অশ্বগন্ধা হল আয়ুর্বেদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি । নানান গুণে পরিপূর্ণ অশ্বগন্ধাকে নানা উপসর্গ থেকে মুক্তি এবং বহু রোগের উপশমেরর জন্য ব্যবহার করা হয় । সম্প্রতি এটা শিরোনামে এসেছে । কারণ এর মধ্যে COVID-19-কে আটকাবার ক্ষমতা দেখা গেছে । কিন্তু অশ্বগন্ধা আসলে কী এবং এটা কি COVID-19-এর চিকিৎসায় সত্যিই ফল দেয় ?
আমাদের আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ , আয়ুর্বেদের ইতিহাসে PHD , ড. রঙ্গনায়কুলু ব্যাখা করে বলেন , “উইথানিয়া সমনিফেরাকে ভারতে অশ্বগন্ধা বলেই সবাই চেনে । উদ্ভিদের শিকড় থেকে এই নামের উৎপত্তি হয়েছে । যার গন্ধ ঘোড়ার প্রস্রাবের মতো । তাই ‘অশ্ব’ অর্থাৎ ঘোড়া এবং তার সঙ্গে ‘গন্ধা’ । এটা সাধারণভাবে একটি অ্যানাবোলিক ওষুধ , যা ওজন বাড়ায় এবং শরীরে অনেকটা স্টেরয়েডের মতো কাজ করে ।” ভারতে ওষধিচর্চায় বহুকাল ধরে অশ্বগন্ধা ব্যবহার হয়ে আসছে । ড. রঙ্গনায়কুলু জানান , “বহু অতীতে, প্রায় তিন হাজার থেকে চার হাজার বছর আগেই এই গাছকে চিহ্নিত করা হয়েছিল ।”
.
অশ্বগন্ধার কয়েকটি উপকার
- ডক্টর রঙ্গনায়কুলু জানান যে , অশ্বগন্ধার বহু উপকার রয়েছে , যেমন :
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।
- আয়ু বাড়ায় ।
- শক্তিবর্ধক ।
- ঘুমানোর আগে দুধের সঙ্গে খেলে অনিদ্রা থেকে মুক্তি দেয় ।
- দুর্বলতা কমিয়ে সজীবতা বাড়ায় ।
- শরীরের যন্ত্রণা কমায় ।
- মহিলাদের গর্ভধারণের সময় উপকারী ।
- স্বাস্থ্যকর কগনিটিভ ফাংশন বাড়ায় ।
- পুরুষদের শুক্রাণুকে উন্নত করে ।
- শক্তি ও মনোবল বাড়ায় ।
- এটা অ্যান্টি-ডিপ্রেস্যান্ট হিসেবেও কাজ করে এবং অ্যাংজ়াইটি নিউরোসিস সারায় ।
অশ্বগন্ধা ও কোভিড-১৯
এমনও দাবি করা হচ্ছে যে , অশ্বগন্ধা COVID-19 সারাতে পারে । কিন্তু রঙ্গনায়কুলু বলেন , “আমরা এখনও বলতে পারি না যে অশ্বগন্ধা COVID-19 সারায় । কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এটা ইমিউনোবুস্টার বা ইমিউনোমডিউলেটর হিসেবেও পরিচিত । সাধারণভাবে যে কোনও রোগপ্রতিরোধক মানবশরীরে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে । বিশেষ করে ভাইরাস সংক্রমণ এবং নোভেল কোরোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেটাই হতে পারে । যদিও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে , এবং কোনও কিছু দাবি করার আগে আমাদের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা উচিত ।”
অশ্বগন্ধা খাওয়া কি নিরাপদ ?
অশ্বগন্ধা নানাভাবে খাওয়া যেতে পারে।
- পাওয়ার হিসেবে ।
- ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে ।
- পেস্ট বা বাটা হিসেবে ।
- তরলরূপে ।
আমাদের চিকিৎসক বলেন , অশ্বগন্ধা তখনই খাওয়া যায় , যদি পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া করা হয় । অন্যথায় কাঙ্খিত ফল নাও পাওয়া যেতে পারে এবং বেশি খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে । একে কম পরিমাণে , "দুধ বা মধুর সঙ্গে 500 মিলিগ্রাম অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী " খাওয়া উচিত, জানালেন রঙ্গনায়কুলু । তিনি আরও বলেন , গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানের সময়কালে এটা এড়িয়ে চলা উচিত, এবং থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে এই ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।
সুতরাং , যদিও এতে বহু উপকার রয়েছে, তবু অতিরিক্ত সবকিছুই ক্ষতিকর হতে পারে । বর্তমানের প্রেক্ষাপটে , যেখানে ভারত কোরোনার বিরুদ্ধে লড়ছে , সেখানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অশ্বগন্ধা খাওয়া যেতে পারে । যদিও আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো ।