নিউ ইয়র্ক, 5 এপ্রিল : কৈশোরে অতিরিক্ত চিনি মিশ্রিত পানীয় সেবন করলে তা মস্তিষ্কের বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে এবং জ্ঞানার্জনে তথা স্মৃতিশক্তিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে । রডেন্টদের উপর করা একটি সমীক্ষায় এই তথ্য জানা গিয়েছে ।
এর আগের গবেষণায় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত ডায়েটের সঙ্গে স্থূলতা ও হার্টের রোগের যোগসূত্র প্রমাণ করা হয়েছিল এমনকী এও বলা হয়েছিল যে এর জেরে স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব পড়ে । কিন্তু এই ধরনের পানীয় সেবনে যে মস্তিষ্কের গঠন, বিশেষ করে হিপ্পোক্যাম্পাস (মস্তিষ্কের যে অংশ শেখা এবং মনে রাখার কাজে সাহায্য করে) অংশের উপর প্রভাব পড়ে, তা এবার জানা গেল ।
এই নয়া তথ্য ‘ট্রান্সলেশনাল সাইক্রিয়াট্রি’ নামের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে । আর এতে দেখানো হয়েছে যে কম বয়স থেকেই বেশি চিনি সেবন করলে প্যারা ব্যাকটেরয়েডস নামে এক ধরনের অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়ার মাত্রা বেড়ে যায় । এই ব্যাকটিরিয়ার মাত্রা যত বাড়ে, তত সেই প্রাণী স্মৃতিশক্তি এবং শেখার শক্তির পরীক্ষায় দুর্বল ফল করে ।
এই সমীক্ষার জন্য গবেষক দলটি শিশু ইঁদুরদের তাদের সাধারণ চাউ এবং একটি 11 শতাংশ চিনির মিশ্রণ দিয়েছিলেন, যা বাণিজ্যিকভাবে প্রাপ্ত চিনিযুক্ত মিষ্টি পানীয়র সমতুল ।
এর পর সেই ইঁদুরদের হিপ্পোক্যাম্পাস-নির্ভর মস্তিষ্কের কাজ দেওয়া হয়েছিল, তাদের পর্বভিত্তিক সংশ্লিষ্ট সূত্রের স্মৃতিশক্তি পরিমাপ করতে বা এমন কিছু মনে করাতে যা হয়তো তারা আগে কোথায়, কখনও দেখেছে ।
আরও পড়ুন : ‘গিফটেড চাইল্ড’–দের জন্য জন্য পুষ্টি
আমেরিকার অ্যাথেন্সের ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়ার সহকারী অধ্যাপক এবং মুখ্য গবেষক এমিলি নোবেল বলেছেন, “আমরা দেখেছি যে জীবনের গোড়ার দিকে চিনি সেবন করেছে এমন ইঁদুরদের, কোনও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আকস্মিকভাবে গজিয়ে ওঠা, নতুন বস্তুটিকে চিনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে । অথচ এই কাজটি যে সব ইঁদুরের দল চিনি খায়নি, তারা সহজেই করে ফেলতে পারছে ।”
নোবেল জানিয়েছেন, “শৈশবকালে চিনি সেবনের ফলে ওই ইঁদুরদের হিপ্পোক্যাম্পাল অংশ দিয়ে কিছু শেখা এবং মনে রাখার শক্তির উপর প্রভাব পড়েছে ।”
আরও কী ! এই গবেষকরা পরীক্ষামূলকভাবে সেই সমস্ত ইঁদুরদের মাইক্রোবায়োমে প্যারা ব্যাকটেরয়েডসের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, যারা কখনও চিনি সেবন করেনি । সেই সমস্ত প্রাণীরা তাদের হিপ্পোক্যাম্পাল-নির্ভর এবং হিপ্পোক্যাম্পাল নির্ভর নয়, দু’ধরনের মেমরি টাস্ক করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছে ।
নোবেল জানিয়েছেন, “ব্যাকটিরিয়াগুলি নিজে থেকেই কিছু জ্ঞানভিত্তিক ঘাটতি দেখিয়েছে । আমরা লক্ষ্য করেছি যে, ওই ব্যাকটিরিয়াই যথেষ্ট ছিল চিনি যেভাবে স্মৃতিশক্তিকে খর্ব করে তেমনভাবেই স্মৃতিশক্তিকে খর্ব করতে পারার । কিন্তু দেখা গেল, এটি অন্যান্য ধরনের স্মৃতিশক্তিজনিত ক্রিয়ার উপরও প্রভাব ফেলছে ।”
তাঁর মতে, মস্তিষ্কের বিকাশ কীভাবে অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়া পাল্টে ফেলতে পারে, তা চিহ্নিত করতে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা প্রয়োজন ।