মাল্টিপল মায়োলোমা রোগের কোনও আরোগ্য নেই ঠিকই কিন্তু বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট কমবয়সি রোগীদের মাল্টিপল মায়োলোমার চিকিৎসার একটি সক্রিয় অংশ হতে পারে বলে রবিবার স্বাস্থ্য বিশারদরা জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট মাল্টিপল মায়োলোমা রোগীদের বেঁচে থাকার মেয়াদ কিছু বছর বাড়িয়ে দিতে পারে । নয়াদিল্লির স্যর গঙ্গারাম হাসপাতালের অংকোলজি বিভাগের প্রধান শ্যাম আগরওয়াল বলেছেন, “ওষুধশাস্ত্র এবং প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মাল্টিপল মায়োলোমার চিকিৎসা আরও বেশি উন্নত হয়ে গিয়েছে।”
আগরওয়ালের আরও সংযোজন, “মাল্টিপল মায়োলোমায় আক্রান্ত কমবয়সি রোগীদের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করানো উচিত, কারণ এটি চিকিৎসার জন্য সহায়ক হতে পারে।”
মাল্টিপল মায়োলোমা হল রক্তের ক্যানসারের একটি অন্যরকম রোগ, যেখানে বোন ম্যারোর মধে্য অস্বাভাবিক প্লাজমা কোষ জমা হয় এবং শরীরের বিভিন্ন হাড়ের মধে্য টিউমার তৈরি করে।
স্বাস্থ্যকর প্লাজমা কোষ অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা আমাদের সংক্রমণ এবং ব্যাকটিরিয়া থেকে রক্ষা করে। মাল্টিপল মায়োলোমায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে কোষবিভাজনে সমস্যা হয় যার ফলে বোন ম্যারোর প্লাজমা কোষে ‘ম্যালিগন্যান্ট প্রোলিফেরাশন’ দেখা দেয়।
গুরুগ্রামের ফর্টিস হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ ব্লাড ডিজ়অর্ডারস—এর অধিকর্তা, রাহুল ভার্গব জানিয়েছেন, “মাল্টিপল মায়োলোমায় আক্রান্তদের বেঁচে থাকার মেয়াদ আরও বাড়ানো হয় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে, যা আজকাল আর আগের মতো দামি নয় এবং এর জন্য রোগীকে হাসপাতালে মাত্র 10 দিন থাকতে হয়।”
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুযায়ী, মাল্টিপল মায়োলোমা হাড় ও কিডনিরও ক্ষতি করতে পারে এবং ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দিতে পারে। এই রোগের প্রকৃত কারণ অজানা।
এই সপ্তাহে এফডিএ অ্যাবেকমা—কে (আইডিক্যাবডাজেন ভিসলুসেল) অনুমোদন দিয়েছে সেই সব প্রাপ্তবয়স্ক মাল্টিপল মায়োলোমা রোগীদের উপর এই কোষনির্ভর জিন থেরাপিকে চিকিৎসা—পদ্ধতি হিসাবে প্রয়োগ করার, যাদের ক্ষেত্রে থেরাপি A—র আগের অন্তত চারটি পৃথক পৃথক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের পরও কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি কিংবা রোগ চলে গিয়েও আবার ফিরে এসেছে।
অ্যাবেকমা হল প্রথম কোষ—নির্ভর জিন থেরাপি, যাকে এফডিএ অনুমোদন দিয়েছে মাল্টিপল মায়োলোমার চিকিৎসায় ব্যবহার করতে।
এফডিএ—র সেন্টার ফর বায়োলজিকস ইভালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চের এমডি, পিএইচডি পিটার মার্কস জানিয়েছেন, “মাল্টিপল মায়োলোমা রোগের কোনও আরোগ্য নেই, তবু আক্রান্তের বয়স এবং রোগ ডায়াগনিসিসের সময় রোগীর অবস্থা পর্যালোচনা করে এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।”
মার্কসের সংযোজন, “আজকের অনুমোদন সেই সব রোগীদের চিকিৎসার একটি বিকল্পের সন্ধান দিয়েছে, যারা এই অন্যরকম ক্যানসারে আক্রান্ত।”
বিশেষজ্ঞদের দাবি, মাল্টিপল মায়োলোমার চিকিৎসা নির্ভর করে রোগী কী কী উপসর্গ অনুভব করছেন এবং তার সামগ্রিক স্বাস্থে্যর অবস্থা ঠিক কী রকম, তার উপর।
ভার্গবের মতে, “সাধারণ ধারণার বিপরীতে গিয়ে বলছি, মাল্টিপল মায়োলোমা বর্তমানে সম্পূর্ণ আরোগ্যযোগ্য। বর্তমানে আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতি এত উন্নত যে, যে সব রোগীদের আগে কখনওই সেরে উঠবে না বলা হয়েছিল, তারা এখন সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন ।”
আরও পড়ুন : আগেভাগে ক্যানসার নির্ণয়ের বহুমুখী উপকারিতা
ভার্গব জানাচ্ছেন, “একজন মাল্টিপল মায়োলোমা রোগীকে নিজের অবস্থার কথা সঠিক সময়ে চিকিৎসককে জানাতে হবে । তার ক্ষেত্রে উপযুক্ত হলেন একজন হেমাটোলজিস্ট—অংকোলজিস্ট ।”