সদ্যোজাত সন্তান যে কোনও পরিবারে অফুরান আনন্দ নিয়ে আসে, কিন্তু তার সঙ্গে নিয়ে আসে প্রচুর দায়িত্ব । যেহেতু শিশুরা মনের ভাব প্রকাশে অক্ষম এবং তারা কিছু বলতেও পারে না, তাই তাদের জন্য প্রয়োজন বিপুল দায়িত্ব এবং যত্ন । সুতরাং প্রতি বছর নভেম্বর মাসের 15 থেকে 21 তারিখ, ‘নিউবর্ন কেয়ার উইক’ তথা ‘সদ্যোজাতের যত্ন সপ্তাহ’ পালন করা হয় বিকাশ এবং তার বয়োঃবৃদ্ধির জন্য শিশুর যত্নের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা প্রচারের জন্য ।
ন্যাশনাল হেলথ পোর্টাল (NHP) অফ ইন্ডিয়া বলে, “নিওনেটাল পিরিয়ড তথা নবজাতক অবস্থা (জন্মের প্রথম 28 দিন) শিশুর বেঁচে থাকার সবচেয়ে জরুরি সময় কারণ এই সময়েই দিনপ্রতি মৃত্যর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে শৈশবকালীন অন্যান্য অবস্থার তুলনায় । জন্মের প্রথম মাসটি আজীবনের স্বাস্থ্য এবং বিকাশের ভিত্তি গঠনেরও সময় । সুস্থ শিশুরা বড় হয়ে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কে পরিণত হয় যারা নিজেদের সম্প্রদায় তথা সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে ।”
পরিসংখ্যান কী বলছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, যদিও বিশ্বজুড়ে সদ্যোজাত শিশু মৃত্যুর সংখ্যা 1990 সালে 50 লাখ থেকে শুরু করে 2019 সালে 24 লাখে কমে এসেছে, তবুও এখনও জন্মের 28 দিনের মধ্যেই শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ।
বিশ্বজুড়ে সদ্যোজাত শিশুমৃত্যুর বিচারে, পাঁচ বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদের মৃত্যুর হার 45 শতাংশ । এর ফলে প্রতি বছর 2.7 মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু হয় । এছাড়াও মহিলাদের অন্তঃস্বত্ত্বা থাকাকালীন শেষ তিন মাসে কিংবা শিশু জন্মের সময় (স্থিরজন্ম) 2.6 মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু হয় আর প্রতি বছর প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা 303,000।
2016 সালে 2.6 মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল জন্মের প্রথম মাসেই । দায়ী ছিল শিশু জন্মের পর পরই জরুরি যথাযথ যত্ন এবং দক্ষ চিকিৎসার অভাবে হওয়া রোগব্যধি এবং শারীরিক সমস্যা ।
নবজাতকের মৃত্যুর কারণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জন্মের প্রথম 28 দিনের মধ্যে সদ্যোজাত শিশুদের মৃত্যু হতে দেখা গিয়েছে । আর এর নেপথ্যে যে কারণগুলি রয়েছে, তা হল–
অপরিণত অথবা ‘প্রি—টার্ম’ বার্থ
ডেলিভারির সময় হওয়া জটিলতা
নবজাতকের নানা ধরনের সংক্রমণ
‘ইনট্রাপারটাম’ সংক্রান্ত জটিলতা
WHO-র মতে, নিওনেটাল পিরিয়ডের শেষ থেকে শিশুর জন্মের প্রথম পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া, জন্মগত রোগব্যধি এবং ম্যালেরিয়া । এই সব কিছুর নেপথ্যে রয়েছে অপুষ্টি, যা শিশুদের গুরুতর রোগের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে ।
সদ্যোজাতের যত্ন কীভাবে নিতে হবে?
