রায়গঞ্জ, 30 সেপ্টেম্বর: পুজোর চারদিন মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ৷ পুজোর সব কাজ করেন বাড়ির পুরুষরা । রায়গঞ্জের সেনবাড়ির দুর্গাপুজোর এরকমই নিয়ম ৷ পুজোর চারদিন মন্দিরের বাইরে চাতালে দাঁড়িয়ে মায়ের দর্শন করতে হয় সেনবাড়ির মহিলাদের ৷ এই নিয়মই চলে আসছে তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে ৷ বর্তমান প্রজন্মের মহিলাদের মনে আক্ষেপ থাকলেও পরিবারের মঙ্গল কামনায় সকলেই হাসিমুখে এই নিয়ম মেনে নিয়েছেন ৷
উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রাচীন পুজোর মধ্যে রায়গঞ্জ শহরের সুদর্শনপুরের সেন বাড়ির দুর্গাপুজো অন্যতম । ওপার বাংলার যশোরের বরুণার জমিদার ছিল সেনরা ৷ প্রায় 600 বছর আগে চতুর্দশ শতাব্দীতে সেনবাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন ৷ এরপর তাঁদের বংশধররা বাংলাদেশেই পুজো করতেন ৷
দেশভাগের সময় সেন পরিবার চলে আশে এপার বাংলার অধুনা উত্তর দিনাজপুরে ৷ 1952 সালে সেই সময়ের সেন পরিবারের কর্তা শৈলেন সেন ওপার বাংলার বাড়ি থেকে দুর্গামণ্ডপের মাটি নিয়ে আসেন রায়গঞ্জে ৷ তারপর সেই মাটি দিয়েই রায়গঞ্জের সুদর্শনপুরে দুর্গামন্দির স্থাপন করে পুজো শুরু করেন ।
কথিত আছে, প্রায় তিনশো বছর আগে পুজোর সময় ঋতুমতী অবস্থায় বাড়ির কোনও মহিলা মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন ৷ এরপরই বড় ধরনের অঘটন ঘটে সেন পরিবারে । সেই থেকে পুজোর সময় মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় ৷ সেই থেকে দুর্গাপুজোর সময় যাবতীয় কাজ বাড়ির পুরুষরাই করে আসছেন । এই নিয়ম নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও বাড়ির মহিলারা পরিবারের মঙ্গলের কথা ভেবে পুজোর সময় এই নিয়ম মেনেই চলেন ৷
এছাড়াও সেনবাড়ির দুর্গাপুজোয় সপ্তমী থেকে নবমী প্রতিদিন নিয়ম করে পাঁঠাবলি দেওয়া হয় । সেন বাড়ির পুজো দেখতে বহু মানুষ আসে ৷ সেনবাড়ির মাদুর্গা বেশ জাগ্রত বলে মানুষের বিশ্বাস ৷ তাই দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ মানত করতে আসে ৷ আবার মনস্কামনা পূরণ হলে ফের পুজো দিতে আসে সেনবাড়িতে ।
একান্নবর্তী পরিবারের অনেকেই ভিনরাজ্যে এমন কী বিদেশেও থাকেন ৷ কিন্তু পুজো শুরু হতেই পরিবারের সকলে এসে জড়ো হন রায়গঞ্জের সুদর্শনপুরের বাড়িতে ৷ পুজোর দিনগুলোতে হই হুল্লোড় করে কাটানোর পর সবাই আবার ফিরে যান ৷ সব আনন্দের মাঝেও বাড়ির মহিলাদের কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা থেকেই যায় ৷ পুজোর কটা দিন যে মায়ের মন্দিরে তাঁরা যেতে পারেন না ৷ করতে পারেন না কোনও আচার ৷