(আইএএনএস লাইফ) পিসিওএস হল একটি এমন জটিল সমস্যা, যাকে চিহ্নিত করতে নির্দিষ্ট কোনও পরীক্ষাগত পদ্ধতি নেই । পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) হল এমন একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যা বিশ্বজুড়ে মহিলাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে ।
ডার্মালিঙ্কস-এর মেডিক্যাল হেড ড. বিদূষী জৈন বললেন, “এর কারণ এখনও অজানা এবং একে জরায়ু থেকে পুরুষ হরমোন নিঃসরণের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয় ৷ এটা ইনসুলিন প্রতিরোধের সঙ্গেও যুক্ত ।”
প্রত্যেক রোগীর যাত্রা, তাঁর সংগ্রাম এবং চিকিৎসা আলাদা আলাদা । যেমনটা সবাই মনে করেন যে পিসিওএস ওবেসিটি আক্রান্তদের মধ্যে বেশি গুরুতরভাবে দেখা দেয়, এমনটা নয় । লিন পিসিওএস বলে আরেকটি ধরণও দেখা যায় ।
চিকিৎসক বলেন, “পিসিওএস আক্রান্ত মহিলাদের হরমোন গ্রন্থির সমস্যার ভিত্তিতে সাবগ্রুপে ভাগ করা যায় এবং সেইভাবে যথাযথ চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় ।”
তিনি আরও বলেন, “পিসিওএস নির্ণয়ের ভিত্তিপ্রস্তর হল ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ৷ অর্থাৎ শরীর ইনসুলিনে সাড়া দেয় না এবং তার জেরে অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন ক্ষরণ বাড়তে থাকে । এর ফলে ইনফ্লেমেশন শুরু হয় ও ওজনও বাড়তে থাকে । অতিরিক্ত ইনসুলিনই রোগ নির্ণয়ের প্রধান মাধ্যম । বেশি ইনসুলিনের প্রভাবে অ্যানোভোলিউশন ঘটে এবং জরায়ু থেকে টেস্টোস্টেরন নিঃসরণে উৎসাহ দেয় ।"
ড. জৈন আরও যোগ করেন, “অনিয়মিত ঋতুচক্র এবং বন্ধ্যাত্বের আগে অনেক সময় ত্বকও পিসিওএস-এর উপস্থিতি জানান দেয় এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং তাকে প্রতিহত করায় সাহায্য করে ।”
তিনি ব্যাখা দেন:
১. অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিক্যান্স হচ্ছে ত্বকের এমন একটি সমস্যা, যার ফলে ত্বক কালো ও পুরু হয়ে যায় । এটা প্রধানত ত্বকের ভাঁজ ও বগলে, কুঁচকিতে বা ঘাড়ের পিছন দিয়ে হয়ে থাকে । অনেক সময়ই একে নিছক ময়লা বলে মনে করা হয় ৷ কিন্তু এর সঙ্গে ইনসুলিন প্রতিরোধ ও ওবেসিটির যোগ রয়েছে । কখনও কখনও তা ওষুধ বা কোনওধরণের ম্যালিগন্যান্সি থেকেও হতে পারে । চিকিৎসা পদ্ধতি হল ওজন কমানো এবং লো গ্লাইসেমিক ডায়েট দিয়ে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সকে কমিয়ে আনা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা । রেটিনয়েড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এবং টিসিএ পিলের মতো চিকিৎসাপদ্ধতি ত্বকের উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে ।
২. হারট্রুইজম বা মুখে অবাঞ্ছিত চুল হল হাইপারঅ্যান্ড্রোজেনিজ়ম বা অতিরিক্ত পুং হরমোন ক্ষরণের ফল । এটা প্রধানত থুতনি, গাল, উরু, বা নিপলের চারপাশে দেখা যায় । এর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হল ওজন কমানো, যাতে সিরাম সেক্স হরমোন বাইন্ডিং গ্লোবিউলিন নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তার ফলে অনিয়ন্ত্রিত টেস্টোস্টেরনের স্তর কমে । এছাড়াও স্পিরোনোল্যাকটোন, ওসিপি-র মতো অ্যান্ড্রোজ়েন কমানোর ওষুধও ব্যবহার হয়ে থাকে ।
আরও পড়ুন: চুল ঘন করার জন্য নামি কম্পানির দামি তেল কিনছেন? সাবধান !
৩. অ্যাকনে বা ব্রণ: যে মহিলাদের টিনএজ় থেকেই অ্যাকনে রয়েছে, বা পঁচিশ বছর বয়সের পর প্রথমবার অ্যাকনে দেখা দিচ্ছে, তাঁদের পিসিওএস পরীক্ষা করানো উচিত । পিসিওএসের জেরে তৈরি অ্যাকনে সাধারণ চিকিৎসায় যেতে চায় না । এটা প্রধানত মুখের নিচের দিকের এক তৃতীয়াংশ অংশে দেখা যায় । অন্তত তিন মাসের আগে চিকিৎসার প্রভাব দেখা যায় না । সবথেকে ভালো চিকিৎসা পদ্ধতি হল ওরাল কনট্রাসেপ্টিভের সঙ্গে অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজ়েন প্রজ়েস্টেরন, যেমন ড্রসপিরেনন এবং সাইপ্রোটেরন অ্যাসিটেট, এমনকী স্পিরোনোল্যাকটোন, যাতে হাইপারঅ্যান্ড্রোজ়েনিক সমস্যার সমাধান হয় । জ্বালাযন্ত্রণা কমাতে ইনোসিটল, ম্যাগনেশিয়াম, জ়িঙ্ক ও ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৪. সেবোরিক ডার্মাইটিস প্রায়শই তেলতেলে মাথা ও খুস্কির কারণ। গুরুতর হয়ে দাঁড়ালে তা নাকের চারপাশে, ভ্রু-র মাঝখানে এবং কানের পিছনেও প্রভাব ফেলে। এটা অ্যান্ড্রোজেনের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং বেশি তেল নিঃসরণের জেরে ম্যালাসেজিয়া নামে একটি ফাংগাস তৈরি হয়। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা কেটোকোনাজল শ্যাম্পু দিয়ে প্রতিদিন পরিষ্কার করাটাই এর চিকিৎসা।
৫. মহিলাদের চুল পড়া অথবা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া ততদিন উপেক্ষা করা হয়, যতদিনে স্ক্যাল্পের একটা বড় অংশ দৃশ্যমান হয় । চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘন ঘন হেয়ারস্টাইল বদলে ফাঁকা অংশ ঢাকার চেষ্টা করলে আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে । প্লাজমা সেশন এবং মিনোক্সিডিল প্রয়োগ করলে সুফল মিলতে পারে । পিসিওএস হল একটি এমন সমস্যা, যেখানে শুধু হরমোন স্তরই প্রভাবিত হয় না, পাশাপাশি মেটাবলিজম এবং সন্তানধারণ ক্ষমতার ওপরও প্রভাব ফেলে । কোনও ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসের ওপরও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে ।