বারাসত, 13এপ্রিল : কোরোনা সংক্রমণ রুখতে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য সরকার । এবার থেকে বাইরে বেরলেই নাক, মুখ ঢাকতে হবে । তবে, এক্ষেত্রে মাস্ক ছাড়াও ওড়না, রুমাল, গামছা ও কাপড়ের টুকরো দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকা যাবে । এই মর্মে গতকালই নির্দেশিকা জারি হয়েছে নবান্নের তরফে । নির্দেশিকা না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। অথচ,সেই নির্দেশিকা ও হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না করেই জেলা সদর বারাসতে দেখা গেল অনেক মানুষকে অকারণে বাইরে বেরতে। অনেকে আবার মাস্ক ঝুলিয়ে নাক ও মুখ না ঢেকেই হাটে চলে এসেছেন সবজির কেনাবেচা করতে। ভাবখানা যেন,সরকারের নির্দেশের থোড়াই কেয়ার ! কী হবে সরকারের নির্দেশিকা ও নিয়ম মেনে ! অনিয়মই যেন একপ্রকার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের কাছে । কিন্তু সরকারের নির্দেশিকা অমান্য করলে তো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা পুলিশের ! তাঁরা কি করছে? কেনই বা তাঁরা নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না ? এসব প্রশ্নই এখন বেশি করে ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক মহলের একাংশদের । যদিও এবিষয়ে পুলিশ কর্মীরা সব সময় সতর্ক রয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন ।
লকডাউন চললেও দেশে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে । লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা-ও । তাই কোরোনা সংক্রমণ রুখতে আগেই রাজ্যে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি ঘোষিত হয়েছিল । এবার ওড়িশা, গুজরাতের পথে হেঁটে পশ্চিমবঙ্গেও মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । কিন্তু তারপরও কি মানুষের হুঁশ ফিরেছে? সচেতনতা কি ফিরেছে মানুষের মধ্যে? অন্তত জেলা সদর বারাসতের ছবি দেখে বোঝাই দায় রাজ্যে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । পুরনো অভ্যাসমতো মাস্ক ব্যবহার না করেই বাইরে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকে । অনেকে আবার মাস্ক দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকার বদলে তা সেই মাস্ক কানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছেন । এমনই দৃশ্য ধরা পড়েছে বারাসতের 34 নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন ময়না হাটের কাছে । লকডাউন উপেক্ষা করেই আজ সকালে সাপ্তাহিক হাট বসে ময়নায় । দূর-দূরান্ত থেকে চাষিরা বিভিন্ন সবজি নিয়ে বিক্রি করতে এসেছিলেন সেখানে । অনেক ক্রেতা বিক্রেতার মুখেই মাস্ক ছিলনা বলে অভিযোগ । অনেকের মুখে মাস্ক থাকলেও তা দিয়ে ঢাকা হয়নি নাক ও মুখ । অথচ এমন তো হওয়ার কথা নয়৷ রাজ্য সরকারের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে নাক ও মুখ না ঢেকে বাইরে বেরনো যাবেনা ৷ তারপরও কীভাবে তাঁরা মাস্ক ব্যবহার করছেন না ? এ প্রশ্নই এখন মাথাচাড়া দিচ্ছে আরও বেশি করে ।
এদিকে খবর পেয়ে বারাসত ও দত্তপুকুর থানার পুলিশ পৌঁছে ঘণ্টাদুয়েক পর ওই হাট বন্ধ করে দেয় । পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার না করে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদেরক সতর্ক করে বাড়ির দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । কিন্তু এত দেরিতে কেন? এই প্রশ্ন যখন উঠতে শুরু করেছে, তখন মাস্ক ব্যবহার না করে বাইরে বেরনো বিপজ্জনক বলেই মনে করছেন চিকিৎসক মহল । এর থেকে সংক্রমণের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না ।
অন্যদিকে বারাসতের যশোর রোডের ধারে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে প্রধানমন্ত্রীর জনধন যোজনা প্রকল্পের টাকা তুলতে এসে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার অভিযোগ উঠেছে গ্রাহকদের বিরুদ্ধে । একে অপরের গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই দেখা গেল টাকা তোলার লাইনে দাঁড়াতে । কয়েকজন আবার মাস্ক কিংবা কাপড়, ওড়না দিয়ে নাক, মুখ না ঢেকেই চলে এসেছেন টাকা তুলতে । যা দেখে আঁতকে উঠেছেন অনেকেই ।
অপরদিকে বিষয়টি নিয়ে বারাসত থানার পুলিশ জানিয়েছে, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা কার্যকরী করতে সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে পুলিশ কর্মীরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে । ময়নার হাটেও পুলিশ যথাসময়ে গিয়ে আইন অমান্যকারীদের সতর্ক করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে । এবিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে । সেই সঙ্গে মানুষকে সরকারের নির্দেশিকা মানার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ।’’