হায়দরাবাদ : বায়োকেমিস্ট এবং গ্লুকোজ রিভোলিউশন-এর লেখক জেসি ইনচাসপ জানিয়েছেন খাবারের প্লেটে কিছু পরিবর্তন করলেই বদল আনলেই আপনার জীবনেও বড় পরিবর্তন আসতে পারে ৷ তিনি মেনস্ট্রিম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যে আন্দোলন শুরু করেন তার নাম 'গ্লুকোজ গডেস' ৷ একটি নির্দিষ্ট ক্রমে খাবার খাওয়াটাই হল আসল বিষয় ৷ প্রোটিনের আগে খেতে হবে স্যালাড এবং তারপর প্রোটিন আর খাওয়া শেষ করতে হবে স্টার্চি কার্বোহাইড্রেট দিয়ে ৷ তাহলে গ্লুকোজের স্পাইক নিয়ন্ত্রিত থাকবে ৷
গ্লুকোজ স্পাইক কী : আপনি কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার প্রায় 30-60 মিনিট পরে আপনার রক্ত প্রবাহে একটি গ্লুকোজ স্পাইক তৈরি হয় । এই স্পাইকের শিখরগুলি কতটা উঁচু হবে এবং কতক্ষণ স্থায়ী হবে তা অনেক গুলি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে । এর মধ্যে রয়েছে আপনি কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে বা আগে ঠিক কী খেয়েছেন, কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে কতটা ফাইবার রয়েছে এবং আপনার শরীরের ইনসুলিন হরমোন নিঃসরণ এবং ব্যবহার করার ক্ষমতা কতখানি এই সমস্ত বিষয়গুলি ৷ বিশেষত এমন ব্যক্তি যাঁদের কিছু নির্দির্ষ্ট রোগ রয়েছে, তাঁদের জন্য় এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ (how to control glucose levels)।
দেখে নিন কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার :
- ডায়াবেটিস-রিঅ্যাকটিভ হাইপোগ্লাইসেমিয়া
- পোস্টপ্রান্ডিয়াল হাইপোটেনশন
- অথবা যদি আপনার ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি হয়ে থাকে ।
এর ক্ষতিকর দিকটি হল উচ্চ এবং দীর্ঘ সময় স্থায়ী গ্লুকোজ স্পাইকগুলি অনেক হরমোন এবং প্রোটিনের উপর দীর্ঘস্থায়ী এবং ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে ৷ এই প্রদাহের ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ-সহ বিভিন্ন ধরণের রোগের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে ।
বিভিন্ন খাবারে বিভিন্ন ধরণের স্পাইক তৈরি হয়: কার্বোহাইড্রেটের আগে বিভিন্ন ধরণের খাবার খাওয়া কি গ্লুকোজ স্পাইককে প্রভাবিত করে? দেখা গিয়েছে, হ্যাঁ । এটা অবশ্য় কোনও নতুন বিষয় নয় । বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে জানেন যে বেশি ফাইবার রয়েছে এমন খাবার, যেমন স্যালাড ধীরে ধীরে গ্যাস্ট্রিক থেকে বেরোয় । তাই উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার রক্তে শোষণের জন্য যে ছোট অন্ত্রগুলিতে গ্লুকোজ এবং অন্যান্য পুষ্টির সরবরাহ প্রয়োজন তার গতি মন্থর করে দেয় ।
প্রোটিন এবং চর্বির ক্ষেত্রেও গ্যাস্ট্রিক থেকে বেরিয়ে আসার গতি যথেষ্ট ধীর ৷ তবে এটি গ্লুকাগন জাতীয় পেপটাইড 1 (বা GLP1) নামক হরমোনকে উদ্দীপিত করে ৷ যখন আপনার খাদ্যের মধ্য়ে থাকা প্রোটিন আপনার অন্ত্রের কোষগুলিতে আঘাত করে, তখন এই হরমোন নিঃসৃত হয় ৷ এই সময় খাবারগুলির গ্যাস্ট্রিক থেকে বেরিয়ে আসার গতি আরও কমে যায় । হরমোনটি অগ্ন্যাশয়কেও প্রভাবিত করে যেখানে এটি হরমোন ইনসুলিনের নিঃসরণে সাহায্য করে ৷ প্রায় এই ঘটানাটিকেই অনুকরণ করা হয় টাইপ 2 ডায়াবেটিসের রোগীদের চিকিৎসার জন্য় ৷ ওষুধ তাঁদের শরীরে ঠিক এই কাজটিই করে ৷
আরও পড়ুন : মাস্কড ক্যানসার ড্রাগের ব্যবহার যুগান্তকারী হয়ে উঠতে পারে ক্যানসার চিকিৎসায়
এই গ্লুকোজ স্পাইকগুলির দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনার ডায়াবেটিস বা অন্যান্য কিছু রোগ থেকে থাকে । যদি এমন হয়, তাহলে আপনার চিকিৎসারত ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ান পরামর্শ দেবেন কীভাবে আপনার খাবার বা খাবারের পরিমাণ পরিবর্তন করতে হবে যাতে গ্লুকোজের বৃদ্ধি এড়ানো যায় । তবে চিনিযুক্ত পানীয় কম খাওয়ার কথা ভাবতে পারেন ৷ কারণ জানিয়ে রাখি গবেষণা অনুযায়ী, ডায়াবেটিস নেই এমন রোগীদের জন্য় নির্দিষ্ট খাবারের ক্রম অনুসরণের কোনও আলাদা সুবিধা গবেষকরা খুঁজে পাননি ৷ তবে নির্দিষ্ট কিছু রোগ থাকলে সেক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকর হতে পারে ৷