দেগঙ্গা, 25 জুন : আমফানের সরকারি ক্ষতিপূরণ নিয়ে দেগঙ্গা পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে । এই অভিযোগ ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ আন্দোলন চালাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন । ক্ষতিপূরণ নিয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যদের স্বজনপোষণকে কাঠগড়ায় তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা । সোমবার এই ইস্যুতে উত্তাল হয়েছিল দেগঙ্গার BDO অফিস চত্বর । সেই ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল দেগঙ্গা ব্লক জুড়ে । ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এবার ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়ল তৃণমূল পরিচালিত দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতি । আজ দুপুরে দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে প্রধান, উপপ্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্যদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করলেন সভাপতি মফিদুল হক সাহাজি । বৈঠকে হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ এ কে এম ফারহাদ ও দেগঙ্গার BDO সুব্রত মল্লিক ।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ক্ষতিপূরণ নিয়ে কোথাও যদি অন্যায় হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে টাকা রিফান্ড করার ব্যবস্থা করা হবে । রিফান্ডের একটি ফরম্যাট এদিন পঞ্চায়েত প্রধানদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে । আমফানের তাণ্ডবে দেগঙ্গার 13টি পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাজ্য সরকারের তরফে ।ইতিমধ্যে সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ব্লকে ব্লকে । সেই ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় একাধিক অভিযোগ উঠেছে । পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও স্বজন পোষণের অভিযোগ তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন । এই নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ রয়েছে দেগঙ্গা পঞ্চায়েত এলাকায় ।
আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে সোমবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দেগঙ্গার BDO অফিস চত্বর ।দীর্ঘক্ষণ ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে । BDO অফিস ভাঙচুর করা হয় । যা নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা । ঘটনার জন্য শাসকদল বিরোধীদের দিকে আঙুল তোলে । পালটা তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছিলেন বিরোধীরা । আজকের বৈঠক থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে । পঞ্চায়েত সভাপতি মফিদুল হক সাহাজি বলেন, "তড়িঘড়ি কাজ করতে গিয়ে হয়তো কিছু ত্রুটি দেখা দিয়েছে । সেই ত্রুটি কাটাতে পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান ও কর্মাধ্যক্ষদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম ,।" তিনি আরও বলেন, “ক্ষতি না হওয়া সত্বেও প্রধান, উপপ্রধান কিংবা সদস্যদের ঘনিষ্ঠরা যদি ক্ষতিপূরণের 20 হাজার টাকা পেয়ে থাকেন, তাহলে তার তদন্ত করে সেই টাকা রিফান্ড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।পঞ্চায়েত প্রধানরা দায়িত্ব নিয়ে এই কাজ করবেন ।”
এই বিষয়ে জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ এ কে এম ফরহাদ বলেন, “13 টি গ্রাম পঞ্চায়েতের 223টি গ্রাম সংসদের জন্য 25টি তদন্তকারি দল গড়া হয়েছে । তারা তদন্ত করে দেখবেন ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসংগতি হয়েছে কিনা ।অসংগতি ধরা পড়লে টাকা রিফান্ড করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।রিফান্ডের ফরম্যাটের কপি প্রধানদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে । আগামীকাল থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে ।” দেগঙ্গা ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আমফানে ব্লকের 5,173টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।এরমধ্যে ছ'টি পঞ্চায়েতের ক্ষতিগ্রস্ত 2,100 জনকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়েছে ।বাকি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে তদন্ত শুরু হয়েছে । শীঘ্র সেই প্রক্রিয়া শেষ হবে ।"