রায়গঞ্জ, 8 জুন : পরিবার পরিজন নিয়ে প্রায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার লোকসংগীত শিল্পীরা। প্রায় দেড় বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় অর্ধাহারে দিন যাপন করছেন শিল্পী ও তাঁদের সঙ্গতেরা। অনেকে বেছে নিয়েছেন আত্মহত্যার পথও। বেশকিছু শিল্পী রাজ্য সরকারের মাসিক এক হাজার টাকা করে ভাতা পান । তাঁদের দাবি, ওই ভাতা দিয়ে সংসার চলে না। রাজ্যের সরকার তাঁদের ভাতা একটু বাড়িয়ে দিক ।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে থেকে পৃথিবীজুড়ে করোনার সংক্রমণ ছড়ায় । করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন। বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত ধর্মীয় উৎসব সহ নানা সরকারি-বেসরকারি সব অনুষ্ঠান। কাজ হারান উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রায় 13-14 হাজার লোকশিল্পী সহ উত্তরবঙ্গের প্রায় 30 হাজার শিল্পী ও তাঁদের সঙ্গতেরা ।
সরকারি-বেসরকারি নানা অনুষ্ঠানে তাঁদের সংগীত পরিবেশন করে যে রোজগার হত তা দিয়েই চলত তাঁদের সংসার । শিল্পীরা ভেবেছিলেন 2020 সাল বিদায় নিতেই খুলে যাবে তাঁদের জীবিকার পথ। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই আবারও জারি হয়েছে কড়া বিধিনিষেধ , আবারও দাড়ি পড়েছে উৎসব-অনুষ্ঠানে ।
রায়গঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের প্রথিতযশা বাউল শিল্পী তরণি সেনমহন্ত আক্ষেপের সুরে জানিয়েছেন, তাঁদের দুঃখ কষ্টের কথা। বহু শিল্পী না খেতে পেয়ে মারাও গিয়েছেন, কেউবা আবার উপার্জনহীন হয়ে সংসার প্রতিপালন করতে না পারায় আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছেন।
2014 সাল থেকে রাজ্যে সরকার বেশকিছু শিল্পীদের মাসিক এক হাজার টাকা করে শিল্পী ভাতা প্রদান করছে । কিন্তু রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারের দেওয়া এক হাজার টাকায় পরিবার প্রতিপালন কী করে সম্ভব সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়। তাই উত্তর দিনাজপুর জেলার হাজার হাজার শিল্পীদের দাবি রাজ্য সরকার এই সঙ্কটময় মুহূর্তে তাঁদের ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে দিক ।
আরও পড়ুন : পরীক্ষা বাতিলে বিরূপ প্রভাব ? পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা
এই কঠিন সময়ে সরকার পাশে না দাঁড়ালে একদিন এই শিল্পীদের যন্ত্রে ধুলোর পাহাড় জমবে আর তাঁদের কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে হারিয়ে যাবে । আর শোনা যাবে না জেলার ঐতিহ্য বাউল আর খন বা ভাওইয়া । শুধুই শোনা যাবে " জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়, কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায় "।