রায়গঞ্জ, 16 অগস্ট: মঙ্গলবার রাতে গোষ্ঠীসংঘর্ষের জেরে গুলিবিদ্ধ হয় একাধিক তৃণমূল কর্মী সমর্থক । ফলে বুধবার দুপুর থেকেই চাপা উত্তেজনা ছিল উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের কমলাগাঁও সুজালি গ্রাম পঞ্চায়েতের চোতরাগছ গ্রামের আতালডাঙি হাট এলাকায় । গোটা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে বেলা গড়াতেই নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে । আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় একটি বাড়িতে ।
মূলত তৃণমূলেরই দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে এই বিবাদ । তারই জেরে চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের গোষ্ঠীর একজনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের অপর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে । স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস আলি বলেন, "এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয় । সারাদিন কাজকর্ম করার পরে সন্ধ্যাবেলা বাজারে জিনিসপত্র কিনতে গেলে নির্দল সমর্থকরা আমাদের উপরে হামলা করে। আমরা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছি এই কারণে আবদুল হকের নেতৃত্বে সাধারণ নিরীহ মানুষ এবং তৃণমূল কর্মীদের ওপরে গুলি চালানো হয়েছে । চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের মেয়ে নির্দল থেকে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁকে আমরা ভোট না দেওয়ার জন্যেই এই ঘটনা ।"
অপরদিকে, এই ঘটনায় চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমান বলেন, "ওরাই নির্দল ওরাই তৃণমূল । তৃণমূল থেকে টিকিট দেয়নি বলেই ওরা নির্দলে দাঁড়িয়েছিল, অন্য কোন দলে যায়নি । ওরা তৃণমূল দলই করে । গতকাল যে পার্টি অফিসে গন্ডগোল হয় সেটি তৃণমূলেরই পার্টি অফিস । পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি এলাকা শান্ত করার জন্য । ওখানকার নেতৃত্ব যদি অশান্তি থামাতে না পারে তাহলে অশান্তি আরও বাড়বে ।"
আরও পড়ুন: তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে উত্তপ্ত ইসলামপুর, আহত কর্মীদের দেখতে হাসপাতালে জেলা সভাপতি
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের কমলাগাঁও সুজালি গ্রাম পঞ্চায়েতের চোতরাগছ গ্রামের আতালডাঙি-হাট এলাকায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বোমাবাজি এবং গুলি চালনার ঘটনা ঘটে । ঘটনায় প্রায় 20-22 জন গুলিবিদ্ধ হন । তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছে । ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয় গোটা এলাকাজুড়ে । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ইসলামপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী । আহতদের অভিযোগ, তাঁরা তৃণমূল কর্মী । জেলা পরিষদ আসনে নির্দল প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার কারণে তাদের ওপরে গুলি চালানো হয়েছে । অভিযোগের তির সুজালি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আবদুল হক ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে ।
প্রসঙ্গত, উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের 4 নম্বর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন মৌসুমী খাতুন । এবার তিনি তৃণমূলের টিকিট না পাওয়ায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নেমেছিলেন চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানের মেয়ে আরজুনা বেগম । নির্বাচনে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী মৌসুমী খাতুন । এই প্রার্থী পদ নিয়ে শুরু থেকেই সেখানে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব লেগেই ছিল । তারই অঙ্গ হিসেবে মঙ্গলবার এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলেই জানা গিয়েছে স্থানীয় সূত্রে ।
ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ইসলামপুর হাসপাতালে আসেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল, ইসলামপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি জাকির হোসেন, ইসলামপুরের যুব তৃণমূল নেতা কৌশিক গুণ-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব । তাঁরা অবশ্য এই গোষ্ঠীকোন্দলের বিষয়টি এড়িয়ে যান । যদিও বুধবার নতুন করে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয় । চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের এক অনুগামী ও তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বধির জামালের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ।
তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বধির জামালের মা আসিনা খাতুন বলেন,"প্রায় 500 লোক এসে আমাদের বাড়িতে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় । আমার ছেলে গত পরশুদিন চোপড়ার বিধায়কের কাছে গিয়েছে । গতকালও আমার ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করছিল কানাইয়ালাল আগারওয়ালের লোকজন । আজ আবার এসে আগুন লাগিয়ে দিল । খুব আতঙ্কে রয়েছি ।"
আরও পড়ুন: গুলিতে নিহত 'বিধায়ক ঘনিষ্ঠ' জয়ী তৃণমূল প্রার্থী, কাঠগড়ায় দলের অন্য গোষ্ঠী
অন্যদিকে গতকালকের ঘটনার মূল অভিযুক্ত ওই এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আবদুল হকের দাবি, তাঁর লোকেরা পার্টি অফিসে বসেছিলেন । তখনই তাঁদের লোকজনের উপরে হামলা চালানো হয় । এরপরে তাঁরা সেখান থেকে পালিয়ে যান । পরে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে গুলি চালিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন ।
তাঁর কথায়, "আমি প্রায় একমাস বাইরেছিলাম । এলাকায় ঢুকতে দেয়নি । এখন যদি কেউ আমাকে কালকের ঘটনায় দোষ দেয় তাহলে আমার কিছু করার নেই । আজ আমাদেরই মেম্বার বধিরের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে । এখানে দুটো গোষ্ঠী হয়েছে একটি বিধায়ক হামিদুল রহমানের অপরটি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের । কে এই গণ্ডগোল গুলো করাচ্ছে তা এখনই বলব না । সময় আসলেই বুঝতে পারবেন ।" তবে এই গোটা ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।