হেমতাবাদ (রায়গঞ্জ) ২৪ মে : চলছে কার্যত লকডাউন ৷ নেই কাজ, বন্ধ হয়ে গিয়েছে অর্থ উপার্জনের পথ । এই পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের মুখে কী ভাবে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন দিনমজুর প্রদীপ মণ্ডল ৷ উত্তর দিনাজপুর জেলার দক্ষিণ হেমতাবাদের দিন আনি দিন খাই পরিবারের তিনি ছাড়াও মা ও ভাই রয়েছেন ।
সংসার প্রতিপালনের কোনও উপায় না পেয়ে পরিবার নিয়ে আত্মহত্যার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন প্রদীপ মণ্ডল, তাঁর ভাই ধীরেন্দ্রনাথ মণ্ডল আর তাঁদের বৃদ্ধা মা রেবতী মণ্ডল । এই খবর পেয়ে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে হেমতাবাদ ব্লক প্রশাসন । সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এগিয়ে এসেছে ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব ।
কিছুদিন আগেই উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ ব্লকের চৈনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাডোমা গ্রামে আগুন লাগিয়ে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের আত্মহত্যা হেমতাবাদ ব্লক প্রশাসনকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল । সেই হেমতাবাদ ব্লকের দক্ষিণ হেমতাবাদ গ্রামের রেবতী মণ্ডলের পরিবার চরম অভাবের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। একসময় অসহায় বৃদ্ধা পরিচারিকার কাজ করতেন ৷ অসুস্থতার কারণে এখন আর পারেন না ৷ দুই ছেলে লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে । তিনি নিজেও অসুস্থ। বার্ধক্যভাতা আর রেশন পেয়ে থাকেন । রেবতীদেবী যে মাসিক একহাজার টাকা ভাতা পান, তা ওষুধ কিনতেই খরচ হয়ে যায় । ছেলেরা দিনমজুরের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতেন । বর্তমানে তাও বন্ধ । তাঁদের বসবাসের একটি মাত্র ঘর । জরাজীর্ণ সেই ঘরের অবস্থাও খারাপ । বৃষ্টিতে ঘরে জল পড়ে, প্রায় বসে থেকে কাটাতে হয় রাত । সরকারি প্রকল্পে ঘরের জন্য একাধিকবার আবেদন করেছেন কিন্তু ঘর জোটেনি। ফলে একচিলতে কুঁড়েঘরেই গাদাগাদি করে দিন গুজরান করতে হচ্ছে তাঁদের ।
প্রদীপের কথায়, ‘‘বেঁচে থাকা এবং মরে যাওয়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা । মাকে বাঁচিয়ে রাখতে ওষুধ কিনতেই প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে যাচ্ছে । ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন ৷ এভাবে বেঁচে থাকা হয়তো আর সম্ভব হবে না, তাই আমরা সপরিবারে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি ।"
আরও পড়ুন : যশের প্রস্তুতি পর্যালোচনায় মমতা-সহ 3 মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শুরু শাহের
এই অসহায় পরিবারের সমস্যার কথা নজরে আসে হেমতাবাদ ব্লক প্রশাসনের । হেমতাবাদ বিডিও লক্ষ্মীকান্ত রায়ের নির্দেশে সরকারি সাহায্য নিয়ে ব্লকের আধিকারিকেরা রেবতীদেবীর বাড়িতে হাজির হন । সরকারি ত্রাণসামগ্রী ছাড়াও নগদ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে বৃদ্ধার হাতে । সরকারি প্রকল্পে ঘর তৈরির আশ্বাস-সহ তাঁর দুই ছেলেকেই ১০০ দিনের প্রকল্পে যুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও ।
পাশাপাশি রবিবার দুপুরে রেবতীদেবীর বাড়ি যান হেমতাবাদ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সদস্যা ও তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নেতৃত্ব । ওই পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী ও আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়া হয় । পাশাপাশি বিপদে পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয় ।