প্রতিবছর 17 নভেম্বর ভারতে জাতীয় মৃগীরোগ দিবস উদযাপন করা হয়, যার উদ্দেশ্য এই স্নায়বিক সমস্যাটি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় 50 মিলিয়ন মানুষের মৃগী রয়েছে, যার জেরে এটি সবথেকে পরিচিত স্নায়ুজনিত সমস্যায় পরিণত হয়েছে গোটা পৃথিবীতে । মৃগীতে আক্রান্ত প্রায় 80 শতাংশ মানুষ কম অথবা মধ্যবর্তী আয়ের দেশগুলোতে থাকেন । তাই নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আপনার জানা দরকার ।
মৃগীরোগ কী?
WHO ব্যাখ্যা দিয়েছে, যে মৃগী বা এপিলেপসি হল মস্তিষ্কের একটি ক্রনিক অসুখ যা ছোঁয়াচে নয় । এতে বার বার খিঁচুনি হয়, শরীরের একটি অংশে বা গোটা শরীরে এটা হতে পারে, এবং এর সঙ্গে সংজ্ঞাহীনতা এবং মলত্যাগ বা ব্লাডার ফাংশনের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না । মস্তিষ্কের কিছু কোষে অতিরিক্ত বৈদ্যুতিন সঙ্কেতের ফলেই খিঁচুনি হয় । মস্তিষ্কের নানা অংশ থেকেই এমন হতে পারে । কয়েক মুহূর্ত থেকে শুরু করে দীর্ঘক্ষণের গুরুতর কনভালশনও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । খিঁচুনির সময়ের তারতম্য হতে পারে, বছরে একবারও হতে পারে, আবার দিনে অনেকবারও হতে পারে ।
মৃগী কেন হয় ?
নানা কারণে মৃগীরোগের সৃষ্টি হতে পারে । কখনও কখনও কারণটা অজানাই থেকে যায়। WHO-র বক্তব্য অনুযায়ী কয়েকটি কারণ হল,
● জন্মের আগে বা জন্মের সময় কোনও কারণে মস্তিষ্কের ক্ষতি (যেমন প্রসবের সময় অক্সিজেনের অভাব, ট্রমা, কম ওজন ইত্যাদি) ।
● জন্মগত অস্বাভাবিকত্ব বা জিনগত সমস্যা, যার সঙ্গে মস্তিষ্কের গঠন না হওয়ার যোগ রয়েছে ।
● মাথায় গুরুতর আঘাত ।
● একটা স্ট্রোক, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ আটকে দেয় ।
● মস্তিষ্কের কোনও সংক্রমণ, যেমন মেনিনজাইটিস, এনকেফ্যালাইটিস, বা নিউরোসিস্টিসার্কোসিস ।
● নির্দিষ্ট কিছু জিনগত উপসর্গ ।
● ব্রেন টিউমার মৃগীর চিহ্ন ও উপসর্গ ।
ভারতের ন্যাশনাল হেলথ পোর্টাল (NHP) অনুযায়ী, কয়েকটি উপসর্গ হল:
● হঠাৎ আড়ষ্টতা (পা ও হাতের অনিয়ন্ত্রিত ঝটকা) ।
● সংজ্ঞাহীনতা ।
● হাত ও পায়ে কিছু বেঁধার মতো অনুভূতি (যেন পিন বা সূঁচ ফোটানো হচ্ছে) ।
● হাত, পা বা মুখের পেশীর আড়ষ্টতা ।
এছাড়াও WHO বলেছে যে এই খিঁচুনির বৈশিষ্ট্য আলাদা আলাদা হতে পারে, এবং তা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোথা থেকে শুরু হয়ে সমস্যাটা কতদূর ছড়াল, তার ওপর । সাময়িক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, নড়াচড়ায় অসুবিধা, ইন্দ্রিয়ে সমস্যা (দৃষ্টি, শোনা এবং স্বাদগ্রহণ), মুড ও অন্যান্য কাজকর্ম । মৃগী আক্রান্তদের শারীরিক সমস্যা বেশি দেখা যায়, (যেমন খিঁচুনির জেরে দুর্ঘটনার জন্য ফ্র্যাকচার বা কেটে যাওয়া), তার পাশাপাশি থাকে দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেসনের মতো মানসিক সমস্যা।
খিঁচুনির মোকাবিলা করার 9টি টিপস
যেহেতু মৃগী আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই খিঁচুনির সমস্যার মুখে পড়েন, তাঁদের জন্য NHP-তে বলা কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হল :
1. আতঙ্কিত হবেন না ।
2. খিঁচুনির সময় সেই ব্যক্তিকে চেপে ধরবেন না ।
3. আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে ধারালো বা ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এমন জিনিস থাকলে সরিয়ে নিন ।
4. গলায় টাইট কিছু পরে থাকলে আলগা করে দিন ।
5. আস্তে আস্তে ওই ব্যক্তিকে পাশ ফিরিয়ে দিন, যাতে মুখে তরল কিছু থাকলে তা নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারে ।
6. তাঁর মাথার নিচে নরম কিছু দিন ।
7. জিভ কামড়ে ফেলবেন, এই আশঙ্কায় ওই ব্যক্তির মুখে কিছু দিয়ে দেবেন না ।
8. মেডিকেল সাহায্য এসে পৌঁছনো পর্যন্ত ওই ব্যক্তির কাছে থাকুন ।
9. তাঁকে বিশ্রাম নিতে বা ঘুমোতে দিন ।
সুতরাং, মৃগীর উপসর্গকে সামাল দেওয়া যেতে পারে । WHO বলছে, “ওষুধ খেলে মৃগী আক্রান্ত 70 শতাংশ মানুষ খিঁচুনি থেকে রেহাই পেতে পারেন ।” চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হওয়া উচিত নয় এবং ওষুধ যথাযথভাবে খাওয়া উচিত । আগেভাগে রোগ নির্ণয় আর সঠিক চিকিৎসা আরও অবনতি আটকাতে পারে । এছাড়াও মৃগী আক্রান্ত ব্যক্তিদের মদ্যপান কঠোরভাবে এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ তাতে খিঁচুনি ত্বরান্বিত হতে পারে ।