বনগাঁ, 24 অগস্ট : অবশেষে বাড়ি ফিরলেন ৷ পেটের তাগিদে কাজে গিয়ে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেন ওঁরা ৷ কেউ আড়াই বছর তো কেউ আবার ছয় মাস আগে সেখানে ক্যাটারিংয়ের কাজে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন । কিন্তু তালিবানদের দখলের পর বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তাঁরা ৷
সোমবার গভীর রাতে আফগানিস্তান থেকে বাড়ি ফিরলেন উত্তর 24 পরগনার গোপালনগর থানা এলাকার তিন যুবক ৷ এর মধ্যে রয়েছেন রামশংকরপুর গ্রামের বিদ্যুৎ বিশ্বাস, পলাশ সরকার ও রঘুনাথপুরের প্রবীর সরকার । তালিবানদের কাবুল দখলের পর সেখানকার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা । বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছিলেন ওঁরাও । প্রতিদিনের বিমানের জন্য প্রতীক্ষার পর অবশেষে সোমবার কাবুল থেকে আমেরিকার কার্গোয় কাতার হয়ে দেশে ফেরেন তাঁরা ।
বাড়ি ফেরার পর তাঁরা জানান, ইকোলো ইন্টারন্যাশনাল ক্যাটারিং কোম্পানির হয়ে কাবুল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে আমেরিকান সেনার বেস ক্যাম্পে ক্যাটারিংয়ের কাজ করতেন । কাজের মধ্যে হঠাৎ জানতে পারেন তালিবানদের দখলে চলে গিয়েছে কাবুল ৷ যে ক্যাম্পে তাঁরা কাজ করতেন, সেখানে আমেরিকান সেনারা কড়া পাহারা ছিল । তালিবানের কাবুল দখলের পর তাঁদের নিরাপত্তা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয় ৷ ফলে তাঁদের তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি । কিন্তু তালিবানদের রাজধানী দখলের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এয়ারপোর্টে স্থানীয় বাসিন্দাদের হুড়োহুড়ি পড়ে যায় । দেশ ছাড়ার জন্য আফগানিস্তানীরা এয়ারপোর্টে পৌঁছে যান ৷
বিদ্যুৎ বলেন, "এই ঘটনা দেখে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি । বাড়ি ফেরার জন্য ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি । বাইরে গুলি চলার আওয়াজ পেতাম ৷ তালিবানদের অত্যাচারের খবর কানে আসত ৷ এই পরিস্থিতিতে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিই ৷ কিন্তু বাড়ি ফেরার কথা শুনে কোম্পানি থেকে মোটা অঙ্কের মাইনের অফার দেয় ৷ কিন্তু সব ভুলে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম ৷ এই পরিস্থিতিতে আমেরিকান সেনা আমাদের প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছে, সাহস জুগিয়েছে ।"
তিনি আরও জানান, বাড়ি ফেরাও সহজ ছিল না ৷ প্রথম দিন থেকে ভারতীয় দূতাবাসে বারবার যোগাযোগ করে কোনও সাহায্য পাওয়া যাচ্ছিল না । তিন দিন আগে কাজ বন্ধ করে কাবুল এয়ারপোর্টে ভারতীয় বিমানের জন্য অপেক্ষা করতে হয় । কিন্তু তাতেও বিমান মিলছিল না । পরবর্তীতে আমেরিকান আর্মির বিশেষ বিমানে কাতারের শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছন ৷ দুদিন থাকার পর সেখান থেকে অবশেষে ভারতীয় বিমানে দিল্লি ফেরেন । দিল্লি থেকে সোমবার গভীর রাতে নিজেদের বাড়িতে আসেন তাঁরা ।
ঘরের ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশি তিন পরিবার ৷ তবে প্রাণে বেঁচে ফিরলেও আগামী দিনে কীভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন : Afghanistan : আফগানিস্তানে আটকে বাড়ির ছেলেরা, উৎকণ্ঠায় পাঁচ পরিবার