেকখানি দায়ী ৷ অতিরিক্ত ফিজিক্যালি অ্যাকটিভ, মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা, মদ্যপান, ধূমপানের অভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস, গোপনাঙ্গের হাইজেন মেনটেইন না করা, ইত্যাদি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায় প্রি-ম্যাচিয়োর শিশু জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে ৷ চিকিৎসক আরও জানান, প্রি-ম্যাচিয়োর শিশুর অনেক রকম জটিলতা দেখা যায় ৷ যে কারণে অনেক সময় দেখা যায় সবরকম চেষ্টা করেও সদ্যজাতকে বাঁচানো সম্ভব হয়ে ওঠে না ৷
- এক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয় ৷ সদ্যজাত সময়ের অনেক আগে আসায় শারীরিক অঙ্গের বিকাশ ঠিকভাবে সম্ভব হয় না ৷ ফুসফুস ঠিক মতো তৈরি হয় না ৷ একজন সাধারণ শিশু যেভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে, প্রি-ম্যাচিয়োর সন্তানের ক্ষেত্রে ফুসফুসের গঠন ঠিকভাবে না হওয়ায় বড় সমস্যা দেখা দেয় ৷
- নানা ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে প্রি-ম্যাচিয়োর শিশু ৷ বিশেষ করে ফুসফুসের সংক্রমণ মারাত্মক আকার নেয় ৷
- জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে প্রি-ম্যাচিয়োর শিশুর ৷
- মস্তিষ্কের বিকাশ পরিপূর্ণতা পায় না ৷ সেটা শিশুর পক্ষে ক্ষতিকর ৷
- ব্লাড সেল নষ্ট হয়ে যায়, চোখ ও ত্বকে খারাপ প্রভাব পড়ে ৷
- মায়ের স্তন পান করার মতো ক্ষমতাও তৈরি হয় না সদ্যজাতর ৷
প্রি-ম্যাচিয়োর শিশুকে একটা সময়ের পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলেও সবসময় সচেতন থাকতে হবে বাড়ির সদস্যদের। এমনটাই মত চিকিৎসকের ৷ তিনি জানিয়েছেন, শিশু বাড়ি যাওয়ার পর নজর রাখতে হবে ইউরিন জন্ডিস হচ্ছে কি না বা বাচ্চা হঠাৎ করে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কি না। বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে কিনা বা খিচুনি আসছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। পাশাপাশি, শিশুর শরীর নীল হয়ে যাচ্ছে, এমন মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত ৷
আরও পড়ুন:
1. আজ বিশ্ব প্রিম্যাচুরিটি দিবস ! জেনে নিন ইতিহাস ও বিস্তারিত
2. আতসবাজির ধোঁয়া থেকে শিশুর শ্বাসকষ্ট-অ্যালার্জি ! মেনে চলুন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
3. উজ্জ্বল ত্বকের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে অ্যালোভেরায়, এইভাবে ফেসপ্যাক বানালেই কেল্লাফতে !