বনগাঁ, 22 এপ্রিল: রাজ্যে মতুয়াদের জনসংখ্যা 3 কোটি ৷ তার মধ্যে নথিভুক্ত ভোটার রয়েছেন দেড় কোটি ৷ এর সিংহভাগেরই বাস বনগাঁ এবং কৃষ্ণনগরে ৷ ষষ্ঠ দফা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর বিধানসভায় ভোট হল ৷ তবে এই বিধানসভা এলাকায় মতুয়া সম্প্রদায়ের বাস তেমন নেই ৷ যে বিধানসভাগুলিতে আছে সেগুলিতে নির্বাচন হয়েছে গত দফায় ৷ বৃহস্পতিবারের দফায় ভোট হল মতুয়া মহাসংঘের পীঠস্থানে ৷ বনগাঁর এই চার বিধানসভা- বনগাঁ উত্তর ও দক্ষিণ, গাইঘাটা এবং বাগদার ভোট ব্যাঙ্ক সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ থেকেছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৷
নতুয়ারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে বারবার ৷ বড়মা বীণাপানি দেবীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক তৃণমূল সুপ্রিমোকে এই ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে ৷ তবে গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের এই দুর্গে ফাটল ধরে শান্তনু ঠাকুরের বিজেপিতে যোগদান ৷ শুধু যোগদানই নয়, বিপুল ভোটে জয়লাভ করে তাঁর সাংসদ হওয়াও ৷
রাজ্যস্তরে বিজেপি দুর্গ মজবুত হতে থাকে উত্তরবঙ্গ দিয়ে ৷ কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এমনকি বাম দুর্গ নকশালবাড়িতে সংগঠন তৈরি শুরু করে 2011 সাল থেকেই ৷ 2016-এর বিধানসভা থেকে চা-বাগানগুলিতে ঢুকে পড়ে গেরুয়া শিবির ৷ দেখতে দেখতে দার্জিলিং থেকে মালদা পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলায় মোট বর্তমানে সাতজন সাংসদ এবং দশজন বিধায়ক রয়েছেন ৷ এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের মতো দক্ষিণবঙ্গেও বিস্তারের রাস্তা প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে মতুয়া গড়ের এই দেড় কোটি ভোটের হাওয়া নিজের পালে টানতে পারলে তা বিজেপির পক্ষে সুবিধাজনক হবে বলে অনেক বিশেষজ্ঞেরই ৷
গত পঞ্চম দফায় নদিয়ায় ভোট পড়েছে প্রায় 82.70 শতাংশ ৷ ষষ্ঠ দফা নির্বাচনে উত্তর 24 পরগনায় ভোট পড়েছে প্রায় 76.23 শতাংশ ৷ এই বিপুল সংখ্যক ভোট কোনদিকে পড়বে তার উপর অনেকাংশেই নির্ভর করছে রাজ্য দখলের লড়াই ৷
চলতি বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে মোদি-মমতা দু'পক্ষই তাই মতুয়া আবেগকে কাজে লাগানো চেষ্টা করেছেন ৷ অমিত শাহ বনগাঁর সভায় দাঁড়িয়ে নাগরিকত্ব বিল পর্যালোচনার কথা বলেছেন তো গাইঘাটায় জনসভায় মমতা ঘোষণা করেছেন গোবরডাঙা হাসপাতালকে জেনারেল হাসপাতাল বানিয়ে দেবেন বলে ৷
এই লড়াইয়ের মধ্যে দুই শিবিরের প্রত্যেক প্রার্থীরই দাবি মতুয়ারা তাঁদের দিকেই আছেন ৷ 90 শতাংশের বেশি মতুয়া ভোট নিয়ে জিতবেন তিনিই ৷ এদিন ভোট শেষে গাইঘাটার বিজেপি প্রার্থী তথা মতুয়া বাড়ির সদস্য সুব্রত ঠাকুর বলেন, "গাইঘাটা এবার পদ্মময় ৷ ব্যাপক সংখ্যায় জিতছে বিজেপিই ৷ বাকি তিন বিধানসভাতেও বিজেপিই জিতবে ৷ মতুয়া ভোটের 90 শতাংশ বিজেপি পাবে ৷" গাইঘাটার তৃণমূল প্রার্থী তথা মতুয়া ধর্ম প্রচারক নরোত্তম বিশ্বাস বলেন, "জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ৷ 100 শতাংশ ভোটই আমরা পাব ৷" তিনি বলেন, "গত বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট বিজেপির দিকে গিয়েছিল ৷ তবে গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা যে ভুল করেছিলেন এই নির্বাচনে আর তা করবে না ৷" এই বিধানসভার সিপিএম প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর বলেন, "গাইঘাটায় জোট ভালো ফল করবে ৷ বনগাঁ বাকি তিনটি বিধানসভাতেও জোট ভালো ফল করবে ৷" পাশাপাশি মতুয়া ভোট প্রসঙ্গে কপিলকৃষ্ণ বলেন, "মতুয়া ভোট কেউ একা পাবেন এমন নয় ৷ ভোট ভাগাভাগি হবে ৷"
মতুয়া ভোট টানতে মোদি বাংলাদেশ গিয়ে মতুয়াদের সর্বোচ্চ পীঠস্থান দর্শন করে আসেন ৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েও মমতা মতুয়াদের জন্য কিছু করেননি ৷ আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, মতুয়াদের নিয়ে বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করছে ৷ তাঁর কথায়, কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলেন মোদি-শাহ ৷ তাই তাঁরা মতুয়াদের যা কিছু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সবই মিথ্যা ৷ এখন এই তরজার শেষ কোথায় তা অবশ্য 2 তারিখের আগে বোঝার জো নেই ৷