ETV Bharat / sukhibhava

দ্রুত মৃগীরোগ নির্ণয় আটকাতে পারে অবনতি

WHO বলছে, “ওষুধ খেলে মৃগী আক্রান্ত 70 শতাংশ মানুষ খিঁচুনি থেকে রেহাই পেতে পারেন ।” চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হওয়া উচিত নয় এবং ওষুধ যথাযথভাবে খাওয়া উচিত । আগেভাগে রোগ নির্ণয় আর সঠিক চিকিৎসা আরও অবনতি আটকাতে পারে । এছাড়াও মৃগী আক্রান্ত ব্যক্তিদের মদ্যপান কঠোরভাবে এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ তাতে খিঁচুনি ত্বরান্বিত হতে পারে ।

Epilepsy
মৃগীরোগ
author img

By

Published : Nov 18, 2020, 6:59 AM IST

প্রতিবছর 17 নভেম্বর ভারতে জাতীয় মৃগীরোগ দিবস উদযাপন করা হয়, যার উদ্দেশ্য এই স্নায়বিক সমস্যাটি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় 50 মিলিয়ন মানুষের মৃগী রয়েছে, যার জেরে এটি সবথেকে পরিচিত স্নায়ুজনিত সমস্যায় পরিণত হয়েছে গোটা পৃথিবীতে । মৃগীতে আক্রান্ত প্রায় 80 শতাংশ মানুষ কম অথবা মধ্যবর্তী আয়ের দেশগুলোতে থাকেন । তাই নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আপনার জানা দরকার ।

মৃগীরোগ কী?

WHO ব্যাখ্যা দিয়েছে, যে মৃগী বা এপিলেপসি হল মস্তিষ্কের একটি ক্রনিক অসুখ যা ছোঁয়াচে নয় । এতে বার বার খিঁচুনি হয়, শরীরের একটি অংশে বা গোটা শরীরে এটা হতে পারে, এবং এর সঙ্গে সংজ্ঞাহীনতা এবং মলত্যাগ বা ব্লাডার ফাংশনের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না । মস্তিষ্কের কিছু কোষে অতিরিক্ত বৈদ্যুতিন সঙ্কেতের ফলেই খিঁচুনি হয় । মস্তিষ্কের নানা অংশ থেকেই এমন হতে পারে । কয়েক মুহূর্ত থেকে শুরু করে দীর্ঘক্ষণের গুরুতর কনভালশনও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । খিঁচুনির সময়ের তারতম্য হতে পারে, বছরে একবারও হতে পারে, আবার দিনে অনেকবারও হতে পারে ।

মৃগী কেন হয় ?

নানা কারণে মৃগীরোগের সৃষ্টি হতে পারে । কখনও কখনও কারণটা অজানাই থেকে যায়। WHO-র বক্তব্য অনুযায়ী কয়েকটি কারণ হল,

● জন্মের আগে বা জন্মের সময় কোনও কারণে মস্তিষ্কের ক্ষতি (যেমন প্রসবের সময় অক্সিজেনের অভাব, ট্রমা, কম ওজন ইত্যাদি) ।

● জন্মগত অস্বাভাবিকত্ব বা জিনগত সমস্যা, যার সঙ্গে মস্তিষ্কের গঠন না হওয়ার যোগ রয়েছে ।

● মাথায় গুরুতর আঘাত ।

● একটা স্ট্রোক, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ আটকে দেয় ।

● মস্তিষ্কের কোনও সংক্রমণ, যেমন মেনিনজাইটিস, এনকেফ্যালাইটিস, বা নিউরোসিস্টিসার্কোসিস ।

● নির্দিষ্ট কিছু জিনগত উপসর্গ ।

● ব্রেন টিউমার মৃগীর চিহ্ন ও উপসর্গ ।

ভারতের ন্যাশনাল হেলথ পোর্টাল (NHP) অনুযায়ী, কয়েকটি উপসর্গ হল:

