রায়গঞ্জ, 23 মার্চ: একদিকে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে একের পর এক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হচ্ছে । অন্যদিকে তার প্রভাব এসে পড়ছে চাকরিরত শিক্ষক ও ব্যাংকের উপর ৷ নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের জেরে তাই বেজায় বিপাকে পড়েছে রায়গঞ্জ সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক ৷ কারণ এই ব্যাংক থেকেই চাকরি বাতিল হওয়া 35 জন শিক্ষকের ঋণ রয়েছে ৷ যার পরিমাণ প্রায় 1 কোটি 54 লক্ষ টাকা ৷ অনাদায়ী ঋণের পরিমান বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক পরিচালনায় সমস্যায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ । মাঝখানে 2014-2017 সালে নিয়োগ হওয়া শিক্ষকদের লোন দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছিল ৷ তবে বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে লোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ । আর এতেই চরম সমস্যায় পড়েছেন ওই সময়কালে চাকরি পাওয়া শিক্ষকেরা (Teachers facing trouble to getting loans) ।
তবে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাম ও তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনগুলি । উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় তিন ব্লকে মোট 17টি শাখা নিয়ে রায়গঞ্জ সেন্টাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক । রাজ্য সরকারের নির্দেশে প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, অশিক্ষক কর্মিদের বেতন এই কো-অপারেটিভ ব্যাংক থেকেই হয় । ব্যাংক থেকে বেতন হওয়ার কারণে শিক্ষকদের চাহিদা মতো মোটা টাকা ঋণ দেয় কো-অপারেটিভ ব্যাংক ।
নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসার পর আদালতের নির্দেশে প্রথম পর্যায়ে এই ব্যাংকের অধীনে 35 জন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে । এই 35 জন শিক্ষককের ঋণের পরিমান 1 কোটি 54 লক্ষ টাকা । চাকরি বাতিল হওয়া 35 জনের মধ্যে 4 জন শিক্ষক আবার গৃহ ঋণ নিয়েছেন । গৃহ ঋণ নেওয়ার কারণে তারা জমি বন্ধক দিয়েছিলেন । বাতিল এই 4 শিক্ষক নিজেদের জমি উদ্ধারের জন্য ঋণ পরিশোধে উদ্যোগ নিচ্ছেন । সেই কারণেই এই 4 বাতিল শিক্ষকের টাকা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে । তবে বাকি 31 জন শিক্ষকের পার্সোনাল লোনের টাকা পাওয়ার আশা করছে না ব্যাংক ।
এছাড়াও আদালত যে সমস্ত শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের চাকরি বাতিল করেছে তাদের পূর্নাঙ্গ তালিকা এখনও ব্যাংক হাতে পায়নি জেলা শিক্ষা দফতর থেকে । তালিকা হাতে না-পেলেও সূত্র মারফত তারা জানতে পেরেছে, বাতিল শিক্ষকদের প্রায় এগারো কোটি টাকা ঋন দিয়েছেন । এই পরিস্থিতিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক পরিচালনা করাতে তাদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে । এই তথ্য সামনে আসার পর শিক্ষকদের ঋণ দেওয়া বন্ধ রেখেছিল কো-অপারেটিভ ব্যাংক । কিন্তু অন্যান্য ব্যাংক শিক্ষকদের ঋণ দেওয়া চালু করায় তাদেরকেও শিক্ষকদের লোন চালু করতে হয়েছে । সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের বিশেষ গ্যারান্টার দিয়ে ঋণ নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে রায়গঞ্জ সেট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান তিলক চৌধুরী ।
আখেরে ঋণ না দেওয়ার জন্যই এই নিয়ম চালু করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা । তৃণমূল শিক্ষক সংগঠন জানিয়েছে, প্রত্যেক শিক্ষকই ঋণ পাওয়ার অধিকারি ৷ রায়গঞ্জ সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক যদি ঋণ না দেয় তবে অন্য ব্যাংকে শিক্ষকদের অ্যাকাউন্ট পাঠিয়ে দিক । সেই ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হবে । তবে বাম শিক্ষক সংগঠনের দাবি, যেহেতু রাজ্য সরকার এই শিক্ষকদের নিয়োগ করেছিল তাই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও সরকারকেই গ্যারান্টার হতে হবে ।
আরও পড়ুন: ব্যাংকে 48 টাকা বিমার কিস্তি দিয়ে দু'লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেল মৃতের পরিবার