সন্দেশখালি, 5 জানুয়ারি: শেখ শাহজাহান ! এই নামটি নিয়েই এখন শুরু হয়েছে জোর চর্চা ! এর কারণ অবশ্যই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির আধিকারিকদের রক্তাক্ত হওয়া । তা-ও আবার শাহজাহানের মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতার ‘ডেরা’তে গিয়ে । ফলে যা হওয়ার, তাই হয়েছে ! তবে, এই ঘটনা নতুন কিছু নয় ! আগেও এই ধরনের ঘটনার সাক্ষী ছিল সন্দেশখালি ।
সেটা খুব বেশিদিনের পুরনো ঘটনাও নয় ! 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে সন্দেশখালিতে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছিল রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরিকে । তাঁর গাড়িতেও ভাঙচুর চালিয়েছিল হামলাকারীরা । সেই ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল সন্দেশখালির দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের ।
ঘটনার পর মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি শেখ শাহজাহানকে 'দুষ্কৃতী' অ্যাখা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানিয়েছিলেন । কিন্তু, ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, তাঁর টিকিও পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি পুলিশ । কারণ ! ওয়াকিবহাল মহলের মতে, শাহজাহানের দাপট এতটাই যে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস কেউ দেখাতে পারেনি । তাই, এক্ষেত্রেও ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আদৌও পুলিশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনও পদক্ষেপ করবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে ঘোর সংশয় ।
কিন্তু কে এই শেখ শাহজাহান ? যাঁর জন্য এত মানুষ সাতসকালে হুড়মুড়িয়ে চলে এল ইডি-কে সরাতে ? এমনিতে তিনি জেলা পরিষদের একজন কর্মাধ্যক্ষ । গত নির্বাচনেই জয়ী হয়ে এই পদ পেয়েছেন তিনি । এর আগে তিনি ছিলেন পৌরসভার চেয়ারম্যান । তবে বেশিদিনের ‘তৃণমূলী’ তিনি নন । এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, একসময় সিপিএমের সমর্থক ছিলেন । বাম আমলে তৎকালীন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেবের ঘনিষ্ঠও নাকি ছিলেন এই শেখ শাহজাহান । তখনও লাল ঝান্ডার দৌলতে তিনি তাঁর আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন ।
তৃণমূল জমানাতেও এলাকায় শাহজাহানের 'নবাবিয়ানা' কমেনি এতটুকু । 2011 সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই তিনি সিপিএমের সঙ্গ ছেড়ে রাতারাতি শাসক দলে ভিড়ে যান ৷ সূত্রের খবর, একসময় জেলার দাপুটে তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নজরে পড়ে যান শেখ শাহজাহান । তারপর থেকেই পার্টিতে রকেট গতিতে উত্থান হতে থাকে জ্যোতিপ্রিয়র আস্থাভাজন এই তৃণমূল নেতার । প্রথমে সন্দেশখালি-1 ব্লকের সভাপতি করা হয় তাঁকে । জেলা পরিষদের আসনে জেতার পর তাঁকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ কর্মাধ্যক্ষের মতো গুরুদায়িত্ব দেয় তৃণমূল ।
এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়, শেখ শাহজাহানের দাপট ! ইটভাটায় সামান্য কয়লা কারবার দিয়ে তিনি শুরু করেন তাঁর ব্যবসার হাতেখড়ি । আজ সেই তৃণমূল নেতাই কোটি কোটি টাকার মালিক । কী নেই তাঁর ! ইটভাটা থেকে শুরু করে একের পর এক ভেড়ি । এমনকি, ব্যক্তিগত লঞ্চও রয়েছে তৃণমূলের দাপুটে নেতা শেখ শাহজাহানের । যদিও এই এলাকার কেউই প্রকাশ্য়ে কোনও কথা বলতে নারাজ ৷
লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, শাহজাহানের কথা ছাড়া একটা পাতাও নড়ে না সন্দেশখালিতে । তিনিই হলেন সেখানকার বেতাজ বাদশা ! বকলমে এই তৃণমূল নেতাই নাকি আলাদা প্রশাসন চালান । তাঁর কথাই সন্দেশখালি, ন্যাজাট অঞ্চলে শেষ কথা । ফলে, ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ সত্ত্বেও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দু'বার ভাবে । এর আগে একবার তাঁর বাড়িতে অভিযান চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয় পুলিশকে । সুতরাং প্রশাসনের অজানা কিছুই নয় । কিন্তু শাহজাহানের তাতে কিছুই যায়-আসে না বলে অভিযোগ ।
স্থানীয়দের দাবি, সবাই সব জানার পরও অনায়াসে একের পর এক পদ পেয়ে গিয়েছেন তিনি । শোনা যায়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও অনেক সময় তোয়াক্কা করেন না শাহজাহান । কিন্তু ‘বাহুবলী’ নেতার কদর কমে না । ভোটব্যাংকও নাকি থাকে তাঁর হাতেই । একসময় হেরোইনের ব্যবসা করার অভিযোগও উঠেছিল শাহজাহানের বিরুদ্ধে । সেসব অবশ্য তিনি গায়েই মাখেন না ।
সত্যিই তিনি 'নবাব' । তা না হলে ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁদের কয়েকজনকে রক্তাক্ত করার সাহস দেখাতেন না বলছেন স্থানীয়রা ! যদিও ঘটনার পর থেকে খোঁজ মিলছে না সন্দেশখালির 'ত্রাস' শেখ শাহজাহানের । কোথায় রয়েছেন, তাও কেউ স্পষ্টভাবে বলতে পারছেন না !
আরও পড়ুন: