রায়গঞ্জ, 10 মে: দুঃসময় কেটে গেছে বেশ কিছুদিন আগেই । তবে এখনও সেই সময়কার কথা মনে পড়লে বুক কাঁপে স্বপ্না দেবীর। কীভাবে সন্তানকে বাঁচানো যায় সেই চিন্তাতে বহুদিন রাতে ঘুমোতে পারেননি তিনি । শেষমেশ নিজের কিডনি দিয়ে সন্তানের জীবন বাঁচিয়েছেন । এই মাতৃ দিবসে রায়গঞ্জের বহু মায়ের অনুপ্রেরণা নেতাজি পল্লির বাসিন্দা স্বপ্না রায় ।
বছর দেড়েক আগে হঠাৎই স্বপ্না রায়ের 30 বছরের ছেলে অমিতের দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে যায় । বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে ছোটাছুটি করলেও কোনওভাবেই ছেলেকে সুস্থ করার পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না স্বপ্না দেবী । নিতান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য অমিত শেষমেষ কোয়েম্বাটুর চিকিৎসা করাতে যান । সেখানে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই বলে জানিয়ে দেন । আর্থিক সঙ্গতি না থাকার কারণে বাইরের কোনও ডোনার খোঁজার সাহস দেখায়নি রায় পরিবারের সদস্যরা । পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই কারও কিডনি দান করার কথা উঠতে থাকে । কিন্তু বেশি দেরি করলে কোনওভাবেই ছেলেকে ফিরে পাবেন না এই চিন্তা বারবার ঘুরপাক খেতে থাকে স্বপ্না দেবীর মাথায় । নিজের কিডনি দিয়ে ছেলের জীবন বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি । বর্তমানে নিজে এবং ছেলেকে সুস্থ রাখার সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি । মা-ছেলে দুজনেই একটি কিডনিতে বাঁচার অভ্যাস করে ফেলেছেন ।
ছেলের কিডনি নষ্ট হওয়ার কথা শুনে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল স্বপ্না রায়ের । সেই দুঃসহ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পেরে বর্তমানে খুশি তিনি । তাঁর কথায়, "আমাদের ডোনার খোঁজার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই । তাই শেষমেষ নিজের কিডনি দিয়ে ছেলের প্রাণ বাঁচানোর জন্যই চেষ্টা করেছি । সেক্ষেত্রে যদি আমার মৃত্যুও হয়ে যেত তাও পরোয়া করতাম না । প্রত্যেক মা নিজের সন্তানকে ভালোবাসেন । তাই আমি বিশেষ কিছু করেছি বলে মনে করি না ।" সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পিছপা হয় না মায়েরা তা প্রমাণ করেছেন স্বপ্না দেবী । ছেলে অমিতের কাছে তাই স্বপ্না দেবীই ভগবান । সুস্থ জীবন ফিরে পেয়ে তিনি বলেছেন, "আমার কাছে আমার মা সত্যিই দেবীরূপে রয়েছেন । কারণ ভগবানকে আমরা দেখতে পাই না । তাই মা রূপেই ভগবান আমাদের মধ্যে থাকেন । আমার কিডনি খারাপ হয়ে যাওয়ার পর মা তাঁর কিডনি দিয়ে আমাকে বাঁচিয়েছেন ।"
রায়গঞ্জে প্রসিদ্ধ চিকিৎসক শংকর প্রসাদ দাস বলেন, "প্রতিবছর প্রচুর মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে । তবে এই বিষয়ে শিক্ষার অভাব থাকায় অনেকেই অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে ভয় পান । অনেক পরিবারের সদস্যরাও বাইরে থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য ডোনার চেয়ে থাকেন । রায়গঞ্জের এই মহিলা যেভাবে ছেলেকে নিজের কিডনি দিয়ে বাঁচিয়েছেন, তাতে মাতৃ দিবসে বিশেষ সম্মান অবশ্যই প্রাপ্য ।"