বারাসত, 27 এপ্রিল: প্রতিশ্রুতির পরও 'আবাসন প্রকল্প'-এ সরকারি উদ্যোগে পাকা বাড়ি তৈরি না-হওয়ায় রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে দু'দিন আগেই ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন উত্তর 24 পরগনার বারাসতের ইন্দিরা কলোনির বস্তিবাসীরা। তাঁদের সেই 'ভোট বয়কট'-কে পাত্তাই দিলেন না স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ও অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার বরং এই নিয়ে তাচ্ছিল্যের সুর শোনা গিয়েছে শাসকদলের তারকা বিধায়কের গলাতে।
ঘটনার সূত্রপাত, ইন্দিরা কলোনিতে আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু না-হওয়ায়। অভিযোগ, বছর পার হয়ে গেলেও সেখানে বস্তিবাসীদের জন্য আবাসন গড়ে তুলতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ, পৌরসভার 26 নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই কলোনিতেই একসময় ঢাকঢোল পিটিয়ে 'শহর আবাসন জনপ্রকল্প'-এর ভিত্তিপ্রস্তরের সূচনা হয়েছিল 2022 সালের 6 জানুয়ারি। ফলে,পাকা ঘরের স্বপ্ন একপ্রকার অধরাই থেকে গিয়েছে কলোনির 260টি পরিবারের। যদিও শিল্যানাস অনুষ্ঠানে এসে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন, "দ্রুত এই আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে । পাকা বাড়ি মিলবে বস্তিবাসীদের ।" কিন্তু, এক বছর পরও বিধায়কের প্রতিশ্রুতি মতো পাকা ঘর না-মেলায় রীতিমতো ক্ষোভপ্রকাশ করে কলোনির বাসিন্দারা ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে শোরগোল ফেলে দেন। তারপরেই চিরঞ্জিতের গলায় এলাকাবাসীর অভিযোগ ঘিরে উঠে আসে তাচ্ছিল্যের সুর।
'ভোট বয়কট'-নিয়ে তৃণমূলের তারকা বিধায়ক বলেন, "ওঁরা কি স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড পেয়েছেন ? সরকারি সুযোগ সুবিধা কি মিলেছে ? যদি পেয়ে থাকে তাহলে তো সরকারের বিপরীতে যাবেই ! একটা ইস্যু নিয়ে তাঁরা যদি কেউ ভোট বয়কট করতে চায়, করবে তাহলে ! বাকি সুযোগ-সুবিধা যখন পাচ্ছেন । ভোট বয়কটের পথে গেলে যাবেন । কি আর করা যাবে !" তিনি আবাসন প্রকল্পের কাজ বন্ধ নিয়ে বলেন, "ওই জায়গাটি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। জমি জটিলতা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে জমি পৌরসভার হাতে হস্তান্তর হলেও সরকারি অনুমোদন এখনও মেলেনি। এরকমটা হতেই পারে । কোনও কোনও জায়গায় তো আটকে যেতেই পারে । কোনও কারণ তো থাকতেই পারে ।"
আরও পড়ুন: কয়েক দশকেও রাস্তা তৈরি না-হওয়ায় ভোট বয়কটের ডাক গোটা গ্রামের
অন্যদিকে, বিধায়কের এমন মন্তব্যের পরেই ক্ষেপে গিয়েছেন ইন্দিরা কলোনির বস্তিবাসীদের একাংশ। এই বিষয়ে বস্তিবাসী গনেশ হাজরা বলেন, "সরকারের কাজই হল গরিব সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়া । সেই জন্যই তো মানুষ ভোট দিয়ে সরকার গঠন করে । ওঁনার মতো একজন অভিনেতা-বিধায়কের মুখে একথা শোভা পায় না । উনি এখানকার মানুষের জন্য কিছুই করেননি । শুধু মুখে বড় বড় কথা। ওঁনাকে ভোটের সময়ই বুঝিয়ে দেব, আমরা কি করতে পারি, না পারি। সেই সময় তো ওঁনাকে হাতজোড় করে ভোট চাইতেই হবে। তখন ভোট বয়কট করলে কি হয় তা উনি ভালোভাবেই টের পাবেন। ওঁ নার কাজকর্মে আমরা মোটেই সন্তুষ্ট নই।"
একই সুর শোনা গিয়েছে মীনা বিবি নামে অপর এক বস্তিবাসীর গলাতেও। তাঁর কথায়, "উনি (চিরঞ্জিত) তো এখন এরকম কথা বলবেনই। বিধায়ক হিসেবে কখনও উনি এখানে এসে বস্তিবাসীর দুর্দশার কথা শোনেননি। তাই, ওঁনাকে আর ভোট দেব না বলে ঠিক করেছি। যিনি কাজ করবেন তাঁকেই আমরা ভোট দেব ।"