ড. পি রঘুরাম, MS, FRCS (ইংল্যান্ড), FRCS (এডিন), FRCS (গ্লাসগো), FRCS (আয়ারল্যান্ড), সম্মানীয় FRCS (থাইল্যান্ড), ঊষালক্ষ্মী স্তন ক্যানসার প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, CEO ও ডিরেক্টর এবং KIMS-ঊষালক্ষ্মী স্তন সংক্রান্ত রোগের ডিরেক্টর । তাঁর সঙ্গে ETV ভারত সুখীভব পারিবারিক ইতিহাসের দিকটি নিয়ে আলোচনা করেছে ।
প্রচলিত ধারণা
স্তনে ক্যানসার হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি হল স্তন ক্যানসার হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস ।
তথ্য
যে সমস্ত মহিলারা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তাঁদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতীতে পরিবারে কারও স্তন ক্যানসার হওয়ার ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায় না । স্তন ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস (জেনেটিক প্রিডিপোজিশন) রয়েছে এমন ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ শতাংশ রোগী দেখতে পাওয়া যায় ।
প্রচলিত ধারণা
স্তন ক্যানসার হতে পারে কি না, তা জেনে নেওয়ার জন্য আগেই ‘জেনেটিক পরীক্ষা’ করা প্রয়োজন ।
তথ্য
না । যে সমস্ত মহিলাদের গড়পড়তা ঝুঁকি (উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, 40 বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর পরিবারের একজন কোনও সদস্যের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া) রয়েছে, তাঁদের জেনেটিক পরীক্ষা হলে তা অধিকাংশ অযথা হয় এবং অযথা সতর্কবার্তা তৈরি হতে পারে । এই ধরনের মহিলারা যাঁদের গড়পড়তা ঝুঁকি রয়েছে, তাঁরা ভুল পথে চালিত হন । ভারতে জেনেটিক পরীক্ষার পর তাঁদের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় । আর তাঁরা ঠিক মতো জেনেটিক কাউন্সেলিংও পান না ।
স্তন ক্যানসারের শুধুমাত্র পাঁচ থেকে 10 শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে তার কারণ ত্রুটিপূর্ণ জিন (BRCA1 এবং BRCA2) । যাঁদের এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ জিন থাকে, তাঁদের জীবনের যে কোনও পর্বে স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । যাঁদের BRACA পজ়িটিভিটি থাকে, তাঁরা সকলেই যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন, তেমনটা একেবারেই নয় । যখন পরিবারের অন্য সদস্যদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে (উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপ), একমাত্র সেই সব ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ । তবে এই ক্ষেত্রে আগে থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জেনেটিক কাউন্সেলিং করা জরুরি ।
স্তন ক্যানসারের গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে , তার মধ্যে হল (উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপ) ।
এক বা একাধিক নিকট আত্মীয় যিনি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন 40 বছর বয়স হওয়ার আগেই ।
দুই জন বা তার অধিক নিকট আত্মীয় জীবনের যে কোনও বয়সে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ।
নিকট আত্মীয় যাঁদের স্তন ক্যানসার হয়েছিল এবং অন্যরা যাঁরা জরায়ুর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ।
একজন নিকট আত্মীয় যাঁর দুইটি স্তনেই ক্যানসার হয়েছে (দ্বিপাক্ষিক) ।
পুরুষ আত্মীয় যাঁর স্তন ক্যানসার হয়েছে ৷
এমন একটা অতীত রয়েছে, যার সাধারণত ত্রুটিপূর্ণ স্তন ক্যানসারের জিন রয়েছে । উদাহরণ স্বরূপ যাঁরা আশকেনাজি জিউইশ অ্যানসেন্ট্রির অধীনে রয়েছেন ।
জেনেটিক পরীক্ষা হল একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মতো । তবে এটা খুবই খরচ সাপেক্ষ । এর জন্য 50 হাজার টাকা খরচ হয় । যদি রক্ত পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক আসে, তাহলে স্তন ক্যানসার ও জরায়ুর ক্যানসারের আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি বলে ধরা হয় (50 থেকে 85 শতাংশ স্তন ক্যানসার ও 15 থেকে 45 শতাংশ জরায়ুর ক্যানসার) ।
প্রচলিত ধারণা
জিনগত অস্বাভাবিকত্বের জন্য যাঁদের স্তন ক্যানসার হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে, সেই সমস্ত মহিলাদের দুইটি স্তন বাদ দিয়ে দেওয়াই ভালো ।
তথ্য
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুইটি স্তন (বাইল্যাটরাল ম্যাসকটোমি) এবং জরায়ু ও ফ্যালোপিয়ান টিউব (বাইল্যাটরাল স্যালপিনগো-ওফেরকটোমি) মেনোপজ়ের আগে বাদ দিয়ে দেওয়া হল তা স্তন ও জরায়ু, উভয় জায়গার ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় । তবে অস্ত্রোপচার ছাড়াও প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে ।
যদি অস্ত্রোপচার করতেই হয়, তাহলে প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞদের দিয়ে স্তনের পুনর্গঠন করাও প্রয়োজন (সত্ত্বর স্তন পুনর্গঠন) ।
অস্ত্রোপচার ছাড়া দুটি বিকল্প হল -
1. ট্যামোক্সিফেন (স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে পজ়িটিভ হরমোন গ্রাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা) এর মতো ওষুধ পাঁচ বছর ধরে খেয়ে যাওয়া ।
2. খুব ভালো ভাবে নজর দেওয়া ।
ভারতের মতো একটি দেশ যেখানে স্তন ক্যানসারের জেনেটিক ক্লিনিক এবং ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের চিকিৎসা কেন্দ্রের সংখ্যা খুবই কম । সেখানে খুব ভালো ভাবে নজরদারি করাও ভালো বিকল্প । এই বিকল্প অবশ্য স্তন ক্যানসারকে আটকাতে পারে না । কিন্তু অনেক আগেই স্তন ক্যানসারকে চিহ্নিত করতে পারে । এটা করা হয় স্তনের MRI ও বাইল্যাটরাল ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে । এটা সাধারণত 25 বছর বয়স থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর করতে হয় । অথবা পরিবারের সবচেয়ে কম বয়সী যে সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁর আক্রান্ত হওয়ার বয়সের দশ বছর আগে এটা শুরু করতে হয় ।
আরও তথ্যের জন্য দেখুন www.ubf.org.in ও www.breastcancerindia.org