প্রতি বছর 14 জানুয়ারি দেশজুড়ে পালিত হয় মকর সংক্রান্তি ৷ সাধারণত কৃষকদের নতুন করে কৃষিকাজ শুরুর একটি প্রতীক এই সংক্রান্তির অনুষ্ঠান ৷ বাংলার ঘরে ঘরে এই উপলক্ষে নানা ধরণের নতুন খাবার তৈরি হয় ৷ আসুন দেখে নেওয়া যাক এমন কিছু স্বাস্থ্য়কর খাবার, যা আপনার রসনাও পরিতৃপ্ত করবে আবার একইসঙ্গে সুস্থ রাখবে শরীরও (Healthy Foods that made in Makar Sankranti ) ৷
মকর সংক্রান্তির কিছু স্বাস্থ্য়কর খাবারঃ
মকর সংক্রান্তি মানেই আকাশে রঙিন ঘুড়ির ঝাঁক ৷ আবার সংক্রান্তিতেই ধনু থেকে মকর রাশিতে যাত্রা করে সূর্য ৷ মকর সংক্রান্তি থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে উষ্ণতাও ৷
নানারাজ্য়ে নানাবিধ নামে পালিত হয় এই পরব ৷ একদিকে যেমন উত্তর ভারতে এটি পরিচিত মকর সংক্রান্তি রূপে তেমনি তামিলনাড়ুতে পোঙ্গাল, কেরালায় মকর ভিলাক্কু, কর্নাটকে এল বিরোধু , গুজরাটে উত্তরায়ণ, পঞ্জাবে লহরি , আসামে বিহু ইত্য়াদি নানা নামে পালিত হয় এই পরব ৷ তবে যে রাজ্য়ে যাই নাম হোক না সবক্ষেত্রেই খাবার হিসাবে ব্য়বহৃত হয় তিল, গুড়, চাল, ডাল এবং ড্রাই ফ্রুট ৷ এই ধরণের খাবার শুধু যে শীতের দিনে দেহের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সাহায্য় করে তাই নয়, এ ধরণের খাবার শরীরের জন্য় অত্য়ন্ত স্বাস্থ্য়করও বটে ৷ এবিষয়ে ডাঃ দিব্যা শর্মার সঙ্গেও কথা বলেছিল ইটিভি ভারত, তিনি জানান, এধরণের খাবার শরীরের উষ্ণতা বাড়াতে সাহায্য করে ৷ একইসঙ্গে শীতের দিনে নানা ধরণের অসুখ বিসুখ থেকেও বাঁচতে সাহায্য় করে ৷
দেখে নিন বিভিন্ন খাবারের স্বাস্থ্য়গুণ :
তিল :
ডাঃ দিব্যা জানান, তিল এমন একটি দানাশস্য, যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্য়ামিনো অ্যাসিড এবং প্রোটিন পাওযা যায় যা হাড় এবং পেশীর শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য় করে ৷ এর মধ্যে থাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যার নাম সেসামিন । এছাড়াও তিলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায় । তিলের বেশকিছু অ্য়ান্টি ব্যাক্টেরিয়াল গুণও রয়েছে ৷ এছাড়া এটি শরীরের ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে থাকে ৷ তিল খিদে বাড়ায়, গুড়ের সঙ্গে কালো, সাদা যেকোনও ধরণের তিল খাওয়াই অত্য়ন্ত উপকারী ৷
গুড় :
গুড় এমন একটি খাদ্য়বস্তু যাতে রয়েছে প্রচুর উপকারি গুণ ৷ একদিকে যেমন গুড় শরীরের তাপ বাড়ায়, তেমনি গুড়ের রয়েছে একাধিক পুষ্টিগুণ ৷ এর মধ্য়ে রয়েছে ভিটামিন, আয়রন এবং মিনারেল ৷ যা শরীরে বহু পুষ্টিগুণ জোগায় আবার একইসঙ্গে বাড়ায় হজম ক্ষমতাও ৷ এছাড়া শীতকালীন গলা এবং ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধেও অত্য়ন্ত জরুরি গুড় ৷
চিনাবাদাম :
চিনাাবাদামেরও একটি সাধারণ ক্ষমতা রয়েছে শরীরকে উষ্ণ রাখার ৷ চিনাবাদামে থাকা প্রাকৃতিক তেল, অ্য়ান্টি অক্সিডেন্ট, মিনারেল শরীরকে পুষ্টির জোগান দেয় ৷ বাদাম খেলে হজম সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য় প্রভৃতি রোগেরও উপশম হয় ৷ এছা়ড়া এতে রয়েছে, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি৯ এবং প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড যা শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী ৷ এছাড়া মহিলা গর্ভধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও বাদাম যথেষ্ট সহায়ক ৷
খিচুড়ি :
ডাল এবং চাল দিয়ে তৈরি পোরিজ সারা ভারতে খিচুড়ি হিসাবেই পরিচিত ৷ সাধারণত ভারতে নানা ভাবে খিচুড়ি তৈরি করা হয় ৷ তবে বছরের এই সময় কালো বা সবুজ মটর দিয়ে খিচুড়ি তৈরি হয় যাতে দেওয়া হয় বেশ কিছু শাক সবজিও ৷ এই খিচুড়ি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর হয় , এতে ঘি ব্যবহার করলে তা খেতেও সুস্বাদু হয় এবং এই খাবারে প্রোটিন, ফ্যাট, ফলিক অ্যাসিড, মিনারেল সমস্তই পাওয়া যায় ৷
আরও পড়ুন :ওমিক্রনের সংক্রমণ চিহ্নিত করবেন কীভাবে ?
ঘি :
সাধারণত এই মরশুমে লাড্ডু-সহ অন্য়ান্য খাবারে ঘি ব্যবহৃত হয় ৷ অনেকে মনে করেন তেল,ঘি দু‘টোই শরীরের জন্য খারাপ কিন্তু মোটেই তা নয় ৷ ঘি নির্দিষ্ট পরিমাণে খেলে তা শরীরের ভিটামিন এ, ডি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে ৷
ড্রাই ফ্রুট :
শুকনো ফল সাধারণত এই মরশুমে মিষ্টি বানাতে ব্যবহৃত হয় ৷ যা পটাশিয়ামের যোগান দেয় এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ৷ এছাড়া শুকনো ফল ম্য়াগেনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসেরও যোগান দেয়, যা হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ৷