রায়গঞ্জ, 22 এপ্রিল: কালিয়াগঞ্জে মৃতার মায়ের দাবিকে সম্মতি জানিয়ে খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পরিকল্পিতভাবে এই খুনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বলেও অভিযোগ বিজেপির। পাশাপাশি শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনও যাতে পৃথকাভাবে তদন্ত করে; সেই দাবিও জানালেন সুকান্ত।
কালিয়াগঞ্জে ওই কিশোরীকে নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ মৃতার পরিবারের ৷ শুক্রবার স্থানীয় একটি পুকুরে কিশোরীর দেহ মিলতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসী ৷ এমনকী মৃতদেহ রাস্তায় রেখে বিক্ষোভও দেখাতে থাকে গ্রামবাসীরা ৷ ওইদিন দুপুরেই জাভেদ আহমেদ নামে একজন আত্মসমর্পণ করে বলে পুলিশ সূত্রে খবর ৷ রাতে রায়গঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ অন্যদিকে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে অনড় মৃতার মা ৷ এবার কিশোরী খুনের ঘটনায় রায়গঞ্জের পুলিশ সুপার এবং কালিয়াগঞ্জ থানার আইসিকেও তদন্তের আওতায় আনার দাবি করেছেন সুকান্ত মজুমদার ।
কিশোরীর খুনের ঘটনায় এখনও থমথমে কালিয়াগঞ্জ থানার ওই গ্রাম ৷ ঘটনার আঁচ পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতেও। শুক্রবার খুনের ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং মৃত কিশোরীর আত্মীয়রা দেহ আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখায়। দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে পড়ে লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাসের সেলও ফাটাতে হয় পুলিশকে ৷ এরপর দেহ উদ্ধার করে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। পুলিশের এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল এবং কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়।
শুক্রবার ঘটনার খবর পাওয়ার পরই বিজেপি বিধায়করা ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের আটকে দিয়েছিল বলে অভিযগ। বিধায়কদের পুলিশ যেতে না-দিলেও, এদিন ঘটনাস্থলে আসেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, রায়গঞ্জের সংসদ দেবশ্রী চোধুরী, সাংসদ খগেন মুর্মু-সহ একাধিক বিজেপি বিধায়ক। তাঁদের আসার আগেই অবশ্য দেহ ময়নাতদন্তের পর বাড়িতে আনা হয়। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, রাজবংশী সম্প্রদায়ের মহিলাদের উপর একের পর আক্রমণ নেমে আসছে। পরিকল্পিতভাবে ওই কিশোরীকে খুন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। পাশাপাশি মৃতার মায়ের দাবি মেনে অনুযায়ী ঘটনার তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার জন্য তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সুকান্ত।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি জানান, এই মামলায় আদালতের সমস্ত ব্যয়ভার বিজেপি বহন করবে ৷ পুলিশ সুপার এই খুনের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাইছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি । যার জেরে, দল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানাবে। তারা তদন্ত করলে খুনের প্রকৃত কারন জানা যাবে বলেই দাবি সুকান্তর। দেহ দাহ করা হলে সিবিআই তদন্তে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এই আশঙ্কা করেই কিশোরীর দেহ বিজেপি নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই এদিন বাড়ির সামনেই সমাধিস্থ করা হয়।
আরও পড়ুন: এখনই পঞ্চায়েত নির্বাচন হলে তৃণমূলের হার 100 শতাংশ নিশ্চিত, দাবি সুকান্তর
অন্যদিকে, শুক্রবার বিকালেই মৃতার মা থানায় চারজনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মেয়ের খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তেরও দাবি করেছেন তিনি । অবশ্য রায়গঞ্জের পুলিশ সুপার সানা আকতার জানিয়েছেন, মৃতদেহের পাশ থেকে একটি বিষের শিশি উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত-সহ দু'জনকে গ্রেফতার করেছে।