বারাসত, 28 অক্টোবর: রেশন বন্টন দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত বাকিবুর রহমানের সঙ্গে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে যখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি। ঠিক তখন বাকিবুর রহমানের উত্থানের পিছনে সিপিএমের হাত রয়েছে বলে দাবি করলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ উত্তর 24 পরগনা জেলাপরিষদের সভাধিপতি ও তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী । রেশন বন্টন দুর্নীতিকাণ্ডে শুক্রবারই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীসংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গেরেফতার করেছে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ৷ তাঁর গ্রেফতারির বিরুদ্ধে শনিবার বারাসত শহরে এক প্রতিবাদ সভা করে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব । সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই দাবি করেন জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা ৷
এদিন বারাসতের চাঁপাডালি মোড় থেকে প্রথমে শুরু হয় তৃণমূলের এই প্রতিবাদ মিছিল । সেই প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের একাধিক নেতা-কাউন্সিলরকে । সামিল হন জ্যোতিপ্রিয়'র বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতারাও । মিছিল বারাসত উড়ালপুল হয়ে শেষ হয় বারাসত শহরের প্রাণকেন্দ্র কলোনি মোড়ে । সেখানেই পরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয় তৃণমূলের তরফে । শুরুর দিকে না-থাকলেও পরে ওই প্রতিবাদ সভায় যোগ দেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ জেলাপরিষদের সভাধিপতি ও অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী । প্রতিবাদ সভা থেকে জ্যোতিপ্রিয়'র গ্রেফতারি নিয়ে সুর চড়ান তৃণমূল নেতারা ।
সেই প্রসঙ্গেই বলতে গিয়ে পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে বাকিবুর রহমানের উত্থানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী । তিনি বলেন, "বাকিবুর রহমান কে ? 2007 সাল থেকে ও(বাকিবুর)-র উত্থান ! সেই সময় তো তৃণমূলের সরকার ছিল না ! তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মন্ত্রীও ছিলেন না জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । যে সময়ে বাকিবুর রহমানের উত্থান, তখন রাজ্যের ক্ষমতায় সিপিএম । মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । বাম সরকারের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন একজন ! তাহলে তো তাঁকেও এই তদন্তের আওতায় আনতে হয় ৷" কেন বাম আমলের ওই খাদ্যমন্ত্রী তদন্তের বাইরে, তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলেছেন জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ এই বিধায়ক ।
আরও পড়ুন: মন্ত্রী হওয়ার পর গ্রামেও সম্পত্তি বেড়েছে জ্যোতিপ্রিয়র, অভিযোগ বিরোধীদের
ক্ষমতায় আসার পর এই বাকিবুর রহমানের সঙ্গেই তো তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ? এই প্রশ্নের উত্তরে বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন,"একজন ব্যবসায়ী ব্যবসার সুবাদে সরকারি ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকতেই পারেন । অনেক সময় তো জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার মধ্যে সিপিএমের কর্মচারী সংগঠনের লোকজনও থাকে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের তাড়িয়ে দেননি তো ! অনেকে সিপিএম করেন । অনেকে আবার ব্যবসাও করেন । করুক না । নিয়ম মেনে, আইন মেনে তারা ব্যবসা করলে অসুবিধা কোথায় ? ইডি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে বুঝতাম । কিন্তু ওদের উদ্দেশ্য তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করা । অন্যায়ভাবে, চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ৷"
এরপরই প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন,"ইডি যে এফআইআরের উপর ভিত্তি করে এই মামলার তদন্ত নেমেছে সেই মামলা তো 2018 সালে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের খাদ্য দফতরই করেছিল। 2018 থেকে 2023, এই পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মনে হয়নি তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে । 2024-র লোকসভা ভোটের আগে এটা তৃণমূলকে দমানোর প্রচেষ্টা ! ওরা আমাদের দলের সব নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ককে গারদে পুড়লেও একা 'দুর্গা' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি নামক 'অসুরকে বধ' করবেনই ৷"
আরও পড়ুন: গ্রেফতার হলেও জ্যোতিপ্রিয়র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নয়, জানাল তৃণমূল
এদিকে, নারায়ণ গোস্বামীর এই দাবি ঘিরে তুমুল আলোড়ন তৈরি হয়েছে জেলা রাজনীতির অন্দরে । সিপিএম এর কড়া সমালোচনা করেছে । উত্তরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, "ক্ষমতায় আসার পর ওর মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সভায় বারবার বলেছেন 34 বছরের বাম সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ্যে এনে জেলে পোড়া হবে সিপিএম নেতাদের । কোটি কোটি টাকা খরচ করে বহু কমিশনও গঠন করেছে তৃণমূল সরকার । একজন নেতা-মন্ত্রীকেও জেলে পুড়তে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় আসার 12 বছরের মধ্যেই একের পর এক মন্ত্রী, বিধায়ক গ্রেফতার হয়েছেন দুর্নীতির দায়ে । তৃণমূল সরকার তো পারেনি ! ইডি-সিবিআই পারলে সিপিএম নেতাদের গ্রেফতার করুক । আমরা কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে ভয় পাই না ৷"