রায়গঞ্জ, 1 সেপ্টেম্বর: ফের অমানবিকতার চিত্র ধরা পড়ল। স্থানীয় এক গৃহবধূর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনে তাঁর মাথার চুল কেটে, বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে রাস্তায় টেনে নিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল ওই এলাকারই একাধিক গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদীঘির ব্লক এলাকায়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলা জুড়ে।
ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে ব্লক ও পুলিশ প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই একজনকে আটক করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেলে এক গৃহবধূকে গণধোলাই দিয়ে মাথার চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় কিছু লোকজনের বিরুদ্ধে । বেশ কিছুক্ষণ টানা হ্যাঁচড়া ও ধস্তাধস্তির পর স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসী আহত ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে প্রথমে করণদিঘী গ্রামীণ হাসপাতালে ভরতি করা হয়। পরে তাঁকে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। আক্রান্ত ওই গৃহবধূর অভিযোগ, শুধু মারধরই নয়, তাঁর বাড়ির টাকা পয়সা, সোনা-সহ সমস্ত জিনিসপত্র লুঠ করা হয়েছে। প্রতিবাদ করায় তাঁর স্বামীকে বেঁধে রাখা হয় বলেও অভিযোগ।
ইতিমধ্যে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করে দোষীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এ ঘটনায় গৃহবধূর শ্বশুর দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তিনি বলেন, "আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। এসে দেখি সব লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। বাড়িতে যা ছিল সব লুট করে নিয়ে গেছে। আমার ছেলে এবং বৌমাকে মারধর করা হয়েছে। আমার বৌমা যদি দোষ করে থাকত তাহলে আমাকে জানাতে পারত। তা না করে এভাবে বাড়িতে এসে পরিবারের লোকজনকে মারধর করেছে এবং বাড়িতে লুটপাট চালিয়েছে। দোষীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।"
যদিও এ বিষয়ে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "এমন ঘটনা কোনওদিন আমরা দেখিনি। খুবই নিন্দনীয় ঘটনা ঘটানো হয়েছে।" যদিও এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে বলে অভিমত এলাকাবাসীর একাংশের ৷ তিনি আরও বলেন, "স্থানীয় পঞ্চায়েতটি এবছর বিজেপি জয়লাভ করেছে। আর এই পরিবারটি তৃণমূলকে সমর্থন করে।" সেই আক্রোশে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনুমান তার।
আরও পড়ুন: মা ও মেয়ের খুনে আসামী 'সাধু'র ফাঁসির সাজা শোনালেন বিচারক
যদিও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মানতে নারাজ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য। তিনি বলেন, "ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। প্রশাসন গোটা বিষয়টা দেখছে। এমন ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে সেদিকে নজর রাখা হবে।" এ বিষয়ে জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনা বলেন, "ঘটনার খবর ভিডিয়োর মাধ্যমে পেয়েছি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। একজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে। আমি আরও বিস্তারিতভাবে খোঁজ নিচ্ছি। এবং যা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার তা করা হবে।"