দত্তপুকুর, 28 অগস্ট: ভেঙে পড়েছে কংক্রিটের পিলার, উড়ে গিয়েছে বাড়ির ছাদের এসবেস্টার ৷ দেওয়ালে ধরেছে ফাটল ৷ লণ্ডভণ্ড অবস্থা বিয়ের খাট, আলমারি-সহ শোকেসের ৷ ঘরের ভিতরে বিছানায় এসে পড়েছে ইট থেকে বাজির প্যাকেজিংয়ের প্ল্যাস্টিক ৷ কষ্ট করে লোকের থেকে ধারদেনা নিয়ে কংক্রিটের পাকা বাড়ি তৈরি করেছিলেন দত্তপুকুরের মোচপোলের বাসিন্দা তাজমিরা বিবি । 15 দিন আগেই এই বাড়িতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিয়ে গৃহপ্রবেশ করেছিলেন তিনি ৷ বাজি কারখানার বিস্ফোরণে শখের সেই বাড়িই আজ পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে ।
বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে বাড়ির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে ঘরের একেবারে ভিতরে ঢুকে গিয়েছে । যা দেখে যে কেউ শিউরে উঠবে । শুধু কী তাই! ভয়াবহ বিস্ফোরণের জেরে দোকান ঘরের শাটার পর্যন্ত বেঁকে গিয়েছে । এই অবস্থায় এখন শুধুই হাহাকার তাজমিরার পরিবারের । কীভাবে বাড়ির দেনা শোধ করবেন তা ভেবেই ঘুম উড়েছে তাঁদের । এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের কাছে আর্থিক সাহায্যের দাবি করছেন এই গৃহবধূ ।
তাজমিরা বলেন,"ঘটনার সময় স্বামী,শ্বশুর কাজে গিয়েছিল । বাড়িতে মেয়ে,শাশুড়ি এবং আমাকে ধরে তিনজনে ছিলাম । বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা । তারপর দেখলাম ঘরের সমস্ত কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে । যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েছে । তবে এখন কীভাবে দেনা শোধ করব সেটাই ভাবছি । প্রশাসনের কাছে অনুরোধ ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এসে দাঁড়াক । আর্থিক সহযোগিতা করলে উপকার হয় আমাদের ৷"
একই সুর শোনা গিয়েছে তাজমিরার শ্বশুর মফিজুদ্দিন আলির গলাতেও । তিনিও প্রশাসনের কাছে আর্থিক সহযোগিতার দাবি করেছেন ।
জানা গিয়েছে, প্রায় ন'বছর আগে মোচপোলের বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন আলির সঙ্গে বিয়ে হয় তাজমিরা বিবির । তাঁর বাপের বাড়ি ব্যারাকপুরের মোহনপুরে । স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি এবং 6 বছরের কন্যাকে নিয়ে তাজমিরার সংসার । পাঁচজনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা । স্বামী ও শ্বশুরের রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজের উপরই নির্ভরশীল গোটা পরিবার । আগে টালির কুঁড়েঘরে বসবাস করলেও দীর্ঘদিন ধরেই তাজমিরার সখ ছিল, নিজের একটি গোছানো পাকা বাড়ি থাকবে । সেই মতো তিনি একটু একটু করে টাকাও জমানো শুরু করেন । কিন্তু পাকা বাড়ি করার মতো সামর্থ্য না থাকায় তাঁকে ধারদেনা করতে হয় ।
আরও পড়ুন: দত্তপুকুরে বাজির গবেষণাগার! নেপথ্যে কি নাশকতার ছক? গ্রাউন্ড জিরোতে ইটিভি ভারত
বাড়ি করতে বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রায় 20 লক্ষ টাকা ধার নেন তিনি । সেই টাকাতেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে তাজমিরার সখের পাকা বাড়ি । বাড়ি তৈরির আগে প্রায় সাত মাস কাছের একটি বাঁশ বাগানে থাকতেন ৷ সেখানে ত্রিপল খাটিয়ে ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কোনওরকমে দিনগুজরান হত তাঁদের । এরপর পাকা বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে 15 দিন আগেই তাতে প্রবেশ করেন । বিস্ফোরণে সখের সেই বাড়িই আজ চেনা মুশকিল । এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ধ্বংসস্তূপ । সেখানেই হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তাজমিরা । যদি কিছু অবশিষ্ট থেকে যায় ৷