পরিসংখ্যান দেখার পর আপনি অবাক হয়ে ভাবতে পারেন তাহলে সদ্যোজাত শিশুর যত্ন কীভাবে নিতে হবে । তাই, WHO-র সুপারিশ অনুযায়ী, কী কী করা উচিত, তার তালিকা রইল ।
সমস্ত শিশুদের নিম্নলিখিত সুবিধা পাওয়া উচিত:
থার্মাল প্রোটেকশন (উদাহরণ, মা এবং সদ্যোজাতের ত্বকের সংস্পর্শজনিত সংযোগ বৃদ্ধি)
স্বাস্থ্যকর আমবিলিকল কর্ড এবং ত্বকের যত্ন
স্তন্যপানের সূচনা তাড়াতাড়ি করা এবং সুবিশেষ রাখা
কোনও গুরুতর স্বাস্থ্য সংকট আছে কি না বা শিশুর কোনওভাবে অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন আছে কি না, তার বিশ্লেষণ করা (উদাহরণ যাদের ওজন কম, যারা অসুস্থ অথবা যাদের মা HIV সংক্রামিত)
রোগ প্রতিরোধকারী চিকিৎসা (উদাহরণ টিকাকরণ BCG এবং হেপাটাইটিস বি, কে এবং ওকিউলার প্রোফাইল্যাক্সিস)
পরিবারদের প্রতি পরামর্শ
প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে (বিপদ সংকেতগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিশুকে খাওয়ানোর সমস্যা হয় কিংবা যদি সদ্যোজাত সন্তানের ক্রিয়াকলাপ কম হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, জ্বর, ফিটের ব্যামো বা খিঁচুনি হয় অথবা ঠাণ্ডা লাগে) ।
জন্ম নথিবদ্ধ করতে হবে ।
জাতীয় কর্মসূচি মেনে সময়মতো শিশুসন্তানকে টিকাগ্রহণের জন্য নিয়ে আসতে হবে ।
কোভিড-19 এবং সদ্যোজাত শিশুর যত্ন
এটা এখনও অজ্ঞাত যে, সত্যিই অন্তঃস্বত্ত্বা থাকাকালীন, ডেলিভারির সময় কিংবা সন্তানকে স্তন্যপান করানোর সময় নভেল কোরোনা ভাইরাস কোনও মায়ের থেকে তার সন্তানের দেহে সংক্রামিত হতে পারে । যদিও এই বিষয়ে কী কী মনে রাখা উচিত, তা নিয়ে সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) যা জানিয়েছে, তা হল–
যে ভাইরাস সংক্রমণে কোভিড-19 হয়, তাতে সংক্রামিত হয়েছেন বলে যদি পরীক্ষায় পজিটিভ সাব্যস্ত হন, তাহলে আপনার উচিত আপনার চিকিৎসকদের কাছে জেনে নেওয়া, আপনার সদ্যোজাত সন্তানটিকে আপনার সঙ্গে একই ঘরে রাখা ঠিক হবে কি না ।
নিজের সদ্যোজাত সন্তানকে হাতে নেওয়ার জন্য বা আদর-যত্ন করার আগে অন্তত 20 সেকেন্ড ধরে হাত সাবান এবং জল দিয়ে ধোন । যদি সাবান আর জল না থাকে, তাহলে এমন স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করুন, যাতে অন্তত 60 শতাংশ অ্যালকোহল থাকে।
সদ্যোজাতের থেকে যতদূর সম্ভব, অন্তত 6 ফুট দূরত্বে থাকুন, বিশেষ করে তাকে স্তন্যদান করানোর সময় ।
আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন কোনও ‘ফিজিক্যাল বেরিয়ার’ (উদাহরণ, সদ্যোজাতকে ইনকিউবেটারে রাখা) ব্যবহার করা যায় কি না, তা নিয়ে ।
শিশুকে মাস্ক বা ফেস শিল্ড পরাবেন না । ফেস শিল্ড পরালে ‘সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম’ তথা SIDS অথবা আচমকা শ্বাসরোধ হয়ে দমবন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে ।
শিশু যাতে নিরাপদে ঘুমোতে পারে, তা নিশ্চিত করুন । শিশুর স্বাস্থ্য ভাল রাখতে নিরাপদ ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি ।