রায়গঞ্জ ও পুরুলিয়া, 11 ফেব্রুয়ারি: আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের (Adivasi Sengel Abhiyan) ডাকা 'রেল-রোড চাক্কাজাম' কর্মসূচির (Rail and Road Block Agitation) জেরে বিপর্যস্ত উত্তর দিনাজপুর থেকে শুরু করে পুরুলিয়া ৷ ব্যাহত স্বাভাবিক যানচলাচল ৷ আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের উত্তর দিনাজপুরের জেলা সভাপতি দুর্গা মুর্মু এই প্রসঙ্গে জানান, মোট পাঁচদফা দাবিকে সামনে রেখে তাঁরা এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন ৷ এর জেরে শনিবার সকাল থেকেই কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে রায়গঞ্জ শহর ৷ একই ছবি ধরা পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া শহরেও ৷
দুর্গা মুর্মুর অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে বঞ্চনা করছে দেশের সরকার ৷ ঝাড়খণ্ডের পরেশনাথ পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে আদিবাসীরা তাঁদের ধর্মগুরু মারাং বুরুর আরাধনা করে আসছেন ৷ অথচ, সেই পাহাড়কেই জৈন ধর্মাবলম্বীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৷ এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আদিবাসী সমাজ ৷ তাদের বক্তব্য, আদিবাসীরা ভারতীয় ভূখণ্ডের আদি বাসিন্দা ৷ অথচ, স্বাধীনতার 75 বছর পরও তাঁরা উপেক্ষিত ৷ অন্যদিকে, জৈন ধর্মবলম্বীরা সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সরকারের কাছ থেকে অনেক বেশি সুবিধা পাচ্ছেন ৷ এই 'দ্বিচারিতা'র অবসান চান আদিবাসীরা ৷ তার জন্যই অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল-রোড চাক্কাজামের ডাক দিয়েছেন তাঁরা ৷
আরও পড়ুন: দক্ষিণ-পূর্ব রেলে অবরোধ আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের, চরম ভোগান্তি যাত্রীদের
দুর্গা মুর্মু বলেন, "যতক্ষণ না আমাদের দাবি মানা হবে, সরকারের তরফে আমরা কোনও আশ্বাস পাব, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে ৷ আমরা রাস্তাতেই রাত কাটাব, রাস্তাতেই খাব, শোব ৷ তার সমস্ত বন্দোবস্ত করে এসেছি আমরা ৷ জানি, এর জন্য আমজনতার সমস্যা হবে ৷ তার জন্য আমরা তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ৷ তবে, আমরা চাই তাঁরাও আমাদের দাবিদাওয়াগুলি বুঝুন এবং আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করুন ৷"
এই কর্মসূচির আওতায় শনিবার সকাল থেকেই রায়গঞ্জ থানার অন্তর্গত শিলিগুড়ি মোড়ে 34 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন আদিবাসীরা ৷ খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন ডিএসপি রিপন বল, রায়গঞ্জ থানার আইসি সৌরভ সেন ৷ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা ৷ কিন্তু, তাতে লাভ হয়নি ৷ আন্দোলনকারীরা দীর্ঘক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভ অনড় থাকেন ৷ এই অবরোধের জেরে 34 নম্বর জাতীয় সড়কে একের পর এক লরি সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ৷ ট্রাফিক সামলাতে রাস্তায় নামতে হয় ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিক দিলীপ রায়কে ৷
অন্যদিকে, পুরুলিয়ায় রেললাইনে নেমে অবরোধে সামিল হন আদিবাসীরা ৷ তাঁদের আন্দোলনের জেরে এদিন সকাল থেকেই পুরুলিয়া-চাণ্ডিল শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয় ৷ কাঁটাডি রেলস্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলে ৷ ফলে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের একাধিক ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে ৷ পাশাপাশি, সড়কপথেও সমান তালে অবরোধ, বিক্ষোভ চলতে থাকে ৷ এর জেরে পুরুলিয়া-জামশেদপুরের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী 18 নম্বর জাতীয় সড়ক স্তব্ধ হয়ে যায় ৷