রায়গঞ্জ, 21 জুলাই : এপারে বসত বাড়ি আর কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে কর্মক্ষেত্র ৷ এমনই হয় সীমান্তবর্তী কৃষকদের জীবন ৷ উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লকের কৃষকদের ক্ষেত্রে তা একই ৷ একদিকে বিএসএফের শাসানি ৷ অন্যদিকে আবার বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের ফসল কেটে নেওয়ার ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সীমান্তবর্তী গ্রামের এই কৃষকরা । সমস্যা সমাধানের জন্য বহুবার তাঁরা ব্লক প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীদের দ্বারস্থ হয়েছেন ৷ কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি । বছরের পর বছর ভুগছেন হেমতাবাদ ব্লকের কৃষকরা ৷ তাই তাঁদের দাবি, কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে তাঁদের চাষবাস এবং ফসল রক্ষার্থে পদক্ষেপ করতে হবে প্রশাসনকে ৷ হেমতাবাদের বিডিও কৃষকদের এই সমস্যাগুলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন ।
পূর্বপুরুষদের আমল থেকে অবিভক্ত বাংলায় এমন কোনও সমস্যা ছিল না ৷ দূরের কৃষিজমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা ছিল না । দেশভাগের পর মাঝে উঠেছে কাঁটাতারের বেড়া । উত্তর দিনাজপুর জেলার রয়েছে 227 কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত ৷ নজরদারিতে রয়েছে বিএসএফ ৷ দেশভাগের পর বহু কৃষকের বাড়িঘর পড়েছে ভারতীয় ভূখণ্ডে আর চাষের জমি পড়েছে কাঁটাতারের ওপারে ৷ হেমতাবাদ ব্লকেও এমন অনেক কৃষক রয়েছেন ৷
বিএসএফের নির্দিষ্ট করা সময় অনুযায়ী সীমান্তের গেট খোলা আর বন্ধ করা হয় ৷ সেই সময় অনুযায়ীই কৃষকদের ওপারে চাষ করতে যেতে হয় ৷ তাই বিএসএফের নিয়মের উপর নির্ভর করে তাঁদের কৃষিকাজ । এতে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হয় হেমতাবাদ ব্লকের মাকড়হাট, কেশবপুর, সন্তোরা, মাটিয়াডোপ, চৈনগর, বামোইর, মালন ও ভানইল গ্রামের কৃষকদের । কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে রয়েছে তাঁদের বিঘা বিঘা চাষযোগ্য জমি, যা দিয়েই চলে তাঁদের জীবন-জীবিকা । সেসব জমিতে চাষ না করলে সংসার নির্বাহও সম্ভব হবে না ৷ তাই বিএসএফের ধার্য করা কঠিন নিয়ম মেনেই চাষবাস করতে হয় তাঁদের ৷
সমস্যা শুধু এই পর্যন্তই থাকলেও হতো ৷ তবে এরও পর আছে চাষের জমিতে দুষ্কৃতী তাণ্ডব ৷ ওপারে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা অনেক সময়ই পাকা ফসল কেটে যায় ৷ গবাদি পশুও ছেড়ে দেয় ফলন্ত জমিতে ৷ সীমান্তবর্তী গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল, আব্বাস আলি ও পরিতোষ রায়দের অভিযোগ, "নামেই আমাদের জমি আছে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে । বিএসএফের কড়া নজরদারি আর শাসানির ভয়ে আমরা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারি না ৷ আর যদিওবা ফসল ফলাই তাহলেও বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা পাকা ফসল কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে বা তাদের গোরু-ছাগল এসে ফসল খেয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে । বছরের বেশিরভাগ সময়ই ঘরে ফসল তুলে আনতে পারি না আমরা । লাভজনক ভুট্টা বা পাটচাষ করতে গেলে বাধা দেয় বিএসএফ ।" তাঁদের আরও অভিযোগ, সীমান্তের ওপারে নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করার জন্য বিএসএফের ক্যাম্পে গিয়ে বেগারও খাটতে হয় কৃষকদের ।
এই সমস্যা দীর্ঘদিনের ৷ সমাধানে না প্রশাসন, না কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এগিয়ে আসেন । ফলে চরম দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামের কৃষকদের । সীমান্তবর্তী কৃষকদের এই সমস্যার বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন হেমতাবাদ ব্লকের বিডিও লক্ষ্মীকান্ত রায় ।
আরও পড়ুন : সীমান্তের সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ভারত-বাংলাদেশ সাইকেল মৈত্রী ব়্যালি