বারাসত, 10 অক্টোবর: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশই সার! পুকুরের একাংশ দখল করে কংক্রিটের বসতবাড়ি বানাচ্ছেন খোদ তৃণমূল নেতা। গজিয়ে উঠেছে একের পর এক দোকানঘরও। অভিযোগ ঘিরে সরগরম বারাসত (TMC Leaders Accused in Illegal Pond Filling) ।
ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় কাউন্সিলরেরও (TMC Councillor)। অভিযোগ, সবকিছু জেনেও তিনি কোনও পদক্ষেপ নেননি এই ঘটনায়। গোটা ঘটনায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। বিষয়টির সুরাহা চেয়ে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন তাঁরা। প্রয়োজনে আদালতে কড়া নাড়তেও প্রস্তুত হচ্ছেন স্থানীয়রা। এই ইস্যুতে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবিরও। তবে, যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পালটা বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ এনেছেন তৃণমূল কাউন্সিলর। ফলে অভিযোগ ও পালটা অভিযোগ ঘিরে এই নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে বারাসতের রাজনীতি।
আরও পড়ুন: কাউন্সিলর ও বাসিন্দাদের তৎপরতায় ব্যর্থ পুকুর ভরাটের অপচেষ্টা
জানা গিয়েছে, বারাসত পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণপুর এলাকায় প্রায় 0.12 একর এলাকা জুড়ে একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরটি মালিকানাধীন। পুকুরের অংশের কিছু জমি বর্তমান মালিকের থেকে কিনে সেখানে কংক্রিটের বসতবাড়ি তৈরি করছেন ওয়ার্ডেরই তৃণমূল যুব সভাপতি প্রদীপ পাল। এছাড়া পুকুরের অংশের মধ্যে রেললাইনের ধার বরাবর একের পর এক বিভিন্ন ধরনের দোকান গজিয়ে উঠেছে সেখানে। তাও আবার দখল করে। এমনই অভিযোগ করছেন এলাকার বাসিন্দারা।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে পুকুর বেদখল করে কীভাবে বসতবাড়ি থেকে দোকানঘর সেখানে গজিয়ে উঠল! কেনই বা সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বেআইনি দখলদার উৎখাত করতে পৌরসভা কিংবা প্রশাসন সক্রিয় হল না? তাহলে কি শাসকদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মদত থাকায় হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে প্রশাসন? এমনই সব প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে স্থানীয়দের মনে। এ নিয়ে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সামনেও তাঁরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সরব হয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলরের ভূমিকা নিয়েও। যা ঘিরেই চাপানউতোর শুরু হয়েছে জেলার সদর বারাসতে।
আরও পড়ুন: শহরের আবর্জনা ফেলে বিল ভরাটের অভিযোগ ! অস্বীকার পৌরসভার
এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, "পুকুর দখল করে তৃণমূলের কিছু লোকজন বসতবাড়ি, দোকানঘর বানাচ্ছে। জানি না প্রশাসন কিংবা পৌরসভা কীভাবে এর অনুমতি দিচ্ছে ৷ স্থানীয় কাউন্সিলরের ভূমিকা সন্দেহের ঊর্ধ্বে ৷ তিনি পিছন থেকে মদত না দিলে এই বেআইনি কাজ সম্ভব নয় বলেই আমাদের ধারণা। আমরা চাই,পুকুরকে তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক। নইলে আইনি যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা আমরা নেব।"একই সুর শোনা গিয়েছে প্রদীপ কুমার রায় নামে অপর এক বাসিন্দার গলাতেও।
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজায় জড়িয়েছে শাসক ও গেরুয়া শিবির ৷ নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খণ্ডন করে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুমিত সাহা বলেন, "কিছু লোক রয়েছে যাদের কাজ শুধু মিথ্যাচার করে রাজনীতি করা। আমি নিজেও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। দেখেছি পুকুরের চরিত্র কোনও বদল করা হয়নি। বিএলআরও-র রেকর্ডেও সেটি শালি পুকুর হিসেবে দেখানো রয়েছে। আর যিনি বাড়ি তৈরি করছেন তাঁর আগেই সেখানে দরমার বসতবাড়ি ছিল। সেখানেই তিনি পাকা বাড়ি তৈরি করছেন। তাঁর কাগজপত্রও রয়েছে। তারপরও যদি কোনও বেআইনি কাজ হয়ে থাকে, সেই বিষয়টি প্রশাসন খতিয়ে দেখে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেবে।"
আরও পড়ুন: চলছে পুকুর ভরাট ! কাঠগড়ায় শাসকদলের যুব সভাপতি, উদাসীন প্রশাসন
বিজেপি নেতা (BJP Leader) প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই। এই ট্রাডিশন রাজ্যের সর্বত্র চলছে। এর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো লাইসেন্স দিয়েছেন এই সমস্ত বেআইনি কাজের। আমরা বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই আন্দোলনে নামব।"