জবা গাছের প্রতিটি অংশকেই বিভিন্নভাবে উপকারী বলে মনে করা যায়। আয়ুর্বেদ ও নেচারোপ্যাথি, উভয়ক্ষেত্রেই জবা ফুল, শিকড়, পাতা ও ছালকে বিভিন্ন ঔষধিগুণের জন্য ব্যবহার করা হয়। অসাধারণ সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও জবা গাছের অনেক উপকারিতা।
ইন্দোরের নেচারোপ্যাথি বিশেষজ্ঞ ড. রাজন চন্দ্র ব্যাখ্যা করলেন, “শত শত বছর ধরে আমাদের দেশে জবা গাছের বিভিন্ন অংশকে ওষধি হিসেবে আয়ুর্বেদ ও নেচারোপ্যাথিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফ্যাট, ভিটামিন সি ও ফাইবারে পরিপূর্ণ। এতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রয়েছে, যা শরীরের পাচন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। রয়েছে ইনফ্লেমেশন বন্ধ করার ক্ষমতাও যা হাইপারটেনশন ও লিভারের সমস্যায় বেশ উপকারী ।”
জবার আরও কিছু গুণাগুণ নিচে দেওয়া হল:
ঋতুচক্র সম্পর্কিত সমস্যা
মেয়েদের ঋতুচক্রজণিত সমস্যায় জবা খুবই উপকারী। জবা ফুল দিয়ে তৈরি চা খেলে অনিয়মিত ঋতুচক্রের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
রূপচর্চার ক্ষেত্রে
মুখের যত্নের ক্ষেত্রে জবা আশীর্বাদস্বরূপ। ত্বকের বহু সমস্যার সমাধান এবং মুখের তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম বলে জবাবে একটি বোটক্স উদ্ভিদও বলা হয়। কালো দাগ, ছোপ ও ব্রণ থেকে মুক্তি দিতেও এটি সহায়ক। ফ্রি র্যাডিক্যালস সরাতে সক্ষম হওয়ায় এটি অ্যান্টি-এজিং ওষুধ হিসেবেও কাজ করে।
চুলের যত্নে
চুলের প্রায় প্রতিটি সমস্যার জন্য জবা পাতা উপকারী, যার মধ্যে রয়েছে চুল পড়া ও রুক্ষতাও। শুধু একটা ওষুধ নয়, আমলকী সহ জবা ফুল ও পাতার পেস্ট একটা অসাধারণ হেয়ার প্যাক। এতে চুল আরও ভাল থাকে এবং ঘন ও উজ্জ্বল হয়।
অন্যান্য উপকারিতা
চুল ও ত্বক ছাড়াও, জবা ফুল ও পাতা দিয়ে তৈরি চা ও অনান্য মিশ্রণ খুব উপকারী। জবা পাতা দিয়ে তৈরি চা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের সমস্যার ক্ষেত্রে ভাল কাজ দেয়। এতে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে এবং শরীরে স্বস্তি আসে। একইসঙ্গে অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্যও জবা উপকারী। এর নিয়মিত সেবনে শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়ে।
এছাড়াও জবা-চা শরীরে কলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখে, সর্দি-কাশি সারায় এবং মুখের ঘা থেকে মুক্তি দেয়।
সম্ভাবনা রয়েছে ক্ষতিরও!
ডক্টর রাজনের কথায়, "আয়ুর্বেদ, নেচারোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি অথবা অ্যালোপ্যাথি – চিকিৎসার যে কোনও শাখাই হোক না কেন, ওষুধ সবসময় বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে খাওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ওষুধ খেলে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।"
জবা ফুল বা এই সম্পর্কিত কোনও ওষুধ, আয়ুর্বেদিক বা নেচারোপ্যাথি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে তবেই একমাত্র খাওয়া উচিত। তার কারণ অনেক ক্ষেত্রে এর সেবন ক্ষতিকারকও হতে পারে। উদাহরণ, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা বা ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট করাচ্ছেন এমন মহিলাদের জন্য জবা-চা ক্ষতিকর, কারণ এটা শরীরের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং রজঃস্রাব ঘটাতে পারে। গর্ভপাতেরও সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়াও যে মহিলারা হরমোন চিকিৎসা করাচ্ছেন বা জন্মনিরোধক ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদেরও এটা খাওয়া উচিত নয়। কম রক্তচাপ আছে এমন মানুষদেরও জবা-চা খাওয়া উচিত নয়, কারণ তা রক্তচাপ আরও কমিয়ে দিতে পারে।
যার উপকারিতা আছে, তার আবার কিছু অসুবিধাও থাকে। তাই নিজের শারীরিক অবস্থা বুঝে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই কোনও ওষুধ খাওয়া উচিত। না হলে রোগের উপশমের বদলে তা আরও খারাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে।