রায়গঞ্জ, 21 নভেম্বর : চোর-ডাকাত নিয়েই তাঁর সারাদিন কাটে । বাড়ি ফিরে সময় দিতে হয় ছেলেমেয়েদের জন্যেও । কিন্তু এতকিছুর পরও শিল্পীসত্তাকে ফেলতে পারেননি রায়গঞ্জ পুলিশের কনস্টেবল বিপ্লবকুমার দাস । রাস্তায় ফেলে দেওয়া কাঠের টুকরো, পাথরের বড় চাঁই বা ফেলে দেওয়া সানমাইকা বাড়িতে নিয়ে এসে নিজের হাতযশে অপরূপ সব শিল্পকর্ম তৈরি করেন বিপ্লববাবু । নিজের হাতে তৈরি এইসব শিল্পকর্মেই ঘর সাজিয়েছেন তিনি ।
আদতে ইসলামপুরের বাসিন্দা হলেও 2010 সাল থেকে রায়গঞ্জে বসবাস করেন বিপ্লববাবু । তাঁর স্ত্রী শালিনী দাস সাহা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা । তাঁদের এক মেয়ে এক ছেলে রয়েছে । পুলিশে কর্মরত থাকায় স্বাভাবিকভাবেই সময় পান না বিশেষ । জানালেন, ছোটোবেলায় আঁকা শিখতেন । তবে আর্থিক সমস্যা থাকায় সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি শেষ পর্যন্ত । তবে ঝোঁক ছিলই ।
তাই বছর দুয়েক ধরে যেকোনও জায়গায় ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র সংগ্রহ করা শুরু করেন বিপ্লববাবু । ইতিমধ্যেই পাথরে এবং কাঠের উপরে মহেঞ্জোদারোর বিখ্যাত ডান্সিং গার্ল তৈরি করে ফেলেছেন তিনি । এছাড়াও হরিণের মুখের আদলে তৈরি করা হয়েছে বিশাল একটি দেওয়াল ঘড়ি । সানমাইকার উপর ফুটিয়ে তুলেছেন এক অদ্ভূত প্রতিরূপ । এছাড়াও নানা ধরনের প্রতিকৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাঁর ঘরের আনাচে-কানাচে । গুরুদক্ষিণা দিতে ফেলে দেওয়া কাঠের উপর প্রতিকৃতি তৈরি করে উপহার দিয়েছেন তাঁর গুরুদেবকে । তাঁর দাবি ওই উপহার তাঁর কাছে সবচেয়ে সেরা শিল্পকর্ম ।
বিপ্লববাবু বলেন, "ছোটো থেকেই হাতের কাজের উপর আমার খুব শখ ছিল । কিন্তু চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর সেই অর্থে আর কাজ করে উঠতে পারিনি । আমার গুরুদেবের কাছে দেখেছিলাম তিনি একটি কাঠের টুকরো দিয়ে বাউল তৈরি করেছিলেন । সেটাই আমার অনুপ্রেরণা ।"
গর্বিত তাঁর স্ত্রী শালিনী দেবীও । তিনি বলেন, "আমার খুব ভালো লাগে, যখন আমার স্বামী এত ভালো হাতের কাজ করেন, সে বিষয়ে প্রশংসা পাই । আমার সহকর্মীরা ওর হাতের কাজের নিপুণতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল । তাই তারা এই বিষয়ে বারবার প্রশংসা করে থাকেন । আমি ওর তৈরি করে দেওয়া সামগ্রী দিয়ে ঘর সাজাতে ভালোবাসি ।"