● হঠাৎ আড়ষ্টতা (পা ও হাতের অনিয়ন্ত্রিত ঝটকা) ।

● সংজ্ঞাহীনতা ।

● হাত ও পায়ে কিছু বেঁধার মতো অনুভূতি (যেন পিন বা সূঁচ ফোটানো হচ্ছে) ।

● হাত, পা বা মুখের পেশীর আড়ষ্টতা ।

এছাড়াও WHO বলেছে যে এই খিঁচুনির বৈশিষ্ট্য আলাদা আলাদা হতে পারে, এবং তা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোথা থেকে শুরু হয়ে সমস্যাটা কতদূর ছড়াল, তার ওপর । সাময়িক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, নড়াচড়ায় অসুবিধা, ইন্দ্রিয়ে সমস্যা (দৃষ্টি, শোনা এবং স্বাদগ্রহণ), মুড ও অন্যান্য কাজকর্ম । মৃগী আক্রান্তদের শারীরিক সমস্যা বেশি দেখা যায়, (যেমন খিঁচুনির জেরে দুর্ঘটনার জন্য ফ্র্যাকচার বা কেটে যাওয়া), তার পাশাপাশি থাকে দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেসনের মতো মানসিক সমস্যা।

খিঁচুনির মোকাবিলা করার 9টি টিপস

যেহেতু মৃগী আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই খিঁচুনির সমস্যার মুখে পড়েন, তাঁদের জন্য NHP-তে বলা কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হল :

1. আতঙ্কিত হবেন না ।

2. খিঁচুনির সময় সেই ব্যক্তিকে চেপে ধরবেন না ।

3. আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে ধারালো বা ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এমন জিনিস থাকলে সরিয়ে নিন ।

4. গলায় টাইট কিছু পরে থাকলে আলগা করে দিন ।

5. আস্তে আস্তে ওই ব্যক্তিকে পাশ ফিরিয়ে দিন, যাতে মুখে তরল কিছু থাকলে তা নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারে ।

6. তাঁর মাথার নিচে নরম কিছু দিন ।

7. জিভ কামড়ে ফেলবেন, এই আশঙ্কায় ওই ব্যক্তির মুখে কিছু দিয়ে দেবেন না ।

8. মেডিকেল সাহায্য এসে পৌঁছনো পর্যন্ত ওই ব্যক্তির কাছে থাকুন ।

9. তাঁকে বিশ্রাম নিতে বা ঘুমোতে দিন ।

সুতরাং, মৃগীর উপসর্গকে সামাল দেওয়া যেতে পারে । WHO বলছে, “ওষুধ খেলে মৃগী আক্রান্ত 70 শতাংশ মানুষ খিঁচুনি থেকে রেহাই পেতে পারেন ।” চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হওয়া উচিত নয় এবং ওষুধ যথাযথভাবে খাওয়া উচিত । আগেভাগে রোগ নির্ণয় আর সঠিক চিকিৎসা আরও অবনতি আটকাতে পারে । এছাড়াও মৃগী আক্রান্ত ব্যক্তিদের মদ্যপান কঠোরভাবে এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ তাতে খিঁচুনি ত্বরান্বিত হতে পারে ।

প্রতিবছর 17 নভেম্বর ভারতে জাতীয় মৃগীরোগ দিবস উদযাপন করা হয়, যার উদ্দেশ্য এই স্নায়বিক সমস্যাটি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় 50 মিলিয়ন মানুষের মৃগী রয়েছে, যার জেরে এটি সবথেকে পরিচিত স্নায়ুজনিত সমস্যায় পরিণত হয়েছে গোটা পৃথিবীতে । মৃগীতে আক্রান্ত প্রায় 80 শতাংশ মানুষ কম অথবা মধ্যবর্তী আয়ের দেশগুলোতে থাকেন । তাই নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আপনার জানা দরকার ।

মৃগীরোগ কী?

WHO ব্যাখ্যা দিয়েছে, যে মৃগী বা এপিলেপসি হল মস্তিষ্কের একটি ক্রনিক অসুখ যা ছোঁয়াচে নয় । এতে বার বার খিঁচুনি হয়, শরীরের একটি অংশে বা গোটা শরীরে এটা হতে পারে, এবং এর সঙ্গে সংজ্ঞাহীনতা এবং মলত্যাগ বা ব্লাডার ফাংশনের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না । মস্তিষ্কের কিছু কোষে অতিরিক্ত বৈদ্যুতিন সঙ্কেতের ফলেই খিঁচুনি হয় । মস্তিষ্কের নানা অংশ থেকেই এমন হতে পারে । কয়েক মুহূর্ত থেকে শুরু করে দীর্ঘক্ষণের গুরুতর কনভালশনও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । খিঁচুনির সময়ের তারতম্য হতে পারে, বছরে একবারও হতে পারে, আবার দিনে অনেকবারও হতে পারে ।

মৃগী কেন হয় ?

নানা কারণে মৃগীরোগের সৃষ্টি হতে পারে । কখনও কখনও কারণটা অজানাই থেকে যায়। WHO-র বক্তব্য অনুযায়ী কয়েকটি কারণ হল,

● জন্মের আগে বা জন্মের সময় কোনও কারণে মস্তিষ্কের ক্ষতি (যেমন প্রসবের সময় অক্সিজেনের অভাব, ট্রমা, কম ওজন ইত্যাদি) ।

● জন্মগত অস্বাভাবিকত্ব বা জিনগত সমস্যা, যার সঙ্গে মস্তিষ্কের গঠন না হওয়ার যোগ রয়েছে ।

● মাথায় গুরুতর আঘাত ।

● একটা স্ট্রোক, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ আটকে দেয় ।

● মস্তিষ্কের কোনও সংক্রমণ, যেমন মেনিনজাইটিস, এনকেফ্যালাইটিস, বা নিউরোসিস্টিসার্কোসিস ।

● নির্দিষ্ট কিছু জিনগত উপসর্গ ।

● ব্রেন টিউমার মৃগীর চিহ্ন ও উপসর্গ ।

ভারতের ন্যাশনাল হেলথ পোর্টাল (NHP) অনুযায়ী, কয়েকটি উপসর্গ হল:

● হঠাৎ আড়ষ্টতা (পা ও হাতের অনিয়ন্ত্রিত ঝটকা) ।

● সংজ্ঞাহীনতা ।

● হাত ও পায়ে কিছু বেঁধার মতো অনুভূতি (যেন পিন বা সূঁচ ফোটানো হচ্ছে) ।

● হাত, পা বা মুখের পেশীর আড়ষ্টতা ।

এছাড়াও WHO বলেছে যে এই খিঁচুনির বৈশিষ্ট্য আলাদা আলাদা হতে পারে, এবং তা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোথা থেকে শুরু হয়ে সমস্যাটা কতদূর ছড়াল, তার ওপর । সাময়িক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, নড়াচড়ায় অসুবিধা, ইন্দ্রিয়ে সমস্যা (দৃষ্টি, শোনা এবং স্বাদগ্রহণ), মুড ও অন্যান্য কাজকর্ম । মৃগী আক্রান্তদের শারীরিক সমস্যা বেশি দেখা যায়, (যেমন খিঁচুনির জেরে দুর্ঘটনার জন্য ফ্র্যাকচার বা কেটে যাওয়া), তার পাশাপাশি থাকে দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেসনের মতো মানসিক সমস্যা।

খিঁচুনির মোকাবিলা করার 9টি টিপস

যেহেতু মৃগী আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই খিঁচুনির সমস্যার মুখে পড়েন, তাঁদের জন্য NHP-তে বলা কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হল :

1. আতঙ্কিত হবেন না ।

2. খিঁচুনির সময় সেই ব্যক্তিকে চেপে ধরবেন না ।

3. আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে ধারালো বা ক্ষতির সম্ভাবনা আছে এমন জিনিস থাকলে সরিয়ে নিন ।

4. গলায় টাইট কিছু পরে থাকলে আলগা করে দিন ।

5. আস্তে আস্তে ওই ব্যক্তিকে পাশ ফিরিয়ে দিন, যাতে মুখে তরল কিছু থাকলে তা নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারে ।

6. তাঁর মাথার নিচে নরম কিছু দিন ।

7. জিভ কামড়ে ফেলবেন, এই আশঙ্কায় ওই ব্যক্তির মুখে কিছু দিয়ে দেবেন না ।

8. মেডিকেল সাহায্য এসে পৌঁছনো পর্যন্ত ওই ব্যক্তির কাছে থাকুন ।

9. তাঁকে বিশ্রাম নিতে বা ঘুমোতে দিন ।

সুতরাং, মৃগীর উপসর্গকে সামাল দেওয়া যেতে পারে । WHO বলছে, “ওষুধ খেলে মৃগী আক্রান্ত 70 শতাংশ মানুষ খিঁচুনি থেকে রেহাই পেতে পারেন ।” চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হওয়া উচিত নয় এবং ওষুধ যথাযথভাবে খাওয়া উচিত । আগেভাগে রোগ নির্ণয় আর সঠিক চিকিৎসা আরও অবনতি আটকাতে পারে । এছাড়াও মৃগী আক্রান্ত ব্যক্তিদের মদ্যপান কঠোরভাবে এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ তাতে খিঁচুনি ত্বরান্বিত হতে পারে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.